Advertisement
E-Paper

গঙ্গার চরে পাখির ঝাঁক, জালে ইলিশও  

একই হাসি কালিয়াচক-৩ ব্লকের পার অনুপনগরের মৎস্যজীবী আদিত্য বিশ্বাসের। গঙ্গায় পাঁচ বার ভিটে হারানো আদিত্য বলছেন, ‘‘লকডাউনে যত মাছ জালে উঠছে, গত পাঁচ বছরে তার সিকি ভাগও পেতাম না। এ বারে তো জালে ইলিশও উঠতে শুরু করেছে।’’

জয়ন্ত সেন 

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২০ ০৩:২৩
অপরূপ: গোধূলিতে ভরা গঙ্গা। মালদহের পারলালপুরে শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

অপরূপ: গোধূলিতে ভরা গঙ্গা। মালদহের পারলালপুরে শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

মাত্র বছর দশের আগের কথা। ডিঙি নিয়ে গঙ্গার মাঝে জেগে ওঠা চরে গরমকালে যখন চাষবাস করতে গিয়ে অনেকেই দেখা পেতেন চড়ুই, বাবুই, ঘুঘু, ডাহুকের। স্বচ্ছ জলে জাল ফেললে উঠত অজস্র মাছ। এ বার লকডাউন যেন ফিরিয়ে দিয়েছে সেই সময়টাকেই। সঙ্গে উপরি রুপোলি শস্য। মৎস্যজীবীরা বলছেন, ‘‘যে ইলিশের দেখা পেতে জুলাই পার হয়ে যেত, এ বারে জুনের গোড়াতেই জালে পড়েছে তার ঝাঁক।’’ বাংলাদেশ ঘেঁষা পারলালপুরে।

গত তিন মাসে এই ভাবেই বদলে গিয়েছে গঙ্গা।

মালদহের বাঙ্গিটোলা পঞ্চায়েতের গঙ্গা তীরবর্তী গ্রাম মহাদেবপুরের চাষি হরিশ মণ্ডল। তিনি বলছিলেন এই বদলের কথা। বলছিলেন, ‘‘দশ বছরে নদীদূষণ এতটাই বেড়েছে যে, গঙ্গার স্বচ্ছ জল ধীরে ধীরে কালো হতে শুরু করেছিল।’’ বছর পঞ্চাশের হরিশের দাবি, গত তিন মাসের লকডাউনে যেন আগের ছবি ফিরে এসেছে। গঙ্গার জল ক্রমে স্বচ্ছ হচ্ছে। আগের মতো টলটলে। গত দু’মাস ধরে গঙ্গার চরে ফের শোনা যাচ্ছে ঘুঘু, ডাহুকের ডাক।

হরিশের মতো একই কথা বললেন তরিকুল ইসলামও। গঙ্গা পাড়ের সুখ-দুঃখ নিয়ে থাকেন তরিকুল। তিনি বলেন, ‘‘বছর ২৫ আগে আমাদের বাড়ি ছিল পুরনো পঞ্চানন্দপুরের ছাতিয়ানতলা গ্রামে। কিন্তু গঙ্গার গ্রাসে সেই গ্রাম এখন নদীতে। এত কিছুর পরেও গঙ্গাকে ছেড়ে যাইনি। এই নদীকে আমি খুব ভাল চিনি। তাই হলফ করে বলছি, লকডাউন গঙ্গাকে অনেকটা দূষণমুক্ত করেছে। এখন পাড়ে দাঁড়ালে দেখতে পাবেন আয়নার মত স্বচ্ছ।’’

মাঝিয়াসরান গ্রামের মৎস্যজীবী কৃষ্ণ কর্মকারের মুখে এখন চওড়া হাসি। একসময় গঙ্গায় মাছ ধরেই সংসার চলত তাঁর। কিন্তু দূষণে মাছ কমতে পেশা বদলাতে হয়। সংসার চালাতে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে ফের বাড়ি এসেছেন। নতুন উদ্যমে আবার শুরু করেছেন গঙ্গার বুকে মাছ ধরা। কৃষ্ণের কথায়, ‘‘গঙ্গায় মাছ তো অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। পিউলি, ফ্যাসা, কর্তি, বাম, রিঠা, আড়, ট্যাংরা, বাছা, চিংড়ি, রুই, বোয়াল প্রচুর মিলছে।’’ তাই আর মুম্বই ফিরবেন কিনা, ঠিক করতে পারছেন না কৃষ্ণ।

একই হাসি কালিয়াচক-৩ ব্লকের পার অনুপনগরের মৎস্যজীবী আদিত্য বিশ্বাসের। গঙ্গায় পাঁচ বার ভিটে হারানো আদিত্য বলছেন, ‘‘লকডাউনে যত মাছ জালে উঠছে, গত পাঁচ বছরে তার সিকি ভাগও পেতাম না। এ বারে তো জালে ইলিশও উঠতে শুরু করেছে।’’

Fish Ganges
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy