E-Paper

শয্যা পেতে মেডিক্যালে ‘ভরসা’ দালাল

জটিল পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের এইচসিসিইউ’তে রাখা হয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সেখানে শয্যার অভাব এতটাই কম যে তা নিয়ে লাইন লেগে থাকে।

সৌমিত্র কুন্ডু

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ ০৮:৫৯
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।

মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসায় ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে’ শয্যা পেতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে দালালচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ১৪ শয্যার হাইব্রিড সিসিইউ রয়েছে। অভিযোগ, সেখানে শয্যার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য মোটা টাকা দাবি করা হচ্ছে। টাকা দিলে শয্যার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। ওই খবর পেয়েছেন মেডিক্যাল কলেজেরই প্রাক্তন পড়ুয়াদের একাংশ, যাঁরা বর্তমানে চিকিৎসক হিসাবে কাজ করছেন। তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোগী নিয়ে এসে এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীদের একাংশ।

হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ জানাননি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা নেওয়া মুশকিল।’’ রোগীর পরিবারের তরফে অবশ্য অভিযোগ করতে চান না কেউ। অভিযোগ করলে সমস্যা পড়তে হতে পারে এই আশঙ্কায়। মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের চিকিৎসক শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘আমাদের কাছে নানা জায়গায় থেকে ওই অভিযোগ এসেছে। গুরুতর বিষয়। আমরা শীঘ্রই সুপারের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে জানাব। হাসপাতালের একাংশ জড়িত বলেই সন্দেহ। সমস্যা না মিটলে প্রয়োজনে আন্দোলনে নামব।’’

জটিল পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের এইচসিসিইউ’তে রাখা হয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সেখানে শয্যার অভাব এতটাই কম যে তা নিয়ে লাইন লেগে থাকে। অনেকে নার্সিংহোমে কিছুটা চিকিৎসা করিয়ে সেখানে সিসিইউ’তে খরচ সামলাতে না পেরে রোগীদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে সরকারি ব্যবস্থায় নিখরচে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু সেখানে শয্যা পাওয়াই মুশকিল। তার উপরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের একাংশের শারীরিক পরিস্থিতি অবনতি হলে তাঁদের আগে জায়গা দিতে হয়। তা ছাড়া, নেতা-মন্ত্রীদের মাধ্যমেও অনেকের সুপারিশ আসে হাইব্রিড সিসিইউতে শয্যার ব্যবস্থা করতে। হাসপাতালের অতিরিক্ত সুপার নন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রতি দিনই অন্তত ছয়টি আবেদন জমা পড়ে হাইব্রিড সিসিইউয়ে রোগী রাখার জন্য। এই সুযোগই দালালেরা কাজে লাগাতে তৎপর বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

হাইব্রিড সিসিইউ’র দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক বিমান নস্কর বলেন, ‘‘১০ বছর আগে পুরনো ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট চলার সময় রোগী ভর্তির জন্য এ ভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগে এক জন ধরা পড়েছিল। কিন্তু এখন এ ধরণের কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তবে আমরা সব সময়ই সতর্ক রয়েছি।’’

এখনও যে অনেকের চোখের আড়ালে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, তার অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেকের। কয়েক মাস আগে আত্মীয়কে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে চিকিৎসা করাতে এনে ওই অভিজ্ঞতার মুখে পড়েন অর্পিতা রায়। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে হাইব্রিড সিসিইউয়ে আমার ননদের পরিবারের এক জনকে ভর্তি করাতে আনা হয়েছিল। তখন সাত হাজার টাকা চেয়েছিল। যদিও আমরা তা দিইনি।’’ অভিযোগ জানাতে গেলে নানা সমস্যা, রোগী নিয়ে সে সব করার সময় মেলে না বলে অনেকেই সেই পথে যান না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Siliguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy