বুকভরা স্বপ্ন ও ইচ্ছেশক্তির বলে ওরা এবার মাধ্যমিকের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে। ওরা মানে লাভপুর ব্লকের বিপ্রটিকুরী গ্রামের রাহুল ওরাং ও মালিগ্রামের রঞ্জিত বাগদি। ওরা দু’জনেই জন্ম থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন। তারপরেও অদম্য জেদে ভর করে প্রাথমিক থেকে একের পর এক শ্রেণি পেরিয়ে দু’জনেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার আগে চিন্তা ও ভয় রয়েছে দু’জনের মনেই। তবে সে সব উপেক্ষা করে মাধ্যমিকে ভাল ফল করার আকাঙ্ক্ষায় পড়াশোনায় ডুব দিয়েছে তারা। যথাসম্ভব সহযোগিতা করছেন শিক্ষকেরাও। পাঠ্য বিষয় ও তার আলোচনা রেকর্ড করে দেওয়া হয়েছে দুই পরীক্ষার্থীকে। সেগুলি শুনে শুনে এবং ব্রেল পদ্ধতিতে পাঠ্য বই পড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
সিউড়ির অরবিন্দ ইনস্টিটিউট ফর সাইটলেসের পড়ুয়ারা গত কয়েক বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় নজরকাড়া ফল করেছে। এবার সেই ফলাফলকে অতিক্রম করে নতুন নজির গড়তে চায় দু’জনেই। ১৯৯০ সালে সিউড়ির ডাঙালপাড়ায় দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের জন্য স্থাপিত হয় এই শ্রীঅরবিন্দ ইন্সটিটিউট ফর সাইটলেস। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে বহু দৃষ্টিহীন পড়ুয়া এখানে পড়াশোনা করতে আসেন। প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর ছাড়পত্র রয়েছে এই স্কুলের। নবম-দশম শ্রেণির দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা সিউড়ি শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠে ভর্তি হয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়, তবে তাদের পড়ানোর দায়িত্বও রয়েছে এই স্কুলের শিক্ষকদের উপরেই। এ বছর স্কুলের দুই ছাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ দাস জানান, পড়ুয়াদের জন্য ব্রেল পদ্ধতিতে লেখা পাঠ্যবই রয়েছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই তাদের প্রস্তুতিতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য প্রত্যেকটি ক্লাস অডিয়ো রেকর্ড করে তাদের দেওয়া হয়েছে। অডিয়ো প্লেয়ার যন্ত্রের যখন প্রয়োজন সেই ক্লাসগুলি চালিয়ে নিজেদের প্রস্তুতি সারছে পরীক্ষার্থীরা।
সন্দীপ দাস বলেন, “স্কুলের শিক্ষকের সংখ্যা ও পাঠ্য বইয়ের সংখ্যা কম। তবে তারই মধ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পরীক্ষার্থীরা। গত কয়েক বছর আমাদের স্কুল থেকে মাধ্যমিকে বেশ ভাল ফলাফল হয়েছে। এবারও সেই ধারা বজায় রাখতে সচেষ্ট তারা।”
রাহুল ও রঞ্জিতের কথায়, তারা দু’জনে এক সঙ্গেই হস্টেলে ও শ্রেণিকক্ষে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বই ও রেকর্ডিং ছাড়াও প্রয়োজনমতো তারা শিক্ষকদের সহযোগিতাও পাচ্ছে।
রাত পেরোলেই আগামিকাল, সোমবার থেকে বীরভূম জেলা স্কুলে শুরু হবে এই দু’জনের মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রতি বছরের মতো এবারও পড়ুয়াদের যাতায়াতের দায়িত্ব নিয়েছে প্রশাসনই। প্রথম দিন সদর মহকুমাশাসক নিজে উপস্থিত থেকে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলেও জানিয়েছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)