কোচবিহার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের হস্টেলে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শোরগোল অব্যাহত। হস্টেল কর্তৃপক্ষের দাবি, গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু ২০ বছরের ছাত্রীর বাবার দাবি, আত্মহত্যা নয়, মেয়ের মৃত্যুর নেপথ্যে ‘অন্য কোনও কারণ’ আছে। পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর থেকে কোচবিহারে গিয়ে কোতোয়ালি থানায় এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। অভিযোগপত্রে ওই কলেজের এক প্রাক্তনীর নাম করেছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
কোচবিহার গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অন্বেষার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে। ওই রাতেই খবর যায় ছাত্রীর বাড়িতে। ওয়ার্ডেন জানিয়েছিলেন, আত্মহত্যা করেছেন অন্বেষা। কিন্তু ছাত্রীর বাবা তাপস ঘোষের দাবি, এটা আত্মহত্যার ঘটনা নয়। পরিকল্পিত ভাবে আত্মহত্যা দেখানো হয়েছে!
তাপস পুলিশকে জানান, রাত ২টো ৩ মিনিট হস্টেল থেকে তাঁকে ফোন করা হয়েছিল। তিনি কলেজে এসে জানতে পারেন যে ১টা পাঁচ মিনিটে অন্বেষা শৌচাগার থেকে নিজের ঘরে গিয়েছিলেন। ১টা ২০ মিনিটে দরজা ভেঙে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে কী এমন ঘটনা ঘটল, প্রশ্ন সদ্য কন্যাহারা পিতার। আদতে দরজা ভেঙে তাঁর মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছিল কি না, সে নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এত রাতে মেয়েকে কেনই বা হঠাৎ করে ডাকা হচ্ছিল, কেন দরজা ভাঙতে হল?’’
তাপসের দাবি, আনিসুল গনি নামে ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক প্রাক্তনী তাঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। সে কথা মেয়েই তাঁকে ফোনে জানিয়েছিলেন। তিনি এ-ও দাবি করেন, মেয়ে তাঁকে বলেছিলেন, কোচবিহারে থাকতে তাঁর ভাল লাগছে না। তাঁর দাবি, এর আগে কলেজের অনুষ্ঠানে এক বার অন্বেষা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সে বার ওই প্রাক্তনীই তাঁকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু নিজের আসল নাম বলেননি। অভিযোগপত্রে তাপস লেখেন, ‘‘মেয়ের মৃত্যুর সঙ্গে আনিসুল গনি যুক্ত থাকতে পারে।’’
ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন, গত ১৫ই অগস্ট তিনি মেয়েকে কোচবিহারে নিয়ে আসেন। হস্টেলে রেখে ১৯ অগস্ট বাড়ি ফিরে যান। তার পর থেকে মেয়ে ফোনে একাধিক বার জানিয়েছিলেন, যে হস্টেলে তাঁর ভাল লাগছে না। তিনি বাড়ি যেতে চান। প্রৌঢ়ের প্রশ্ন, ‘‘এমন কী কারণ ছিল যে মেয়ে বাড়ি যেতে চেয়েছিল? কোনও ভাবে কেউ কি ওর উপর চাপ সৃষ্টি করছিল?’’
আরও পড়ুন:
পুলিশের উপর ভরসা রেখে তাপস জানান, তিনি চান ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক। মেয়ের অকালমৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটিত হোক।
কোচবিহার জেলা পুলিশ তরফে জানানো হয়েছে, রাত দেড়টা থেকে ২টোর মধ্যে ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে ‘আত্মহত্যা’র কথা জানিয়েছিলেন। ঘটনাক্রমে অন্বেষাকে পাটনারএকটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে এমজেএন মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এখন মৃতার বাবার অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ।