E-Paper

প্রভাতের ছাদ ঢালাই পড়শি মেহেবুবদের

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, সরকারি আবাস প্রকল্পে বাড়ি তৈরির কাজ চললেও ছাদ হওয়ার আগেই প্রভাতের বাবা বছর সাতেক আগে মারা যান।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫২
প্রভাত দাসের বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের তদারকিতে সালাউদ্দিন শেখ, মেহবুব আলমেরা।

প্রভাত দাসের বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের তদারকিতে সালাউদ্দিন শেখ, মেহবুব আলমেরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

বৃষ্টিতে বাড়ির ভিতরে হাঁটু সমান জল জমে আছে। মাথার উপরের ছাদ নেই। বৃষ্টিতে ত্রিপল ফুটো হয়ে অঝোরে জল পড়ে ঘরে। প্রতিবেশী শারীরিক প্রতিবন্ধী হিন্দু যুবক ও তাঁর পরিবারের এই দুর্ভোগ দেখে তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন গ্রামের ইমাম, মোয়াজ্জেম, এলাকার মুসলিম যুবকেরা।

সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির নজির রেখে নিজেরাই চাঁদা তুলে প্রভাত দাস নামে ওই যুবকের বাড়ির ছাদ ঢালাই করিয়ে দিলেন সালাউদ্দিন শেখ, মেহবুব আলমেরা। শনিবার, জন্মাষ্টমির দিনেই নলহাটি ২ ব্লকের ভদ্রপুর পঞ্চায়েতের কাঁটাগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রভাতের বাড়িতে পূজার্চনার পরে এই ছাদ ঢালাইয়ের কাজের সাক্ষী থাকলেন গ্রামবাসী। পুরো ঢালাইয়ের কাজের তদারিকতেও ছিলেন গ্রামের মুসলিম বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, সরকারি আবাস প্রকল্পে বাড়ি তৈরির কাজ চললেও ছাদ হওয়ার আগেই প্রভাতের বাবা বছর সাতেক আগে মারা যান। এর পর থেকে আর ছাদ তৈরি করা হয়ে ওঠেনি দুঃস্থ ওই পরিবারের। বাইরে কোনও কাজ করতে পারেন না প্রভাত। কোনও মতে বাড়িতে বসে জুতো সেলাই করেন। সে কাজ করে যা সামান্য আয় হয়, তা দিয়েই মা, স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে সাত জনের সংসার চালাতে হয় প্রভাতকে। সম্প্রতি অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে ত্রিপল ফেটে বাড়ির ঘরের ভিতরে জল জমে যায়।

কাঁটাগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মৌলবী সালাউদ্দিন শেখ জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবারটি গ্রামে বাস করছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ঘরে জল জমে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন চরম দুর্দশায় পড়েছেন। তাই তাঁদের মনে হয়েছে, পাশে দাঁড়ানো উচিত। সালাউদ্দিনের কথায়, ‘‘ওঁদের দুর্ভোগ দেখে আমাদের মনে হয়েছে, কিছু একটা করা দরকার। তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন একত্রিত হয়ে মানবিকতার খাতিরেই প্রভাতের বাড়ির অসমাপ্ত ছাদ ঢালাই করিয়ে দিয়েছি। গ্রামের হিন্দু-মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব রাখার বার্তাও দেওয়া হল।’’

গ্রামের বাসিন্দা মেহেবুব আলম বলেন, ‘‘প্রভাতদের মাথার ছাদ না হওয়ায় খুবই দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটছিল ওদের। দেখে কষ্ট হচ্ছিল। তাই আমরাই উদ্যোগী হলে ওর বাড়ির ছাদ ঢালাই করে দিলাম।’’ মেহেবুবের সংযোজন, ‘‘বর্তমানে হিন্দু-মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ বিভেদ আনার চেষ্টা করছেন, সম্প্রীতিকে নষ্ট করার চক্রান্ত চলছে। আমরা নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার বার্তা দিয়েই ছাদ ঢালাই করিয়েছি।’’

প্রভাত জানালেন, টানা বৃষ্টিতে ছাদহীন বাড়িতে তিন নাবালিকা কন্যা, বয়স্ক মা ও স্ত্রীকে নিয়ে কার্যত নিদ্রাহীন ভাবে দিন কাটিয়েছেন। বাড়ির ভিতরে এখনও জল জমে আছে। সেই জল বালতি ও মগের সাহায্যে রোজ বার করতে হচ্ছে। প্রভাতের কথায়, ‘‘জুতো সেলাইয়ের কাজ করে সব দিন রোজগার হয় না। বাড়ির ছাদ ঢালাই করার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই। এই অবস্থায় মুসলিম প্রতিবেশীরা যা করলেন, তাতে ওঁদের কৃতজ্ঞতা জানানোরও ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। ওঁদের এই ঋণ আমি আজীবন মনে রাখব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

nalhati

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy