Advertisement
E-Paper

ভেঙেছে কজওয়ে, মৃত্যু রেলসেতুতে

নদী পারাপারের কজওয়ের একাংশ বানের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে। পাশের রেলসেতু দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হল এক বৃদ্ধার। বুধবার সকালে বাঁকুড়ার ভাদুল ও সুর্পানগরের মধ্যে দ্বারকেশ্বর নদের উপর রেলসেতুতে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০২
হুঁশ নেই। বাঁকুড়ার সুর্পানগরে রেলসেতুতে তখনও পড়ে দেহটি। পাশ কাটিয়েই চলছে বিপজ্জনক পারাপার।—অভিজিৎ সিংহ

হুঁশ নেই। বাঁকুড়ার সুর্পানগরে রেলসেতুতে তখনও পড়ে দেহটি। পাশ কাটিয়েই চলছে বিপজ্জনক পারাপার।—অভিজিৎ সিংহ

নদী পারাপারের কজওয়ের একাংশ বানের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে। পাশের রেলসেতু দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হল এক বৃদ্ধার। বুধবার সকালে বাঁকুড়ার ভাদুল ও সুর্পানগরের মধ্যে দ্বারকেশ্বর নদের উপর রেলসেতুতে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তবে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতার পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি বাঁকুড়া রেলপুলিশ। মৃতার বয়স আনুমানিক ৬০ বছর।

ঘটনা হল দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে অবস্থিত সুর্পানগর, বীরবাঁধ, বালিয়াড়া, সোনাতপলের মতো বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিদিন জীবিকার টানে বাঁকুড়ায় আসেন। নদীতে জল থাকলে দ্বারকেশ্বর পার হতে সুর্পানগর-ভাদুল রেল সেতুর উপরই তাঁরা নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা যাতায়াত করেন।

এর আগেও বেশ কয়েকবার এই সেতু পারাপার করতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে কয়েকজনের। বছর দশেক আগে ২০০৫ সালে এই সেতুর উপরই ঘটে গিয়েছিল এক ভয়ানক দুর্ঘটনা। যার স্মৃতি এখনও টাটকা এলাকার মানুষজনের। সে বার দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে পিকনিক করতে আসা বাঁকুড়া শহরের আশ্রমপাড়ার একদল তরুণ-তরুণী অ্যাডভেঞ্চারের টানে ওই রেল সেতুতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। কয়েকজন ট্রেনে কাটা পড়ে। কয়েকজন ভয়ে রেল সেতু থেকে নদে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচতে গিয়ে চোট পেয়ে মারা যান।

লাগাতার ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা এড়াতেই ভাদুল ও সুর্পানগরের মাঝে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয় গত কয়েক বছর। তবে স্থায়ী সমাধান চেয়ে দ্বারকেশ্বর নদে সংযোগকারী সেতুর দাবি তুলে আসছিলেন এলাকাবাসী। চলতি বছরেই সেই দাবি মেনে নিয়ে কজওয়ে গড়ে দেয় সেচ বিভাগ। কজওয়ে গড়ার পরে কয়েক মাস ওই রেলসেতুতে গ্রামবাসীদের যাতায়াত অনেকটাই কমেছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন। তবে টানা নিম্নচাপে নদে বন্যার জেরে সম্প্রতি সেই কজওয়ের সংযোগকারী রাস্তা ভেঙে যায়। তারপর থেকে কিছু মানুষ জল পেরিয়ে পারাপার করলেও অনেকে এখনও দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই রেল সেতুর উপর দিয়ে বাঁকুড়ায় যাতায়াত শুরু করেছেন। এ দিন দুর্ঘটনার পরেও এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে অনেকে ওই সেতু দিয়েই যাতায়াত করছেন।

বীরবাঁধের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর রামরেণু আচার্য, শঙ্কর বাউরি বলেন, “কাজের জন্য আমাদের বাঁকুড়ায় দৈনিক আসতেই হবে। না হলে পরিবার চলবে না। রেলসেতু ধরে দ্বারকেশ্বর পার না হলে আমাদের অন্তত ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে শহরে আসতে হবে। আমরা নিরুপায়।” একই কথা বলছেন বালিয়াড়ার বাসিন্দা সমীর দাস, রূপবান দাসরাও। তাঁদের আক্ষেপ, “কজওয়ে হওয়ার পরে দ্বারকেশ্বর পার হওয়ার স্থায়ী সমাধান হয়েছিল বলেই আমরা ভেবেছিলাম। কিন্তু সেই কজওয়ে তো টিকল না। নদের জল এখন কমে গিয়েছে। কিন্তু প্রশাসন এখনও সেতুর রাস্তা গড়ে দেয়নি।” ফলে রেলপথেই তাঁদের পারাপার করতে হচ্ছে।

তবে এ দিনের দুর্ঘটনা ঠিক কী ভাবে ঘটেছে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি জিআরপি। জিআরপি-র প্রাথমিক ভাবে অনুমান, সকালের আদ্রা থেকে খড়্গপুর যাওয়ার লোকাল ট্রেনে কাটা পড়েছেন ওই প্রৌঢ়া। রেললাইন পার হতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করছে জিআরপি। যদিও এই ঘটনার পরে ফের দ্রুত ভাদুল-সুর্পানগর কজওয়ের রাস্তা মেরামতির দাবি তুলছেন স্থানীয় মানুষজন। জেলা সেচ দফতরের এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অশ্বিনীকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘সেতুটির রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। শীঘ্রই তা চালু করে দেওয়া হবে।’’

Causeway death Rail bridge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy