দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ফুঁসলে গত ১০ দিন ধরে বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগের ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার কালদিঘি এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্রীর বাবা ও মা অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে নাবালিক মেয়েকে অপহরণ করে জোর করে অন্যত্র আটকে রাখার অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ঘটনার পরে ১০ দিন কেটে গেলেও গঙ্গারামপুর থানা মেয়েটিকে উদ্ধারে উদ্যোগী হয়নি বলে অভিভাবকদের অভিযোগ। ওই নাবালিকার মা ও বাবা উপায় না দেখে বুধবার বালুরঘাটে এসে চাইল্ড লাইনের দ্বারস্থ হলে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি সামনে আসে। চাইল্ড লাইনের জেলা কোঅর্ডিনেটর সুরজ দাস বলেন, ‘‘অপহৃত মেয়েটি দুঃস্থ পরিবারের। গঙ্গারামপুর থানার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য বলা হয়েছে।’’
বছর সতেরোর দশম শ্রেণির পড়ুয়া ওই ছাত্রীটি গত ৫ জুন বিকেলে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। তাঁর মায়ের কথায়, ‘‘রাত হয়ে গেলেও মেয়ে বাড়িতে না ফেরায় খোঁজ খবর করতে পড়শিরা জানায় গঙ্গরামপুর থানার গোচিহার এলাকার হীরা চৌধুরী নামে এক যুবকের সঙ্গে মেয়েকে দেখা গিয়েছে।’’ তিনি জানান, এরপর আত্মীয়রা অভিযুক্ত হীরার বাড়িতে গিয়ে দেখেন মেয়ের স্কুলের ব্যাগ, বই এবং মোবাইল পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্তের ভাই এবং আত্মীয়দের কাছে মেয়ের হদিশ জানতে চাইলে তারা অকথ্য গালাগালি করে জানায় হিরা মেয়েকে বিয়ে করবে।’’ কিন্তু মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি বলে জানিয়ে তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানাতে অভিযুক্তের ভাই ও আত্মীয়রা তাঁদের মারধোর করে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। এরপরই তারা গঙ্গারামপুর থানায় গিয়ে অপহরণকারী হীরা এবং তার সহযোগী মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে জানান, অভিযুক্ত বিবাহিত। এর আগে দুই মহিলাকে বিয়ে করে তাঁদের তাড়িয়ে দিয়েছে। আগের পক্ষের একটি মেয়েও রয়েছে হীরার। নাবালিকাকে অন্যত্র লুকিয়ে রেখেছে বলে সন্দেহ করে মেয়েকে উদ্ধার করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আর্জি জানান ছাত্রীর বাবা ও মা।
পেশায় চালকলের শ্রমিক অভিযুক্ত হীরার সঙ্গে এ দিন বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সে অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে। হীরার বক্তব্য, মেয়েটি তাকে ভালোবাসে। গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়ার দিন মেয়েটির দিদি ফোন করে জানায় তোমরা দুজনকে ভালোবাসো। তখন বিয়ে করে নাও। সে বলে, ‘‘মেয়েও রাজি ছিল বলে ওকে বিয়ে করেছি।’’ সে যে আগে দুবার বিয়ে করেছিল, তা স্বীকার করে হীরা বলে, ‘‘এই বিয়ের মধ্যে কোনও জোরজবরদস্তি নেই।’’
চাইল্ডলাইনের কাছ থেকে খবর পেয়েও ওই নাবালিকাকে উদ্ধারের ব্যাপারে এদিন পুলিশের সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়নি। থানার আইসি সমীর দেওসা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।