Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষায় পাহাড়ও

পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলের মত, লোকসভা ভোটের পরে সম্প্রতি পরিস্থিতির বদল ঘটেছে। বিজেপি সাংসদ, বিধায়ক পদ শৈলশহরে দখল করেছে। জিএনএলএফ-ও সব জায়গায় নতুন করে নিজেদের অস্বস্তিতের প্রমাণ দিচ্ছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০৯
Share: Save:

কাঞ্চনজঙ্ঘায় ঘেরা শীতের দার্জিলিং পাহাড় এখন শান্ত। চা বাগানের বোনাসকে ঘিরে এক দিনের বন্‌ধ হলেও পাহাড়ের ইতিহাসে প্রথম বার উঠে এসেছে ধর্মঘটের যৌক্তিকতা নিয়ে নানা স্তরের প্রশ্ন। সেই সঙ্গে বিনয় তামাংয়ের অনশনের পরেই বোনাস ঘোষণা হওয়ায় এক দিকে যেমন পাহাড়ে বিনয়পন্থীরা সেই হাওয়া নিজেদের পালে টানতে চেয়েছেন, তেমনই অন্য দিকে, চা বাগান সংগঠনগুলির মিলিত নেতৃত্বভিন্ন মত পোষণ করেন। তাতে রাজনৈতিক উত্তাপ বরাবরের মতো বজায় রয়েছে দার্জিলিঙে। উত্তাপের আঁচ, আগুন ছড়িয়ে না পড়লেও সর্বত্র টানাপড়েন রয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভা ভোটের পরে প্রথম বার পাহাড়ে গিয়ে কী বলেন, তার দিকে চেয়ে রয়েছেন পাহাড়বাসী।

পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলের মত, লোকসভা ভোটের পরে সম্প্রতি পরিস্থিতির বদল ঘটেছে। বিজেপি সাংসদ, বিধায়ক পদ শৈলশহরে দখল করেছে। জিএনএলএফ-ও সব জায়গায় নতুন করে নিজেদের অস্বস্তিতের প্রমাণ দিচ্ছে। তেমনই, কোণঠাসা হলেও বিমল গুরুংপন্থীরা পাহাড়ে এখনও পুরোমাত্রায় সক্রিয়। কিন্তু সম্প্রতি চা বাগানকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এক জায়গায় আসা, বিনয় তামাং-এর আমরণ অনশন, মালিকপক্ষের ২০ শতাংশে বোনাস ঘোষণা-পাহাড়ের রাজনীতিতে নতুন রং লাগিয়েছে। আবার দুই দিনে বদল হয়েছে কিছুটা রাজনীতি। বাগানে বাগানে অচলাবস্থা শুরু হয়েছে।

এই অবস্থায় কাল, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দীর্ঘদিন পর পাহাড়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। একেবারে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলার পাহাড় নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করতে। সরকারি সূত্রের খবর, ওই দিন কার্শিয়াং পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রীর গিদ্দাপাহাড় এলাকায় থাকার কথা। পরের দিন, বুধবার কার্শিয়াং স্টেশন লাগোয়া জিটিএ-র তৈরি নয়াবাজার কমিউনিটি হলে প্রশাসনিক বৈঠক হবে। তাতে পাহাড়ের পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারেরা ছাড়াও জিটিএ-র দায়িত্বপ্রাপ্তেরা থাকবেন।

রাজ্য প্রশাসনের উত্তরবঙ্গের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, গ্রামীণ পাহাড়ের অর্থনীতি বিকাশে চা বাগানের পরিস্থিতি, একাধিক পর্যটন প্রকল্প, পরিকাঠামো নিয়ে সরকারি প্রকল্পগুলি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে আলোচনা হবে। তেমনই, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজের ক্যাম্পাসের কাজের অগ্রগতি ছাড়াও হর্টিকালচার, ফ্লোরিকালচার এবং কৃষিজ শিল্পের সম্ভবনা নিয়ে তৈরি প্রকল্পের পরিস্থিতি মুখ্যমন্ত্রী খতিয়ে দেখতে পারেন। আর এই কাজের ক্ষেত্রে বিনয় তামাং, অনীত থাপাদের জিটিএ-র সঙ্গে সমন্বয় রেখেই উন্নয়নের কাজ করার উপর সরকারি সিদ্ধান্ত মতো আলোচনা হবে।

বুধবারের রাতে পাহাড়ে থাকলেও আর কোনও সরকারি কর্মসূচি নেই মুখ্যমন্ত্রীর। তবে প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিনয়, অনীত বা অমর সিংহ রাইদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। অনশনের জেরে অসুস্থ হয়ে বিশ্রামে থাকার পর রবিবার শিলিগুড়ি থেকে পাহাড়ে উঠেছেন বিনয়। পাহাড় পরিস্থিতি নিয়ে মোর্চা বিনয়পন্থীদের তিনি আলোচনা করতে পারেন। বিশেষ করে, বিজেপির তরফে সাংসদ রাজু বিস্তাকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকার পাহাড়ের বিভিন্ন চিন্তভাবনা এবং প্রকল্পের খতিয়ান বিভিন্ন সময় তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজে বিজেপি বিমলপন্থীদের ছাড়াও জিএনএলএফকে কোনও কোনও সময় পাশে পাচ্ছে। এর পাল্টা হিসাবে এনআরসি নিয়ে অসমের গোর্খাদের পরিস্থিতি সামনে এনে বিজেপি বিরোধীদের একজোট করার প্রক্রিয়া নিয়ে বিনয়দের সঙ্গে একান্তে আলোচনা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।

মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, প্রশাসনিক সভায় উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হবে। পরপর ভোটে রাজ্যের শাসক দল এবং আমরা হেরেছি। বিধানসভা উপ নির্বাচনেও বিনয় তামাং জিততে পারেননি। সেখানে মানুষের উৎসাহ-আবেগ রয়েছে, এমন বিষয়কে সামনে রাখা প্রয়োজন। মিরিকে জমির পাট্টাকে সামনে রেখে তৃণমূল সেখানে প্রভাব বাড়িয়েছিল। আবার সেই জায়গায় এনআরসি, চা বাগানের বোনাসের মতো বিষয়গুলি রয়েছে। তাই খালি উন্নয়ন নয়, বিনয়-অনীতদের এনআরসি নিয়ে জোরদার আন্দোলন বজায় রেখে মানুষের মনে জায়গা করার চেষ্টা করাটা জরুরি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ সব নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Darjeeling Mamata Banerjee CM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE