Advertisement
E-Paper

সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, পিটিয়ে খুন দাদাকে

সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে লাঠি, কুড়ুল দিয়ে দাদাকে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। বীরভূমের কাঁকরতলার শনিবার রাতের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম নির্মল লাহা (৪০)। তাঁর স্ত্রী ছন্দাদেবী দুই দেওর এবং এক জায়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে খুনের লিখিত অভিযোগ করছেন। অভিযুক্তরা পালাতক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৮:১০
শেষ বার। কাঁকরতলায় নিহত নির্মল লাহার দেহ আগলে রয়েছেন স্ত্রী ছন্দাদেবী। সিউড়ি হাসপাতালের মর্গের সামনে। ছবি:তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

শেষ বার। কাঁকরতলায় নিহত নির্মল লাহার দেহ আগলে রয়েছেন স্ত্রী ছন্দাদেবী। সিউড়ি হাসপাতালের মর্গের সামনে। ছবি:তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে লাঠি, কুড়ুল দিয়ে দাদাকে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। বীরভূমের কাঁকরতলার শনিবার রাতের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম নির্মল লাহা (৪০)। তাঁর স্ত্রী ছন্দাদেবী দুই দেওর এবং এক জায়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে খুনের লিখিত অভিযোগ করছেন। অভিযুক্তরা পালাতক। তাঁদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

এ দিন এলাকায় গিয়ে জানা গেল, খয়রাশোলের বড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে থাকা শিরা গ্রামে লাহাদের পরিবারিক বিবাদের সঙ্গে পরিচিত গ্রামের বাসিন্দারাও। অশান্তির কারণে অনেকেই পরিবারটিকে এড়িয়ে চলতেন। শনিবার রাতে বড় ভাই যে খুন হয়ে গিয়েছেন, সেই বিষয়টিই প্রথমে প্রতিবেশীরা বুঝতে পারেননি। নির্মলের মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও পুলিশ এসে রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করতে সব জানাজানি হয়।

পরিবার সূত্রে খবর, প্রতিবেশী ছন্দাকে বছর কুড়ি আগে বিয়ে করেন নির্মল। বিয়ের পর ১০-১২ বছর মহারাষ্ট্রে কাটান তিনি। রোজগারের টাকায় বছর তিনেক আগে নতুন বাড়িও করেন। তার দুটি ঘরে দুই ভাইকে থাকতে দিলেও ইতি পড়েনি বিবাদে। এ দিকে, বাড়ি ফিরে বর্ধমান জেলায় ওয়েলডিং মিস্ত্রির কাজে যেতে শুরু করেন নির্মল। গ্রামে ঢোকার মুখে একটি চা তেলেভাজার দোকানও করেন। তবে দোকান সামলাতেন স্ত্রী ছন্দাদেবীই।

পড়শিদের দাবি, সব মিলিয়ে দুই ভাই শ্যামল এবং বিদ্যুৎ অর্থনৈতিক ভাবে দাদার থেকে পিছিয়ে পড়েন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘দাদার উন্নতি মেনে নিতে পারছিলেন না দুই ভাই। সম্পত্তি তো বটেই, দোকান নিয়েও ভাইয়ে-ভাইয়ে বিবাদ শুরু হয়।’’ কাঁকরতলা থানা সূত্রের খবর, ওই বিবাদ মেটাতে বেশ কয়েকবার পুলিশকেও আসতে হয়েছে। নির্মলের বড় মেয়ে বকুল লাহার বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রাম ভাবানীগঞ্জে। ওঁর শ্বশুর দুর্যোধন ঘোষকে ঘটনার পরই ফোন করে সব কথা জানান ছন্দাদেবী। সেই দুর্যোধনবাবুও বলছেন, ‘‘সম্পত্তি নিয়ে গণ্ডগোলেই এই হত্যাকাণ্ড।’’

রবিবার সকালে শিরা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, নির্মলদের দরজায় তালা ঝুলছে। তালাবন্ধ দুই ভাই শ্যামল ও বিদ্যুতের ঘরও। সামনেই নির্মলের শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ ছন্দাদেবীর বাপেরবাড়ি। সেখানেও কেউ ছিলেন না। নির্মলদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গলির মুখেই মাটিতে চাপচাপ রক্তের দাগ। গ্রামে পুলিশি টহল। পড়শিদের থেকে জানা গেল, রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ পুলিশ এসে রক্তাক্ত নির্মলকে খয়রাশোল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা। রবিবার সকালে সিউড়ি হাসপাতালে ময়না-তদন্ত হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের মাথায় ও দুই পায়ে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন ছিল।

কী নিয়ে বিবাদ?

সিউড়ি মর্গের সামনে ছন্দা জানান, গ্রামে একটি পুকুরে তাঁদের ভাগ আছে। শনিবার সকালে সেখানে মাছ ধরা হয়। সেই মাছের ভাগ দেওয়রা দেননি বলে অভিযোগ ছন্দাদেবীর। ভাইয়ের কেন এমনটা করল, রাতের বেলা ফিরে এসে সে কথাই জানতে গিয়েছিলেন নির্মল। ছন্দার অভিযোগ, ‘‘সেই নিয়ে কথাকাটির সময় আমার স্বামীর তৈরি যে ঘরগুলিতে ওদের থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই ঘরে তালা লাগিয়ে দেন। তখনই ওরা (শ্যামল, তাঁর স্ত্রী সুলেখা এবং বিদ্যুৎ) এসে আমার স্বামীকে লাঠি, কুড়ুল দিয়ে মারতে থাকে। লুটিয়ে পড়েন স্বামী।’’ সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ও বেয়াইকে খবর দেন তিনি। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি! নির্মলবাবুকে বাঁচাতে গিয়ে অল্পবিস্তর জখম হয়েছেন ছন্দাদেবীও।

Property Dispute Beaten to Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy