টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। এ বার সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত ভট্টাচার্যের কাছে ধূপগুড়ির নিহত ছাত্রীর পরিবার অভিযোগ করলেন, মামলা না-তুললে ভিটেছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, “ওই পরিবার দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।”
গত সোমবার রাতে তৃণমূল কাউন্সিলার নমিতা রায় ও তাঁর স্বামী চন্দ্রকান্ত রায়ের ডাকা সালিশি সভা থেকে নিখোঁজ হয়ে যান দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী। পরে তার দেহ পাওয়া যায় রেল লাইনের ধার থেকে। চন্দ্রকান্তবাবু ও তাঁর সমর্থকদের নামে অভিযোগ করে ছাত্রীর পরিবার। অভিযোগ, তারপর থেকেই লাগাতার হুমকি চলছে তাঁদের উপর। শনিবার নিহত ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে হয়রানির বিশদ বিবরণ শোনেন ঋতব্রতবাবু।
সেখান থেকে বেরিয়ে ধূপগুড়ি থানায় গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সিপিএম সাংসদ। তিনি অভিযোগ করেন, ধূপগুড়ি-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না বলে দাবি করছে। অথচ তারা নানা ভাবে চাপ দিচ্ছে পরিবারকে। জলপাইগুড়ির ডিএসপি (অপরাধ) অনিরুদ্ধ ঠাকুরের সঙ্গে বচসাও হয় সাংসদের।
এরপর কদমতলায় দলীয় সভায় ঋতব্রতবাবু বলেন, “তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের পর থেকে একাধিক পুলিশ কর্তার সঙ্গে লাগাতার কথা বলছেন। প্রকৃত ঘটনা আড়ালের নির্দেশ দিয়ে চলেছেন।” ঋতব্রতবাবুর দাবি, ধূপগুড়ি থানার আইসি, ময়নাগুড়ি জিআরপি-র ওসি, প্রমুখ অফিসারদের মোবাইলের কল রেকর্ড পরীক্ষা করতে হবে। তা হলেই তাঁদের সঙ্গে কতবার সৌরভবাবুর কথা হয়েছে, তা স্পষ্ট হবে। তাঁর আরও অভিযোগ, ওই অফিসারদের ‘আরও ভাল থানা’-তে পোস্টিং-এর টোপ দেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগের উত্তরে সৌরভবাবুর জবাব, “পাগলে কী না বলে! আমি কখনও আইসি কিংবা ওসিকে ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার প্রসঙ্গে ফোন করিনি।” সৌরভবাবুর পাল্টা অভিযোগ, ঋতব্রতবাবু ধূপগুড়িতে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রতিবাদে জেলা জুড়ে পাল্টা আন্দোলন শুরু করার হুঁশিয়ারিও দেন সৌরভবাবু।
তবে তৃণমূলের অন্দরের খবর, দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে তার বাড়িতে গিয়ে দলের জেলা সভাপতি সৌরভবাবু কেন সমবেদনা জানাননি, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। সৌরভবাবুর দাবি, “ওই ছাত্রীর বাবা সিপিএমের সমর্থক। ওখানে কেন যাব?”
এক কিশোরীর গণধর্ষণ ও খুনের মতো গুরুতর অভিযোগের পর এটাই কি তৃণমূলের অবস্থান? শনিবার এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “জলপাইগুড়িতে দলের ব্লক থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত কাঠামো রয়েছে। তারাই দলগত অবস্থানের বিষয়টি বলবে। তবে রাজ্য সরকার ওই পরিবারের সমব্যথী।”
শনিবার নিহত কিশোরীকে নিয়ে রাজনীতির চাপান-উতোর প্রসঙ্গে গৌতমবাবু বলেন, “এমন একটি দুঃখজনক ঘটনা যেখানে ঘটেছে, সেখানে যারাই রাজনীতি টেনে আনুন, তাঁদের কড়া নিন্দা করছি।” তিনি নিজে কেন যাননি নিহত ছাত্রীর বাড়ি? গৌতমবাবুর উত্তর, “রাজনীতি এড়াতেই ধূপগুড়ি যাইনি।”
দলের অন্দরের খবর, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনার পর ধূপগুড়িতে সৌরভবাবুর নেতৃত্বে তৃণমূলের ‘শান্তিমিছিল’ ভাল ভাবে নেননি অনেকেই। দলের অন্দরের খবর, নেতাদের একাংশ তো বটেই, তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির অনেকেই ওই মিছিলে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েও যাননি। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির একাধিক সদস্য একান্তে জানিয়েছেন, ছাত্রী অপমৃত্যুর পরে ওই ধরনের মিছিল করার অর্থ হল, ঘটনাটিকে রাজনীতির মোড়ক দেওয়া। শুধু তা-ই নয়, সালিশি সভায় হাতে গোনা কয়েকজন দলের নেতা-কর্মী থাকলেও তা আড়াল করতে গিয়ে সামগ্রিক ভাবে দলের ভাবমূর্তি কেন বিপন্ন করা হবে সেই প্রশ্নও উঠেছে দলের অন্দরে।
তৃণমূলের জলপাইগুড়ির প্রাক্তন জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী এ দিন বলেন, “অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তা হলে যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের আড়াল করার কিছু নেই। এটাই দলের নীতি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy