গত রবিবার সকালে বাড়ির পাশের একটি সিম খেত থেকে উদ্ধার করা হয় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর দেহ। এ দিন তার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান থাকায় ছাত্রীর পরিবার এদিন শোকস্তব্ধ ছিল। শোক সামলে উঠলে রহস্যের জট খুলতে ওই পরিবারের সঙ্গে ফের কথা বলবে পুলিশ।
ছাত্রীর মেসোমশাই জানান, ঘটনার চার দিন আগে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়ার সময় এক যুবক ছাত্রীর পথ আটকে দাঁড়ায়। দু’জনের মধ্যে বচসা হয়। পুলিশ ওই তথ্যের সূত্র ধরে মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে বিভিন্ন গ্রামে তল্লাশি শুরু করে সন্ধ্যায় ঝালটিয়া এলাকা থেকে এক যুবককে আটক করে জেরা করছে।
পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই ছাত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুনের আগে তার একটি হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্নও মিলেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না পেলেও হাসপাতাল সূত্রে পুলিশের কাছে ওই বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পৌঁছেছে। তাতেই পুলিশের সন্দেহ, একাধিক জন মিলে খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। ইতিমধ্যে ধৃত ছাত্রীটির প্রাক্তন ‘প্রেমিক’ অমিত রায়কে পুলিশ জেরা করে কিছু স্পষ্ট তথ্য অবশ্য পায়নি। তবে তার কাছ থেকে বেশ কিছু নাম পয়েছে। তাদের সন্দেহের তালিকায় রেখেছে পুলিশ। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ছাত্রীটি মোবাইলের ‘ক্যাশ কার্ড’ কিনেছিল। তার মোবাইল নেই। তা হলে সে ওই কার্ড কার সিমে ভরে কথা বলেছিল তা নিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে। ওই ব্যাপারে এলাকার এক ব্যবসায়ী যুবককেও পুলিশ জেরা করতে চাইছে। ধৃতের বাড়ির লোকজনেরা জানিয়েছেন, অমিত কোনও ভাবে ওই ঘটনায় যুক্ত নয়। তাঁরা ওই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন। অবশ্য সিআইডি ঘটনাটি নিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেছেন, “তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে। তা নিয়ে এখনই প্রকাশ্যে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
গত রবিবার সকালে ধূপগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে সিম খেত থেকে দেহ উদ্ধার হয় ওই ছাত্রীটির। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ পূর্ব মল্লিকপাড়ার বাড়ি থেকে অমিত রায় নামে ধূপগুড়ি কলেজের কলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রকে গ্রেফতার করে। সোমবার ওই ছাত্রকে পুলিশ সাত দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রেফতারের পর থেকে অমিত মৃত ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম এবং পরে বিচ্ছেদ হএওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে ছাত্রীটিকে খুনের ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনও ভাবে যুক্ত নন বলে ধৃত পুলিশের কাছে দাবি করেছেন।
অমিতের দাদা নিখিল বলেন, “ভাই কিছু জানলে তো বলবে। পরিবার থেকে আমরা খুব ভাল জানি মৃত ছাত্রীর সঙ্গে অমিতের প্রেম ছিল। দুমাস আগে ওই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এর পরে তো ওঁদের মধ্যে কথা ছিল না। অথচ ওকে আটকে রেখে জেরা করছে।” অমিতের বাবা পেশায় চাষি ননীগোপালবাবু বলেন, “আমরা পরিবার থেকে ছাত্রীর নির্মম মৃত্যুকে যেমন মেনে নিতে পারিনি। একইভাবে নির্দোষ ছেলেকে ঘটনায় জড়িয়ে গ্রেফতার করাকেও মানছি না। ওই কারণে চাই ঘটনার সিবিআই তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করা হোক।” কেন সিবিআই তদন্তের দাবি? অমিতের দাদা বলেন, “পুলিশ তো ঘটনার তদন্ত শুরু না করতে একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে ভাইকে তুলে নিয়ে গেল। এর পরে আসল অপরাধীদের ধরতে সিবিআই ছাড়া কার উপরে ভরসা রাখব!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy