Advertisement
E-Paper

বার্ধক্যে বাবা, ভাতা পাচ্ছেন ‘বৃদ্ধ’ ছেলে

বাবার আগে ছেলে বৃদ্ধ হন। অপেক্ষাকৃত ‘কমবয়সী’ বাবা. বয়স হয়নি— এই কারণে বঞ্চিত হন বার্ধক্য ভাতা থেকে। আর ‘বৃদ্ধ’ ছেলে দিব্যি মাসে মাসে ৪০০ টাকা করে বার্ধক্য ভাতা পেয়ে চলেছেন।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০১:৪২

এখানে যেন সবই উল্টো।

বাবার আগে ছেলে বৃদ্ধ হন। অপেক্ষাকৃত ‘কমবয়সী’ বাবা. বয়স হয়নি— এই কারণে বঞ্চিত হন বার্ধক্য ভাতা থেকে। আর ‘বৃদ্ধ’ ছেলে দিব্যি মাসে মাসে ৪০০ টাকা করে বার্ধক্য ভাতা পেয়ে চলেছেন।

এ নিয়ে এলাকায় মৃদু প্রতিবাদও হয়েছে। বাবার পক্ষ নিয়ে অনেকেই প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠিচাপাটিও করেছেন। শেষমেশ বাবার বয়স বেড়েছে। সরকারি খাতায়। মিলছে বার্ধক্য ভাতা। তাতে অবশ্য ছেলের বয়স কমেনি। ছেলেও ভাতা পাচ্ছেন।

এমনই আজগুবি ঘটনার সাক্ষী নওদার কেদারচাঁদপুর গ্রাম। ওই গ্রামের জগবন্ধু মণ্ডলের বয়স ৭৭। তাঁর বাবা ফজল মণ্ডলেরও বয়স ৭৭। এমনই আজব তথ্য জানা যাচ্ছে ভোটার তালিকা থেকে। বাবা-ছেলের জন্ম সাল এক হয় কী করে? এটাই তো লাখ টাকার প্রশ্ন।

এলাকায় গিয়ে খতিয়ে দেখতেই জানা গেল, ছেলে জগবন্ধু মণ্ডলের বয়স আদতে ৪৭। পরিবারটি বিপিএল তালিকাভুক্ত। নিয়ম অনুযায়ী, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে বার্ধক্য ভাতা পাওয়া যায়। কিন্তু সে সব নিয়ম ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে কেদারচাঁদপুরের মণ্ডল পরিবারে। ছেলে জগবন্ধু মণ্ডল যুবক বয়স থেকেই পাচ্ছেন বার্ধক্য ভাতা। ৩৯ বছর থেকে তিনি ওই ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাবা ফজল মণ্ডলের বার্ধক্য ভাতার তালিকায় নাম ছিল না।

এ নিয়ে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ জানায়। তাতে সামিল হন ফজল মণ্ডলও। গ্রামের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রতিবাদ পৌঁছয় পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের দফতরেও। বড় অশান্তির আঁচ পেয়ে বার্ধক্য ভাতার তালিকায় নাম ঢোকে ফজলের। কিন্তু ছেলের নাম বাদ যায় নি। ছেলেও দিব্যি ভাতা পাচ্ছেন। বিষয়টি স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান থেকে ব্লকের কর্তা— সকলেরই জানা। শুনে তাঁরা জিভও কাটছেন। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, ‘‘তালিকা সংশোধনের অনেক হ্যাপা। তাই এখনই ছেলের নাম বাদ দেওয়া যাচ্ছে না।’’

ফজল মণ্ডল নিজেই বলেন, ‘‘আমার ছেলে এবং আমি, দু’জনেই বাধর্ক্য ভাতা পাই। তবে ছেলে আগে থেকেই পেত। কিন্তু এমনটা কেন হয়েছে, জানি না।’’

নওদার বিডিও লিটন সাহা বলেন, ‘‘২০০৫ সালে বার্ধক্য ভাতার তালিকা তৈরি হয়। তখন ভোটার তালিকাকেই বয়সের প্রামাণ্য বলে মানা হত। ভোটার তালিকায় জগবন্ধুবাবুর বয়স ভুল ছিল। তাই তাঁর নাম বার্ধক্য ভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছে।’’ কিন্তু বিষয়টি জানার পরও কেন সংশোধন করা হল না? কেনই বা ফজলবাবুর নাম তালিকাভুক্ত হতে এতগুলি বছর লেগে গেল? এ সব প্রশ্নের অবশ্য সদুত্তর দেননি বিডিও।

প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মতে, প্রাথমিক ভাবে পঞ্চায়েত স্তরে বার্ধক্য ভাতার তালিকা তৈরি হয়। তার পরে তা আসে ব্লক কার্যালয়ে। সেখানে তালিকা ঝাড়াই-বাছাই করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলাশাসকের কার্যালয়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঠানো তালিকা ব্লকে সে ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। আর তাতেই ঘটেছে এই বিপত্তি। এ প্রসঙ্গে কেদারচাঁদপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সৌমেন রায় বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে আমি এখানকার প্রধান হয়েছি। আর আট বছর ধরে জগবন্ধু মণ্ডল ভাতা পাচ্ছেন বলে শুনেছি। ব্লকের তরফে ভুলটা সংশোধন করা হচ্ছে না।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বস্তুত গোটা নওদা ব্লক জুড়েই বার্ধক্য ভাতার তালিকা নিয়ে অনিয়মের ছড়াছড়ি। মধুপুরের বাসিন্দা আসমান বেওয়ার বয়স ৮৪। খগেজান বেওয়া ৮৫ বছরের বৃদ্ধা। উভয়েই বিপিএল তালিকাভুক্ত। কিন্তু দু’জনের কেউই বার্ধক্য ভাতা পান না। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘সরকারি অফিসের কর্মীরা কোনও কথাই শুনতে চায় না। ভাতার টাকা বোধহয় আর পাওয়া হবে না।’’ ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সঙ্গে জুটেছে রাজনৈতিক নেতাদের অসৎ উদ্দেশ্য। সেই কারণেই প্রকৃত উপভোক্তারা ভাতা পাচ্ছেন না। বার্ধক্য ভাতার তালিকায় বহু জল ঢুকেছে। সম্প্রতি দমদমা গ্রামের ১৮ জন বয়স্ক নাগরিকের নাম বার্ধক্য ভাতার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।

বহরমপুরের মহকুমাশাসক দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

father allownce
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy