Advertisement
E-Paper

বৃদ্ধাকে মার, অভিযুক্ত মেয়ে-জামাই

মেয়ে-জামাইয়ের কাছে প্রতারিত হয়ে শেষ সম্বল সাড়ে ন’লক্ষ টাকা খুইয়েছিলেন বৃদ্ধা। সে টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে এ বার শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২১
রংমালা সরকার

রংমালা সরকার

মেয়ে-জামাইয়ের কাছে প্রতারিত হয়ে শেষ সম্বল সাড়ে ন’লক্ষ টাকা খুইয়েছিলেন বৃদ্ধা। সে টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে এ বার শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হলেন তিনি। শুক্রবার বছর পঁচাত্তরের ওই বৃদ্ধা রংমালা সরকারকে মারধর করে তাঁর গায়ে গরম জল ঢেলে দেওয়ার ওই অভিযোগ উঠল জলপাইগুড়ি শহরের সুভাষ উন্নয়ন পল্লি এলাকায়৷ তাঁকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ যদিও অভিযুক্ত সুচিত্রা ও হরেরাম মৈত্রের দাবি, তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে।

জলপাইগুড়ি শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পিলখানা কলোনির বাসিন্দা রংমালাদেবী। তাঁর পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, তাঁর নামে অনেক জমি ছিল৷ চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে সবাই বিবাহিত। মেয়েদের বিয়ে-সহ নানা কারণে তার বেশ খানিকটা আগেই বিক্রি করে দেন৷ বছর খানেক আগে বোয়ালমারি এলাকার শেষ সাড়ে চার বিঘা জমি বিক্রি করেন৷ সেখান থেকে পাওয়া সাড়ে ন’লক্ষ টাকা তিনি ব্যাঙ্কে জমা রেখেছিলেন৷ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বৃদ্ধা অভিযোগ করেন, ‘‘ছোট ছেলে সাধনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হরেরাম আমার থেকে তিন লক্ষ টাকা নেয়৷ ব্যাঙ্কের চেয়ে পোস্ট অফিসে সুদ বেশি মিলবে জানিয়ে মাস চারেক আগে সুচিত্রা-হরেরাম আমার থেকে টিপ সই নিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে বাকি সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা তুলে নেয়৷ কিন্তু সেই টাকা আর পোস্ট অফিসে জমা দেয়নি তারা৷’’

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের গাড়ির চালক হরেরাম, স্ত্রী সুচিত্রার সঙ্গে সুভাষ উন্নয়ন পল্লিতে থাকে। তাদের দাবি, ‘‘মাকে আমার ভাইরাই মারধর করত টাকার জন্য। আমরা প্রতিবাদ করতাম। তাই মাকে দিয়ে জোর করে মিথ্যে অভিযোগ করিয়ে আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে। শুক্রবারও আমাদের বাড়িতে এসে ওরা মাকে মারধর করে। প্রতিবাদ করাতে আমাদেরও মেরেছে।’’

বৃদ্ধার বড় ছেলে ভজন সরকার বলেন, ‘‘মায়ের পাশ বইটা অনেকদিন ধরেই দিদি ও জামাইবাবু রেখে দিয়েছিল৷ সন্দেহ হওয়ায় মাকে তা আনতে বলি৷ কিন্তু ওরা দিতে চায় না৷ ব্যাঙ্কে গিয়ে জানতে পারি ওরা মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিয়েছে৷ কেন এমনটা করল জিজ্ঞাসা করাতে ওরা পুরোটাই অস্বীকার করে৷ সর্বস্বান্ত হয়ে মা বারবার ওদের কাছে টাকার জন্য ছুটে যান৷ কিন্তু তার জন্য মাকে যে ওরা এ ভাবে মেরে গায়ে গরম জল ঢেলে দেবে ভাবতেই পারছি না৷’’ বৃদ্ধার অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবারও টাকা চাইতে একবার মেয়ের বাড়িতে যান তিনি৷ তখন তাঁকে শুক্রবার যেতে বলে তারা৷ “সে দিন মেয়ের বাড়িতে যেতেই মেয়ে-জামাই দু’জনে মিলে মারধর শুরু করে৷ আচমকা আমার গায়ে গরম জল ঢেলে দেয়৷ মাথাতেও ভারি কিছু একটা জিনিস দিয়ে আঘাত করে চুলের মুঠি ধরে আমাকে মাটিতে ফেলে দেন”, বলেন তিনি।

সুভাষ উন্নয়ন পল্লির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বৃদ্ধা মাঝে মধ্যেই মেয়ের কাছে টাকা চাইতে আসতেন দেখেছি৷ কিন্তু শুক্রবার ওই অত্যাচারের পর রাস্তায় রীতিমতো ছটফট করছিলেন তিনি৷’’ ভজনবাবু জানান, তাঁর মায়ের মাথায় তিনটি সেলাই পড়েছে৷ ঘটনার পরই জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় দিদি ও জামাইবাবুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি৷ কিন্তু অভিযোগ, থানা থেকে তাঁকে রিসিভ কপি দেওয়া হয়নি৷ ভজনবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ বলে, তদন্তের পর রিসিভ কপি দেওয়া হবে৷’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভোলানাথ পান্ডে বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে৷ যিনি অভিযোগ করছেন তাঁর রিসিভ কপি পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷ কেন এমনটা হল দেখছি৷’’

Rangmala Sarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy