E-Paper

সংবিধানের পথ খোলা, ইঙ্গিত মোদীর

বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের ২১শে জুলাইয়ের সভা থেকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, এই রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে গাজোয়ারি হলে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও হবে, এমন আন্দোলন হবে যে দিল্লি পর্যন্ত টের পাবে!

সন্দীপন চক্রবর্তী, বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৫ ০৬:২০
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হলে তার মোকাবিলায় সাংবিধানিক ব্যবস্থাও আছে। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ঘিরে গোটা দেশে শোরগোলের মধ্যে এমনই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারই পাশাপাশি বিজেপি নেতাদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, বিরোধীদের আক্রমণের জবাবে তাঁরা পাল্টা প্রচার গড়ে তুলুন, বুথে নজর দিন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সংবিধানের সংস্থান মেনে নিজেদের কাজ করবে।

বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের ২১শে জুলাইয়ের সভা থেকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, এই রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে গাজোয়ারি হলে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও হবে, এমন আন্দোলন হবে যে দিল্লি পর্যন্ত টের পাবে! তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি ছিল, অন্যায় ভাবে একটা নাম বাদ গেলে এক লক্ষ লোক নিয়ে কমিশনের দফতর ঘেরাও হবে। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে ভোটমুখী বিহার ও বঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর ঘরোয়া আলোচনায় এসেছিল ভোটার তালিকার প্রসঙ্গ। তখনই প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, কমিশনের কাজে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করে না, করবে না। তবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হলে তখন সংবিধানও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না! এই বার্তায় বড় ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ।

কমিশন সূত্রে এর আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, পদ্ধতি মেনে এসআইআর-এর কাজ করা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কোনও রাজ্যে যদি সেই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করা হয়, কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকার পুরোপুরি অসহযোগিতার পথে চলে যায়, তা হলে সেখানে নির্বাচন করার পরিস্থিতি নেই বলেই মনে করা হবে। কমিশনের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে তার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে।

প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, তেমন অচলাবস্থা তৈরি হলে কোনও রাজ্যে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসনে নির্বাচন করানোর সুযোগও আছে। নির্দিষ্ট কোনও মন্তব্য না-করে প্রধানমন্ত্রী সাংবিধানিক সব রাস্তা খোলা থাকার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা।

বিহার থেকে রাজ্য সফরে এসে মেট্রো রেলের সম্প্রসারণ-সহএকগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাসের পরে দমদম সেন্ট্রাল জেল ময়দানে জনসভা করেছেন মোদী। তাঁর সফরের আগাগোড়া সঙ্গী ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। ঠাসা কর্মসূচির ফাঁকেই তাঁদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ মত বিনিময় হয়েছে। সেখানেই বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে উঠেএসেছিল পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠানের উপরে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্তর থেকে চাপ তৈরির প্রসঙ্গ। সূত্রের খবর, তখনই প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের নেতাদের আশ্বস্ত করে ওই বার্তা দিয়েছেন।

তার আগে বিহারে শাসক এনডিএ-র শরিক বিজেপি এবং জেডিইউ নেতাদের সঙ্গেও মোদীর আলাপচারিতা হয়েছে। বিহারে এখন ‘ভোটাধিকার যাত্রা’ চালাচ্ছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, আরজেডি-র তেজস্বী যাদব। সূত্রের খবর, শাসক নেতাদের কাছে মোদী বলেছেন, বড় কোনও প্রক্রিয়া চালাতে গেলে কিছু ভুল-ভ্রান্তি হয়ই। কিন্তু মানুষকে যাতে বিরোধীরা ‘বিভ্রান্ত’ করতে না পারে, তার জন্য তাঁদের দলের নেতাদের তৎপর হতে হবে। বুথ স্তরে মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে।

বিহারের ঘরোয়া আলাপচারিতার মধ্যেও অনুপ্রবেশের জেরে জনবিন্যাসের বদল নিয়ে আর এক প্রস্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, এই সমস্যা মোকাবিলায় ‘ডেমোগ্রাফিক মিশন’ অভিযানের তীব্রতা বাড়াবে কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলায় দলীয় মত বিনিময়েও তাঁর বক্তব্য, গোটা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনুপ্রবেশকারীরা সচেতন ভাবে বাংলার মাটিকে ব্যবহার করে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘অনুপ্রবেশ-বিরোধী অবস্থান থেকে মোদী সরকার কোনও ভাবেই পিছু হটবে না।’’

সূত্রের খবর, এর পাশাপাশি বাংলায় কর্মসংস্থানের অভাব, শিল্প পরিকাঠামো, শিল্প সম্ভাবনা ওপরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়েও রাজ্য নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়েছে। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেছেন, এই রাজ্যের শ্রমিকের হাতের হিরের কাজ বিশ্ববন্দিত। অথচ এই রাজ্যে সেই শিল্পের কোনও হাব নেই। বাংলাকে বিনিয়োগ-বান্ধব রাজ্য পরিণত করার কথার পাশাপাশিই তাঁর মত, পশ্চিমবঙ্গের সব যুবককে রাজ্যেই কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে তার জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

PM Narendra Modi Central Government Special Intensive Revision

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy