E-Paper

এক পায়ে ভর করেই বাড়ি রং করেন নেপাল

নিজের গ্রামে তো বটেই খয়রাশোলের বিভিন্ন গ্রাম এমনকী, পাশের রাজনগর ব্লকেও রঙের কাজ করতে ছুটে যান নেপাল। এখনও মানুষ অভিজ্ঞ ওই রং মিস্ত্রির তুলির টানে ভরসা রাখেন।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৭
এক পায়ে ঘর রং করছেন নেপাল দাস। খয়রাশোলের বাবুইজোড় গ্রামে।

এক পায়ে ঘর রং করছেন নেপাল দাস। খয়রাশোলের বাবুইজোড় গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

আট বছর আগে পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ডান পা খোয়াতে হয়েছিল তাঁকে। কার্যত বিছানায় কেটে গিয়েছে তিন বছর। দৈনন্দিন অনেক কাজেই সাহায্য নিতে হত অন্যদের। কিন্তু অসহায়তার কাছে দমে না গিয়ে ফের নিজের কাজে ফিরেছেন খয়রাশোলের বাবুইজোড় গ্রামের বাসিন্দা বছর তিপান্নর রং মিস্ত্রি নেপাল দাস। এক পায়েই অন্যের স্বপ্নকে রঙিন করে তুলছেন তিনি।

ক্রাচে ভর দিয়ে চলাফেরা। কিন্তু দ্বিতল বা ত্রিতল বাড়ি রং করার জন্য তৈরি উঁচু বাঁশের মাচা বা মইয়ে শুধু উপরে উঠে যাওয়াই নয়, এক পায়ে দিব্যি রংও করে চলেছেন ওই প্রৌঢ়। তাঁর কথায়, “উপায় কী, পেট যে মানবে না। আমার একটা পা নেই, কাজের সময় আর এটা নিয়ে ভাবি না।”

জানা গিয়েছে, নিজের গ্রামে তো বটেই খয়রাশোলের বিভিন্ন গ্রাম এমনকী, পাশের রাজনগর ব্লকেও রঙের কাজ করতে ছুটে যান নেপাল। এখনও মানুষ অভিজ্ঞ ওই রং মিস্ত্রির তুলির টানে ভরসা রাখেন। ওঁর দুই ছেলেও রং মিস্ত্রি (তবে বাবা-মায়ের থেকে পৃথক থাকেন ওঁরা) মূলত ওঁদের সঙ্গেই যান নেপাল। তিনি জানান, নিজে কাজের বরাত পেলে টাকার অঙ্ক বেশি থাকে, সেখানে ছেলেরা কাজ ধরলে তাঁদের থেকেই দৈনিক মজুরি পান। তাতেই স্বামী স্ত্রীর সংসার চলে যায়।

সম্প্রতি এক দুপুরে বাবুইজোড় গ্রামের বাসিন্দা পরাধীন গড়াইয়ের বাড়ি রং করছিলেন নেপাল। পরাধীন বলেন, “বাড়ি রং করাতে নেপালের অভিজ্ঞতায় ভরসা করি। না থাক ওঁর একটি পা।” একই অভিমত পবিত্র গড়াইয়ের। তাঁর বাড়ির রঙের কাজ কিছুদিন আগেই শেষ করেছেন ওই রং মিস্ত্রি। পুজোর পরে আরও তিনটি বাড়িতে নতুন রঙের প্রলেপ পড়েছে তাঁরই হাতে।

মাত্র ষোলো বছর বয়সে বিয়ে, তিন সন্তান রয়েছে তাঁর। সেই দশ-এগারো বছর বয়স থেকে বাড়ি রঙের কাজ শিখে দাপটের সঙ্গে কাজ চালাচ্ছিলেন তিনি। গ্রামের রাস্তায় একটি গাড়ি তাঁর ডান পা পিষে দিয়ে চলে যায়। ঊরু থেকে কেটে বাদ দিতে হয় তাঁর পা। আগেই মেয়ের বিয়ে আগেই দিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার কিছুদিন পরেই পৃথক হয়ে যান ছেলেরা। তার পরের তিন বছর দুঃসহ কেটেছে। নেপাল বলেন, “আয় না করলে খেতে পাব না। এই ভাবনা থেকে ক্রাচে ভর দিয়েই ফের কাজ নামি। খুব কষ্ট হত, এখন সব সয়ে গিয়েছে।”

তবে, নিজের প্রতি ভরসা থাকলেও, কতদিন এ ভাবে টানতে পারবেন সেটা নিয়ে একটা ভয় কাজ করে। মাটির ঘরে প্রায় সমবয়সি স্ত্রী ছবিরানিকে নিয়ে থাকেন তিনি। কিন্তু বেশি দিন এ ভাবে চলবে না সেটা টের পাইয়ে দেয় মাঝে মধ্যে তৈরি হওয়া পায়ের যন্ত্রণা। প্রতিবন্ধী শংসাপত্র রয়েছে। কিন্তু সরকারি ভাতার জন্য আবেদন করেননি এখনও, করতে হবে। যদি একটি ট্রাই সাইকেল থাকত, তা হলে তাঁর চলাফেরাটা একটু সহজ হত। কারও প্রতি কোনও অনুযোগ নেই তাঁর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

purulia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy