E-Paper

শীতের সংজ্ঞা ‘বদলাতে’ পারে বাগানে

ডিসেম্বরে চা পাতা তোলা হবে না। সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়লে, চলতি বছর থেকেই ইংরেজ আমলের নিয়ম বদলে নতুন নিয়মে হাঁটবে ভারতীয় চা মহল।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৭
চা পাতা মাপার কাজ চলছে জলপাইগুড়ির রায়পুর বাগানে।

চা পাতা মাপার কাজ চলছে জলপাইগুড়ির রায়পুর বাগানে। নিজস্ব চিত্র।

চা পাতা তোলার শতাব্দীপ্রাচীন নিয়ম কি বদলাচ্ছে? চা বাগানে ‘শীতকাল’ বা ‘শুখা-কালের’ সংজ্ঞা কি তা হলে বদলে যাচ্ছে! এই প্রশ্নের জবাব রয়েছে আগামী ১৫ জানুয়ারি উচ্চ পর্যায়ে সার্বিক একটি বৈঠকে। বৈঠক ডেকেছে ভারতীয় চা পর্ষদ। সেখানে ঐকমত্য হলে আগামী নভেম্বরে পাতা তোলা শেষ হয়ে যাবে। ডিসেম্বরে চা পাতা তোলা হবে না। সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়লে, চলতি বছর থেকেই ইংরেজ আমলের নিয়ম বদলে নতুন নিয়মে হাঁটবে ভারতীয় চা মহল।

পর্ষদের এক আধিকারিকের কথায়, “নতুন সিদ্ধান্ত হলে, সে জন্য তৈরি হতে বাগানগুলির সময় লাগবে। সে কারণেই বছরের গোড়ায় বৈঠক ডাকা হয়েছে।” এত দিনের চলে আসা নিয়ম বা রীতি অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে চা পাতা তোলা বন্ধ হয়ে যায়, কারখানায় উৎপাদনও বন্ধ হয়। শীতের শেষে বসন্তে নতুন পাতা এলে ফের পাতা তোলা এবং উৎপাদন শুরু হয়। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে ৩০ নভেম্বরের পরে, আর পাতা তোলা যাবে না। ১ ডিসেম্বর থেকে চা বাগানে শীতের ঘোষণা হয়ে যাবে, পাতা তোলা বন্ধ হয়ে যাবে আগেভাগে।

দেশের চা সংক্রান্ত সর্বোচ্চ কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থা চা পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, “গবেষণা এবং সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, বাগানে শীতকাল এগিয়ে নিয়ে এলে ভারতীয় চায়ের ভালই হবে।”

যে নিয়মে এত দিন পাতা তোলা-বন্ধ চলছিল, হঠাৎ সেই নিয়ম পাল্টে দেওয়ার আলোচনা কেন? চা বাগান মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, ডিসেম্বরে যে পাতা উৎপাদন হয় তার গুণগত মান খুব একটা ভাল হয় না। এ বছরই একাধিক চা বাগান ডিসেম্বরের গোড়া থেকে নিজেরাই পাতা তোলা কমিয়ে দিয়েছিল। খারাপ মানের পাতা মিশে গিয়ে চায়ের সার্বিক গুণগত মান কমিয়ে দেয় এবং দামও কম মেলে। সে কারণে ডিসেম্বরে চা উৎপাদন না হলে, খুব একটা সমস্যা হবে না বলে দাবি। অন্য দিকে, চা পর্ষদের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে গত পাঁচ বছরে চা পানের চাহিদা দেশের বাজারে খুব একটা বাড়়েনি। অন্য দিকে, দেশে যা উৎপাদন হয় তা চাহিদার থেকে কোনও কোনও বছর অন্তত ৩৯ শতাংশ বেশি। ফলে, দাম কমতে থাকে। ডিসেম্বরের উৎপাদন কমে গেলে উদ্বৃত্তের পরিমাণ কমবে দামও মিলবে ভাল, দাবি পর্ষদের কর্তাদের। তাতে দেশে চায়ের বাজার শক্তিশালী হবে বলে দাবি।

ছোট চা বাগান মালিকদের সংগঠন সিস্টা-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “ডিসেম্বরে ছোট চা বাগানে অনেক পাতা হয়, সেই পাতা তোলা বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের মজুরি দেওয়া থেকে অন্যান্য খরচ চালাতে সমস্যা হবে।” চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের সদস্য মনিকুমার ডার্নাল বলেন, “ভারতীয় চায়ের ভাল হোক তা তো সকলেই চাই। কিন্তু শ্রমিকদের যেন কোনও সমস্যা না হয়। কোনও মালিক যাতে মজুরি বন্ধ করে ফের পাতা তোলা শুরু হলে মজুরি দেওয়া এমন পথে না হাঁটে সেটা চা পর্ষদকেই দেখতে হবে।” শ্রম দফতরের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘বিষয়টি একেবারেই চা বাগানের নিজস্ব। বাগান বন্ধ থাকলেও মজুরি দিতে
হবে। তার অন্যথা হলে, আমাদের দেখতেই হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jalpaiguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy