Advertisement
E-Paper

কান্নায় ভেঙে পড়ল বান্ধবীরা

আজ সোমবার থেকে স্কুলের হীরক জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন শুরু। ছাত্রীটি বান্ধবীদের বলেছিল, সোমবার ভাল ভাবে সেজে স্কুলে যাবে। সকলে মিলে স্কুলে দিনভর কী কী করবে, তারও নানারকম মজাদার পরিকল্পনাও সে বাতলে দিয়েছিল বান্ধবীদের। যদিও, রবিবার সকালে বাড়ির পাশের একটি সিম খেত থেকে ক্ষতচিহ্নে ভরা দেহ উদ্ধার হয়েছে ছাত্রীটির।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৪

আজ সোমবার থেকে স্কুলের হীরক জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন শুরু। ছাত্রীটি বান্ধবীদের বলেছিল, সোমবার ভাল ভাবে সেজে স্কুলে যাবে। সকলে মিলে স্কুলে দিনভর কী কী করবে, তারও নানারকম মজাদার পরিকল্পনাও সে বাতলে দিয়েছিল বান্ধবীদের। যদিও, রবিবার সকালে বাড়ির পাশের একটি সিম খেত থেকে ক্ষতচিহ্নে ভরা দেহ উদ্ধার হয়েছে ছাত্রীটির। রবিবার সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ি হাসপাতালের পুলিশ মর্গে ময়নাতদন্তের পরে, দেহটি যখন ছাত্রীর বাড়িতে পৌঁছল, কান্নায় ভেঙে পড়লেন বান্ধবীরা।

শনিবার রাত থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী। রবিবার সকালে ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়। ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে, আপাতত স্থানীয় এক কলেজ পড়ুয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ দিন রাতে শ্মশানে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুলের শিক্ষকদেরও চোখ মুছতে দেখা গিয়েছে। তাঁদেরই কয়েকজন জানালেন, শান্ত হলেও, খুবই মিশুকে স্বভাব ছিল ছাত্রীটির। শনিবার সকালেও কয়েকজন বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করে, স্কুলের হীরকজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের নানা পরিকল্পনা করেছে। এক বান্ধবীর কথায়, “এই তো শনিবার ওর সঙ্গে কত কথা হল। বলেছিল, সোমবার খুব সেজে স্কুলে যাবে। ওই সকলকে সেজেগুজে স্কুলে যেতে বলেছিল। আর ও নিজেই স্কুলে যেতে পারবে না।”

শ্মশানে ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত দে-ও। প্রধান শিক্ষক বললেন, “প্রায় প্রতিদিনই স্কুলে আসত। মুখে হাসি যেন লেগেই থাকত। সোমবার থেকে স্কুলে উত্‌সব শুরু হচ্ছে। কোথা থেকে কী হয়ে গেল।” প্রধান শিক্ষকের কথায়, “আমরা আতঙ্কিত।”

শুধু প্রধান শিক্ষক নয়, আতঙ্ক ছড়িয়েছে ধূপগুড়ি শহর জুড়েই। সেই সঙ্গে শহরকে গ্রাস করেছে ছাত্রীর শোকও। দশম শ্রেণির আরেক ছাত্রীর হারিয়ে যাওয়ার ক্ষত এখনও দগদগে। মাত্র চার মাস আগে গত ২ সেপ্টেম্বর শহরের রেল লাইনের ধার থেকে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। তাকেও ধর্ষণের পরে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল। আগের রাতে সালিশি সভায় বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করেছিল ছাত্রীটি। প্রতিবাদী সেই ছাত্রীর খাতার শেষ পৃষ্ঠায় পাওয়া গিয়েছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার কয়েকটি লাইন। রবিবার দেহ উদ্ধার হওয়া ছাত্রীর খাতার মধ্য থেকে অভিযুক্তের নামে লেখা কয়েকটি চিঠি উদ্ধার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ নাবালিকার ‘প্রেমিক’ ধূপগুড়ি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র অমিত রায়কে মল্লিকপাড়ার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে। ছাত্রীর কয়েকজন পড়শি বলেন, “মেয়েটি খুব সরল মিশুকে ছিল। এটাই হয়ত কাল হল।” তাঁর সঙ্গে যে অমিতের সম্পর্ক ছিল সেটা জানেন পড়শি এবং নিহত ছাত্রীর সহপাঠীরাও। কেমন ছেলে ছিল অমিত? সহপাঠীদের দাবি, অমিত পড়াশোনা ভাল ছিল। নিহত ছাত্রীর সহপাঠীদের অভিযোগ, “রোমিও সেজে দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ওই ছেলে। মেয়েদের দেখলে আপত্তিকর মন্তব্য করত।” কলেজের অধ্যক্ষ নীলাংশুশেখর দাস অবশ্য ওই বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি। তাঁর কথায়, “পাঁচ হাজার ছাত্রর মধ্যে, কে কেমন সেটা বলা সম্ভব নয়।”

এ দিন নাবালিকার দেহ উদ্ধারের ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক মমতা রায়ের প্রশ্ন, “মেয়েদের উপর এই অত্যাচার কবে বন্ধ হবে? মেয়েরা রাস্তায় চলাফেরা করবে কোন ভরসায়!” জলপাইগুড়ির জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল অবশ্য এ দিন বলেন, “পুরো ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার সন্ধ্যায় ধূপগুড়ি শহরে মিছিল করে সিপিএম। দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছে দল। একই দাবি তুলেছে তৃণমূলও। দলের নেতা গুড্ডু সিংহ বলেন, “ছাত্রীর এই পরিণতি কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনার পিছনে যে বা যারাই থাকুক না কেন কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা পুলিশকে করতে হবে। এটাই আমরা চাই।”

rape student dhupguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy