E-Paper

নকলে বাধা পেয়ে ভাঙচুর পরীক্ষা কেন্দ্রে

জলপাইগুড়ি পাঁচিরাম নাহাটা স্কুলে এ বার বেলাকোবা এবং মান্তাদরি এলাকার দু’টি স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছে। পাঁচিরাম নাহাটা স্কুলে সিসি ক্যামেরা রয়েছে।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪১
ক্লাসরুমের পাখা বেঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ক্লাসরুমের পাখা বেঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি: সন্দীপ পাল।

মাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষা চলাকালীনই নকলে বাধা দেওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে ভাঙচুর চালাল এক দল পড়ুয়া, অভিযোগ জলপাইগুড়িতে। ভাঙা হয়েছে কেন্দ্রের একাধিক দরজা, জানালা, দুমড়েমুচড়ে দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক পাখাও। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাঁচিরাম নাহাটা হাই স্কুলে সোমবার এই তাণ্ডব চলেছে বলে অভিযোগ। স্কুলের শিক্ষকদের একাংশের দাবি, এ দিন পরীক্ষা শুরুর আগেই কিছু পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে উত্তর লেখা কিছু কাগজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এর পরেই কয়েকজন পরীক্ষার্থী ভাঙচুর শুরু করে বলে অভিযোগ। স্কুলের দরজা জানালার কাঠের পাল্লা টেনে খুলে ফেলা হয় বলে দাবি। যদিও ভাঙচুর শুরু হতেই পুলিশ বা পর্ষদকে কেন জানানো হয়নি সে প্রশ্ন উঠেছে।

পরীক্ষার পরে স্কুলের একাধিক ঘর থেকে অজস্র নকলের কাগজ উদ্ধার হয়। ততক্ষণে খবর পৌঁছে গিয়েছে পর্ষদে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন উত্তরবঙ্গেই ছিলেন। তিনি খবর পেয়েই পরিদর্শকদের ওই স্কুলে পাঠান। মাধ্যমিকের পরিদর্শকেরা যখন স্কুলে পৌঁছেছেন তখন বেশ কিছু কাগজ তাঁরা পুড়তে দেখেছেন বলে দাবি। অভিযোগ, ইতিহাসের উত্তর লেখা কাগজ তখন পোড়ানো হচ্ছিল। পরে পর্ষদ সভাপতি বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ির ওই স্কুলের ভাঙচুর নিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’

জলপাইগুড়ি জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা সুগত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পাঁচিরাম নাহাটা স্কুলে কী ভাবে ভাঙচুর হয়েছে তা আমরা দেখেছি। পর্ষদের সভাপতিকেও পুরোটা জানানো হয়েছে। স্কুল থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। স্কুল যদি অভিযুক্ত পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে দেয়, তা হলে পর্ষদের নিয়ম মেনে পুরো স্কুলের ফলাফল ঘোষণাই স্থগিত করা হবে।”

জলপাইগুড়ি পাঁচিরাম নাহাটা স্কুলে এ বার বেলাকোবা এবং মান্তাদরি এলাকার দু’টি স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছে। পাঁচিরাম নাহাটা স্কুলে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তাতে ভাঙচুরের ছবিও ধরা পড়েবে বলে দাবি শিক্ষক এবং কর্মীদের একাংশের। যদিও স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীর সেনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি, মোবাইলে এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপে বার্তারও উত্তর দেননি। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি কৃষ্ণ দাস বলেন, “স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুরো বিষয়টি পর্ষদকে জানিয়েছেন। যে ভাবে স্কুলে তাণ্ডব চালানো হল, তা দুর্ভাগ্যজনক।”

এ দিকে, জলপাইগুড়িতে গত শনিবার আমগুড়ি হাই স্কুলে এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল উদ্ধার এবং সে পরীক্ষার্থীর সব পরীক্ষা বাতিলের জেরে উদ্বেগে জেলার শিক্ষক মহল। বিশেষ করে, যে ভাবে কিছু পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে নকলের কাগজ উদ্ধার হচ্ছে তাতে চিন্তা বাড়ছে শিক্ষকদের মধ্যে। পরীক্ষার্থীদের জ্যাকেটের পকেটের ভেতর থেকে বেরোচ্ছে নকল লেখা কাগজের টুকরো, থাকতে পারে মোবাইলও, আশঙ্কা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এ দিনও জেলার বিভিন্ন স্কুলে উদ্ধার হয়েছে ভুরি ভুরি নকলের কাগজ।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, শীতের সকালে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে আসছে গায়ে জ্যাকেট চাপিয়ে। পর্ষদের নির্দেশ, কোনও পরীক্ষার্থীর গায়ে হাত দিয়ে তল্লাশি করা যাবে না। শিক্ষকদের প্রশ্ন, যদি গরম পোশাকের আড়ালে মোবাইল লুকনো থাকে, তা জানা কী ভাবে সম্ভব। তাঁদের আশঙ্কা যে অমূলক নয় তা জানালেন জলপাইগুড়ির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি বললেন, “আজ বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী মোটা জ্যাকেট গায়ে দিয়ে এসেছে। তাদের দাঁড় করিয়ে সকলের পকেট দেখাতে বললাম। ঝুরঝুর করে নকলের কাগজ পড়ল মাটিতে।” জলপাইগুড়ির অন্য একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “এ বারে দেখছি, মেয়েরাও মোটা জ্যাকেট গায়ে দিয়ে আসছে। অথচ, জ্যাকেট তো স্কুলের পোশাক নয়। প্রশ্ন করলেই বলছে, ‘ঠান্ডা লাগছে ম্যাডাম’। তখন না করা যায় না। কিন্তু জ্যাকেটের ভিতরে তো আস্ত বই লুকিয়ে আনা যায়। জ্যাকেট খুলে দেখালেও লুকনো জিনিস নাও দেখা যেতে পারে।”

এক প্রধানশিক্ষকের কথায়, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পর্ষদকে কিছু জানানো হয় না। নকলের কাগজ উদ্ধার করে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়।”

জলপাইগুড়ি জেলার মাধ্যমিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুগত মুখোপাধ্যায় বলেন, “নকল রুখতে কড়া পদক্ষেপ করেছে পর্ষদ। সব কেন্দ্রকে সেই নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jalpaiguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy