এবিপিসি মাঠ সংলগ্ন জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়েছে হাতি দু’টি। নিজস্ব চিত্র।
ভোররাত তখন, প্রায় ৩টে হবে। হাসপাতালের মেন গেটে আমি ও আমার সহকর্মী মনোকান্তি রায় ডিউটি করছিলাম। মনোকান্তি ঘুমোচ্ছিল। হঠাৎই আমার চোখে পড়ল, দু’টো বড় বড় হাতি দৌড়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়ছে। মনোকান্তিকে ধাক্কা দিয়ে সে-কথা বলতেই ও ঘুম-চোখে বলল, ‘‘ধুর! তুই স্বপ্ন দেখেছিস! হাতি কোথা থেকে আসবে!’’ কিছুতেই ওকে বোঝাতে পারছিলাম না, এমন ঘটনা তো এর আগে কোনওদিনই ঘটেনি জলপাইগুড়িতে!
মুহূর্তের মধ্যেই হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়রাও দেখতে পেয়ে ‘হাতি ঢুকে পড়েছে’ বলে চিৎকার করতে শুরু করেন। একজন রোগী ওয়ার্ডের বারান্দা থেকে দু’টি হাতিকে ছুটে যেতে দেখেছেন বলে ওয়ার্ড বয়রা জানান।
দেখেশুনে ততক্ষণে অবশ্য মনোকান্তির ঘুম চটকে গিয়েছে। আমি গেট ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসি। থানায় খবর দেওয়া জরুরি। কিন্তু আমার কাছে তখন মোবাইল ফোনটা নেই। রাস্তা দিয়ে একটা টোটো যাচ্ছিল। সেটা থামিয়ে যাত্রীদের কাছে কোতোয়ালি থানায় ফোন করার অনুরোধ করি। ওই যাত্রীই থানায় খবর দেন। হাসপাতাল থেকেও সহকারী সুপারের কাছে ফোনে হাতি ঢোকার খবর জানানো হয়। থানা থেকেই বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পুলিশ এসে পৌঁছয় হাসপাতালে। কিন্তু হাতি দু’টি ততক্ষণে হাসপাতালের পিছনের লোহার বেড়ার কিছুটা ভেঙে করলা নদীর ধার দিয়ে ইন্দিরা গাঁধী কলোনির দিকে চলে যায়।
এমন প্রাণের ভয় এর আগে কখনও পাইনি। কারণ, এই দৃশ্য এর আগে তো কখনও দেখিনি! সার্কাসের হাতি দেখেছি। জঙ্গলের হাতি এক্কেবারে চোখের সামনে কয়েক হাত দূরে এই প্রথম দেখলাম। খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মীরা আসায় কিছুটা সাহস পাই। ওঁদের সঙ্গে হাতির খোঁজ করতেও হাসপাতালের আশপাশে ঘুরলাম খানিকক্ষণ। কিন্তু আর দেখা গেল না ওদের। পরে শুনেছি, নেতাজিপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার রাস্তা দিয়ে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের দিকে চলে গিয়েছে হাতি দু’টি। ওখান থেকে বেরিয়ে কলেজাপাড়া হয়ে পবিত্রপাড়ার করলা নদীর ধারের জঙ্গলে লুকিয়ে আছে বলে শুনছি। সকালে ডিউটি শেষ করে মনোকান্তিকে নিয়ে ওই এলাকায় গিয়ে হাতি দেখে বাড়ি ফিরেছি। তবে এখন থেকে রাতের ডিউটিতে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে আমাদের।
(লেখক নিরাপত্তারক্ষী, বিশ্ববাংলা ক্রীড়াঙ্গন কোভিড হাসপাতাল, জলপাইগুড়ি)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy