Advertisement
E-Paper

চার শিশু-সহ আট মৃত্যু: আটক বণিকবাড়ির বড় ছেলে চন্দ্রকান্ত! বাজি প্যাকেটে ভরার সময়ে বিস্ফোরণ? তদন্ত শুরু পুলিশের

বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের আট সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে চার শিশু, দু’জনের বয়স এক বছরেরও কম। ওই ঘটনায় বাড়ির দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:২৮
পাথরপ্রতিমার পুড়ে যাওয়া বাড়ি। সোমবার রাতে এই বাড়িতে বাজি বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়।

পাথরপ্রতিমার পুড়ে যাওয়া বাড়ি। সোমবার রাতে এই বাড়িতে বাজি বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। —নিজস্ব চিত্র।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায় বিস্ফোরণের ঘটনায় পরিবারের বড় ছেলে চন্দ্রকান্ত বণিককে আটক করল পুলিশ। সোমবার রাতে পাথরপ্রতিমার ঢোলাহাট থানা এলাকার দক্ষিণ রায়পুরের তৃতীয় ঘেরিতে চন্দ্রকান্তদের বাড়িতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। আগুন ধরে যায় বাড়িতে। তাতে চার শিশু-সহ পরিবারের আট সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। মৃত চার শিশুর মধ্যে দু’জনের বয়স এক বছরেরও কম। বণিক পরিবারের বাজির ব্যবসা রয়েছে। বাড়িতে মজুত রাখা বাজি থেকেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

চন্দ্রকান্তদের পরিবারে মোট ১১ জন সদস্য ছিলেন। দুর্ঘটনার সময়ে দুই ভাই এবং তাঁদের মা বাড়িতে ছিলেন না। ওই তিন জন বাদে গোটা পরিবারই শেষ হয়ে গিয়েছে বিস্ফোরণে। মৃত্যু হয়েছে পরিবারের বাকি সকলের। চন্দ্রকান্ত এবং তুষারের বাবা অরবিন্দ বণিক (৬৫), ঠাকুরমা প্রভাবতী বণিক (৮০) , চন্দ্রকান্তের স্ত্রী সান্ত্বনা বণিক (২৮), দুই সন্তান অর্ণব বণিক (৯) ও অস্মিতা বণিক (৮ মাস) এবং তুষারের দুই সন্তান অনুষ্কা বণিক (৬) এবং অঙ্কিত বণিকের (৬ মাস) ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। তুষারের স্ত্রী রূপা বণিককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে তাঁরও মৃত্যু হয়।

ঘটনার পরে বণিক পরিবারের দুই ভাই চন্দ্রকান্ত এবং তুষারের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে ঢোলাহাট থানা। ঘরে বিপজ্জনক বস্তু মজুত রাখা, অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা-সহ মোট ছ’টি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। দমকল আইনেও মামলা রুজু হয়েছে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। চন্দ্রকান্ত এবং তাঁর ভাই তুষার বর্তমানে গ্রামেই রয়েছেন। চন্দ্রকান্তকে আটক করা হলেও তাঁকে এখনও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। আপাতত গ্রামে পুলিশের নজরদারির মধ্যেই রয়েছেন চন্দ্রকান্ত।

গ্রামবাসীদের একাংশের অনুমান, ওই বাড়িতে বাজি প্যাকেটে ভরার সময়েই কোনও ভাবে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। এক দিন পরেই বাসন্তীপুজো। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, বাসন্তীপুজোর সময়ে বিক্রির জন্য বাজি মজুত করা হচ্ছিল। মঙ্গলবার সকালে বাড়ির পাশে একটি ঘর থেকে বাজি তৈরির মশলা এবং অন্য সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে। বাড়ির কাছে একটি মাঠেও বাজির মশলা পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে । যদিও কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে পুলিশের তরফে এখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। গোটা ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছেন ঢোলাহাট থানার পুলিশকর্মীরা। মঙ্গলবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদেরও ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বড় ভাই চন্দ্রকান্তই মূলত ব্যবসার বেশির ভাগ কাজকর্মের দেখভাল করতেন। তাঁকে সাহায্য করতেন তুষার। প্রশাসন সূত্রে খবর, বণিক পরিবারের বাজি তৈরির অনুমোদনপত্র (লাইসেন্স) রয়েছে। পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানাও সে কথাই জানিয়েছেন। তবে গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, অনুমোদনপত্র থাকলেও সেখানে অবৈধ বাজিও তৈরি হত। দুর্ঘটনার সময়ে পর পর কয়েক বার বিকট শব্দ শোনা গিয়েছে। এলাকাবাসীদের একাংশের দাবি, সেগুলি শব্দবাজি হতে পারে। যদিও বিধায়কের বক্তব্য, বাড়িতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার ফাটার ফলে ওই শব্দগুলি হয়ে থাকতে পারে।

বিধায়ক জানিয়েছেন, বাড়ির কাছেই একটি জায়গায় চন্দ্রকান্তেরা বাজি তৈরি করতেন। তবে বাড়িতেও বেশ কিছু বাজি মজুত ছিল বলে জানিয়েছেন বিধায়ক। তাঁর অনুমান, বাড়ি থেকেই বাজি বিক্রি করতেন চন্দ্রকান্তেরা। তবে বসতি এলাকায় কী ভাবে বাজি মজুত করা হচ্ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীদের একাংশ। পুলিশ এবং প্রশাসনের নজরদারি কতটা চলত, তা নিয়েও সংশয় জেগেছে তাঁদের মনে।

Pathar Pratima Fire Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy