দলনেত্রীর বার্তাতেও কাজ হয়নি। এক হতে দেখা যায়নি ইংরেজবাজার পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ও বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার ওরফে বাবলাকে। নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিলেন তাঁরা। তবে পুরভোট আসতেই দুই বিপরীত মেরু এক হয়ে গেলেন। দুলাল বাবুর ফেস্টুন, ব্যানারে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির পাশাপাশি রয়েছে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু বাবুর ছবিও। এমন ফেস্টুন, ব্যানার দেওয়ালে দেওয়ালে পড়তেই মালদহে চলছে নানা আলোচনা। তৃণমূলের দলের নিচুতলার কর্মীরা এমন দৃশ্য দেখে হতবাক।
তৃণমূলের প্রথম সারির এই দুই নেতার হঠাৎ করে একে অপরের প্রতি প্রশংসা করায় কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, পুরভোটে নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে এক হয়ে লড়ছেন এই দুই হেভিওয়েট নেতা। কারণ, লোকসভা ভোটে ইংরেজবাজার শহরে অনেক ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। সেই ফলাফলকে মাথায় রেখে শহরের তৃণমূলের দুই দাপুটে নেতা এক হয়ে মাঠে নেমেছেন বলে দাবি রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের।
যদিও বিরোধীদের কটাক্ষকে আমল দিতে নারাজ তৃণমূলের জেলার এই দুই প্রথম সারির নেতারা। মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু ও দুলালবাবুর এক হওয়া প্রসঙ্গে বিজেপির জেলার সাধারন সম্পাদক তথা ২৭ নম্বর ওর্য়াডের প্রার্থী মানবেন্দ্র চক্রবতী বলেন, ‘‘এমন দৃশ্য কখনও দেখা যায় নি। জেলার রাজনীতিতে তাঁরা একে অপরের বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তবে বিগত লোকসভা ভোটে শহরে যা ফলাফল হয়েছিল তাতে তাঁদের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছিল। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মানুষকে দেখানোয় এক হয়েছেন।’’
পুরভোটের আগে এই দুই নেতা এক হয়ে যাওয়াকে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা ২২ নম্বর ওর্য়াডের প্রার্থী নরেন্দ্র নাথ তিওয়ারি। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘পুরসভা দখল করে প্রমোটার রাজ কায়েম করেন তাঁরা। সেই প্রমোটার রাজের ধারা বজায় রাখতে একে অপরের প্রশংসা করছেন। যার জবাব মানুষ তাঁদের এই পুরভোটে দেবেন।’’
এই বিষয়ে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী তথা ১০ নম্বর ওর্য়াডের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘দুলাল আমার ভাই এর মতো। আর আমাদের দল একটা পরিবার। পরিবারের মধ্যে এমন হয়ে থাকে। তাই বিরোধীরা কে কি বলল তাতে কিছু এসে যায় না। আর শহরের যা উন্নয়ন হয়েছে, তাতে আমার বিশ্বাস মানুষ আমাদের পাশে থাকবে।’’
মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবুর সুরেই সুর মিলিয়েছেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি তথা ২০ নম্বর ওর্য়াডের প্রার্থী দুলাল সরকার। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা এখন দেখছে তাদের কোন অস্তিত্ব নেই। তাই এমন কথা বলছেন। আর আমাদের মধ্যে কোন বিবেধ ছিল না। আর কৃষান দা আমাদের নেতা। তাঁর নেতৃত্বে আমরা আবার বোর্ড গড়ব।’’
লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালদহে এসে কৃষ্ণেন্দু, দুলাল বাবুদের নাম ধরে এক সঙ্গে চলার বার্তা দিয়েছিলেন। দলনেত্রী বার্তা দেওয়ার পরেও এই দুই নেতাকে একসঙ্গে দেখা যায়নি। এমনকি লোকসভা নির্বাচনের প্রচারেও একসঙ্গে দেখা যায়নি। একজন ঢুকতেই অপরজন বেড়িয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলের এই দুই নেতার সম্পর্কের কথা রাজনৈতিক নেতা সাধারন মানুষও জানেন।
কৃষ্ণেন্দুবাবু কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর পুরসভাতেও তেমন যেতেন না দুলাল বাবু। বাড়ি থেকে পুরসভার কাজ কর্ম করতেন। তবে এবারের পুরভোটে দেখা যাচ্ছে অন্য ছবি।
দুলালবাবু মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় কৃষ্ণেন্দু বাবুর নামে জয়ের ধনি দিয়েছেন। তাঁকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন কৃষ্ণেন্দু বাবু। এখন দেখা যাচ্ছে দুলাল বাবুর প্রচারের ফেস্টুন, ব্যানারে দেখা যাচ্ছে কৃষ্ণেন্দু বাবুর ছবি।
ইংরেজবাজারের ২০ নম্বর ওর্য়াডে লড়ছেন দুলাল বাবু। ২১ নম্বর ওর্য়াডে লড়ছেন তাঁর স্ত্রী চৈতালি ঘোষ সরকার। দুই ওর্য়াডেই দলনেত্রীর ছবির পাশাপাশি সম পরিমান জায়গা জুড়ে রয়েছে জেলার মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবুর ছবিও। যা নিয়ে ইতিমধ্যে শহর জুড়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। দলের কর্মীদের মধ্যে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে ইংরেজবাজার পুরসভার ২৫টি ওর্য়াডের মধ্যে ২৩টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যানও নিজেদের ওর্য়াডেও প্রায় ৫০০ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। তাই নিজেদের মধ্যে দ্বন্ধ ভুলে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এক হয়ে পুরনির্বাচনে লড়ছেন বলেই তো মনে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy