Advertisement
E-Paper

দূষণ শুরু প্রাচীন জলাশয় বুজিয়েই

দূষণ ছড়াচ্ছে এই অভিযোগ তুলে বুজিয়ে দেওয়া হয়েছিল শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা একটি জলাশয়। সেটা ১৯১৬ সাল। অনেকে মনে করেন, সেই থেকেই শহরের পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়া শুরু। নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের কারণেই সে সময় জলাশয়টি বুজিয়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। এখন সেখানে ছোট্ট একটি মাঠ। চারপাশে কংক্রিটের জঙ্গল। জলপাইগুড়ি শহরের মধ্যে এমনই কিছু প্রাচীন দিঘি এবং পুকুর ছড়িয়ে আছে আনাচে।

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০৩:০৪
মেহেরউন্নিসা হাইস্কুল সংলগ্ন পুকুরটির হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র।

মেহেরউন্নিসা হাইস্কুল সংলগ্ন পুকুরটির হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র।

দূষণ ছড়াচ্ছে এই অভিযোগ তুলে বুজিয়ে দেওয়া হয়েছিল শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা একটি জলাশয়। সেটা ১৯১৬ সাল। অনেকে মনে করেন, সেই থেকেই শহরের পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়া শুরু। নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের কারণেই সে সময় জলাশয়টি বুজিয়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। এখন সেখানে ছোট্ট একটি মাঠ। চারপাশে কংক্রিটের জঙ্গল। জলপাইগুড়ি শহরের মধ্যে এমনই কিছু প্রাচীন দিঘি এবং পুকুর ছড়িয়ে আছে আনাচে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই পুরোপুরি ভরাট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নানা তথ্য অনুযায়ী জলপাইগুড়ি শহরে ১৪টি প্রাচীন জলাশয়ের খোঁজ মিলছে। জলপাইগুড়ি শহরের প্রাচীন পুকুরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজবাড়ির উত্তর দিকে অবস্থিত একটি পুকুর, রাজবাড়ির পূর্বদিকে বড় রাস্তার পাশে রাজবাড়ির দিঘি এবং লাগোয়া আরও দুটি পুকুর। এ ছাড়াও রয়েছে পুরোন মসজিদের পুকুর, পান্ডাপাড়া কালীবাড়ির পুকুর, পশ্চিম কংগ্রেস পাড়ার পুকুর, আদরপাড়ার পুকুর, জলপাইগুড়ি হাইস্কুল লাগোয়া পুকুর, শিববাড়ির পুকুর, ডাঙাপাড়ার দিঘি, মেহেরুন্নিসা হাইস্কুল লাগোয়া একটি পুকুর, বিলপাড়ার পুকুর এবং কান্তেশ্বর দিঘি। জলপাইগুড়ির রাজারা বৈকুণ্ঠপুর থেকে জলপাইগুড়িতে রাজধানী স্থানান্তরের পর থেকেই পুকুর খননের দিকে মন দেন। প্রাবন্ধিক উমেশ শর্মা বলেন, “বৈকুণ্ঠপুরের রাজারা নিজেদের এবং প্রজাদের প্রয়োজনে দিঘি এবং পুকুর খনন করার দিকে মনোযোগ দেন। তার ফলেই জলপাইগুড়িতে সে সময়ে অনেকগুলি দিঘি, পুকুর তৈরি হয়।”

জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ির রাজা জয়ন্ত দেবের আমলে(১৭৯৩-১৮০০) বর্তমান উকিলপাড়া এবং কামারপাড়া এলাকায় একটি পুকুর খনন করা হয়। ইতিহাস বলে জলপাইগুড়ি জেলা পত্তনের(১৮৬৯) পর রাজা জয়ন্ত দেব তাঁর সাত বছরের রাজত্ব কালের মধ্যে পাঁচ বিঘা জায়গার ওপর এই বিশাল পুকুর খনন করেন। ১০০ বছর ধরে এই পুকুরটি জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দাদের প্রয়োজন মিটিয়েছে। জয়ন্ত দেবের মৃত্যুর ১০০ বছর পর ১৯০০ সালে পুকুর সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা জয়চন্দ্র সান্যাল এবং শশীকুমার নিয়োগী সমেত ১৩ জন আইনজীবী তখনকার পুরসভা এবং ইংরেজ কমিশনারের কাছে পুকুরটি বুজিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন বলে জানা যায়। তাদের অভিযোগ ছিল পুকুরটিতে কচুরিপানা জমে দূষণ ছড়াচ্ছে। পুরসভা এবং ইংরেজদের পক্ষ থেকে রাজবাড়ির কাছে পুকুরটির কচুরিপানা তুলে দূষণমুক্ত করতে বলা হয়। ১৮৯৬ সালে ফণীন্দ্রদেব রায়কত মারা যান। তাঁর পুত্র প্রসন্নদেবের বয়স তখন মাত্র তিন বছর। তাঁর অভিভাবক হয়ে রাজকার্য চালাতেন জগদীন্দ্রদেব। তিনি জলাভূমি বোজানোর বিপক্ষে ছিলেন। নির্দেশ পেয়ে তিনি পুকুর থেকে কচুরিপানা তুলে সংস্কার করে দেন। তারপরে প্রতি বছর পুকুর সংস্কার চলতে থাকে। তা সত্ত্বেও, সেই সময় জলপাইগুড়ি শহরের আইনজীবী এবং নব্য প্রতিষ্ঠিত চা শিল্পপতিদের একাংশ তখন এককাট্টা। যে করে হোক পুকুরটি বুজিয়ে দিতেই হবে। রাজবাড়ির পক্ষ থেকে পুকুরটি রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়। নথিপত্র বলছে, রাজবাড়ির পক্ষ থেকে তখন পুকুরটির চারপাশে সৌন্দর্যায়ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

পুকুরটি সংস্কার করে তার চারপাশে রেলিং বসানো হয়। চারপাশ দিয়ে বেড়ানোর মত রাস্তা করে দেওয়া হয়। ১৯১৪ সালে প্রসন্নদেব সাবালক হয়ে জলপাইগুড়ির রাজা হন। তখন তাঁর কাছে সরাসরি পুকুর বোজানোর আবেদন পৌঁছায়। অবশেষে ১৯১৬ সালে পুকুরটি বুজিয়ে দেওয়া হয়। এখন সেখানে গড়ে উঠেছে বর্দ্ধন প্রাঙ্গন নামে খেলার মাঠ এবং পুজোর জায়গা, বাড়িঘর, শপিং মল সবকিছু। জলপাইগুড়ি শহরের জলাভূমি বুজিয়ে পরিবেশ দূষণের সেই শুরু।

তবে সব উপেক্ষা করে এখনও টিকে আছে রাজবাড়ির দিঘি। ১৮০০ সাল থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে রাজা সর্বদেবের রাজত্বকালে এই বিশাল পুকুরটি খনন করা হয়। ভেতরে ভেতরে শুধু জলাভুমি এলাকা ধরলে এই প্রাচীন পুকুরটি লম্বায় ৩৫৫ মিটার এবং প্রস্থে ২২৫ মিটার। সম্প্রতি শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) তরফে পুকুরটিকে বাঁচানোর জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসজেডিএর জলপাইগুড়ির নির্বাহী বাস্তুকার প্রকাশ লামা বলেন, “পুকুরটির চারপাশ সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। মোট খরচ হবে ৫ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। পারের ভাঙা অংশগুলি পাথর ফেলে বাঁধিয়ে দেওয়া হবে।”

pollution durgapur jalpaiguri raja bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy