হিমঘরে রাখা আলুর বীজ পচে যাচ্ছে, এই অভিযোগে শনিবার সকাল ১০টা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন ধূপগুড়ির চাষিরা। শালবাড়ি এলাকায় জাতীয় সড়কের উপর বসে পড়েন শতাধিক আলুচাষিরা। তার জেরে জাতীয় সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। অথচ চার ঘণ্টা বাদে বেলা ২টোর সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা।
নাকাল যাত্রীদের অভিযোগ, পুরো সময়টাই পুলিশ দর্শকের ভূমিকাতে ছিল। প্রশাসনিক আধিকারিকেরা কৃষকদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। তবে তার পর থেকেই হিমঘর চত্বরে শুরু হয় বিক্ষোভ। হিমঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা যাতে বেরোতে না পারেন, তার জন্য গেট আটকে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই বিক্ষোভ চলার পরে ধূপগুড়ির বিডিও এবং আইসির উপস্থিতিতে আলোচনা শুরু হয়। রাত পযর্ন্ত আলোচনা চলে।
এর আগেও হিমঘরে রাখা আলু নিয়ে একই অভিযোগে গত ১৭ ও ১৯ নভেম্বর ধূপগুড়িতেই জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন চাষিরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসন সমস্যার সমাধান বা অবরোধ রোখার ব্যাপারে পদক্ষেপ না করাতেই সাধারণ বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শালবাড়ি এলাকার একটি হিমঘরে গত বছর রাখা আলু বীজ পচে যাচ্ছে ওই অভিযোগ তুলে এ দিন সকালে অবরোধ শুরু হয়।
প্রশাসনের ব্যাখ্যা, হিমঘরে রাখা বীজে পচনের অভিযোগ যথেষ্ট স্পর্শকাতর। বিক্ষোভকারীদের জোর করে তুলতে গেলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা ছিল। তাই আলোচনার মাধ্যমে অবরোধ তোলা হয়। ধূপগুড়ি থানার আইসি যুগলচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। কৃষকদের বিরুদ্ধে শুধু আইনি ব্যবস্থা নিলেই যদি সমস্যা মিটে যেত, তবে নিশ্চই তাই করা হত।”
কৃষকেরা জানাচ্ছেন, গত বছর এলাকার পাঁচশো কৃষক হিমঘরে ২০ হাজার প্যাকেট আলু বীজ রেখেছিলেন। প্রতিটি প্যাকেটে ৫০ কিলো আলু বীজ রয়েছে। ওই বীজ হিমঘর থেকে বের করে জমিতে রোপণ করার পরেই পচে যাচ্ছে। আবুল হামিদ, মনি শীল, সুকুমার দাসের মতো চাষিদের বক্তব্য, “গত ২১ নভেম্বর আলোচনায় বসে ঠিক হয় প্যাকেট প্রতি ১ হাজার তিনশো টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ২৫০ জনকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার পরেই সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে অবরোধ করেছি।”
তবে হিমঘরের ম্যানেজার রামকৃষ্ণ অগ্রবাল এবং হিসাবরক্ষক সন্দীপ রায়ের দাবি, “কৃষকদের অভিযোগ পেয়ে আলু বীজ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসেনি। চাপ দিয়ে কিছু ক্ষতিপূরণ আদায় করে নেওয়া হয়েছিল, পরে আর ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়।”
ধূপগুড়ির বিডিও সৌমেন দুতরাজ বলেন, “গত ২১ নভেম্বর আলোচনায় বসে সমাধানসূত্র বের করা হয়েছিল। কয়েকজন কৃষককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে হিমঘর কর্তারা বন্ধ করে দেন। তাতেই ফের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি আলোচনাতেই মেটানো হবে।”
তবে রাস্তায় আটকে পড়া যাত্রী থেকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা কিন্তু এ দিন অবরোধের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সিপিএমের ধূপগুড়ি ১ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক জয়ন্ত মজুমদার বলেন, “সমস্যা থাকলে হিমঘর মালিক অথবা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে মিটিয়ে নেওয়া যেতে পারে। জাতীয় সড়ক আটকিয়ে সাধারণ মানুষকে নাকাল করা কেন?”
তৃণমূলের ধূপগুড়ি ব্লক সভাপতি গোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “কৃষকদের সমস্যা থাকলে আলোচনার টেবিলে বসে মেটানো প্রয়োজন। জাতীয় সড়ক অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলে লাভ হয় না। প্রশাসনের কর্তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।”