Advertisement
E-Paper

ভিন্‌ রাজ্যে কারা কাজে, নেই হিসেব

মানবাজার থানার কাশিডি ও বোরো থানার ওলগাড়া গ্রামের ১৩ জন কিশোর ও যুবক রাজস্থানের জয়পুরে কাজে গিয়েছিলেন। সেখানে নিয়মিত খেতে না পাওয়া, হাড়ভাঙা পরিশ্রমের জেরে বেশির ভাগ শ্রমিক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৫

পেট চালাতে ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যাচ্ছে ছেলেরা। কিন্তু সেখানে তারা কি আদৌ পৌঁছোচ্ছে? কাজ যদি বা পায়, শ্রমিকদের জন্য সব রকম রক্ষাকবচ কি তারা পাচ্ছে? জানেন না পরিজনেরা। কত জন কোথায়, কী কাজে গিয়েছে, সে হদিসও নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যাওয়া কিছু ছেলের পরিণতিই এই বাস্তবকে ফের সামনে তুলে এনেছে।

ঘটনা ১: চেন্নাইয়ে কাজ পাইয়ে দেবে বলে বান্দোয়ানের ঘাটিউলি গ্রামের নাবালক সঞ্জয় শবরকে এলাকার যুগিডি গ্রামের এক ব্যক্তি ২০১৬ সালের জুন মাসে নিয়ে যান। সঞ্জয়ের মায়ের অভিযোগ, তার পর থেকে তিনি আর ছেলের কোনও খবর পাননি। এমনকী যে ব্যক্তি নিয়ে গিয়েছিলেন, গ্রামে গিয়ে তাঁর খোঁজও তিনি পাননি। চলতি বছরের ১৩ জুলাই তিনি থানায় এ নিয়ে অভিযোগ জানান।

ঘটনা ২: মানবাজার থানার কাশিডি ও বোরো থানার ওলগাড়া গ্রামের ১৩ জন কিশোর ও যুবক রাজস্থানের জয়পুরে কাজে গিয়েছিলেন। সেখানে নিয়মিত খেতে না পাওয়া, হাড়ভাঙা পরিশ্রমের জেরে বেশির ভাগ শ্রমিক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে অসুস্থ অবস্থায় ট্রেনে বাড়ি ফেরার পথে নিতাই শবর নামে ১৩ বছরের এক বালক মারা যায়। তা নিয়ে কম হইচই হয়নি। তা নিয়ে এখনও মামলা চলছে।

ঘটনা ৩: বরাবাজারের এক যুবক কর্ণাটকে কাজ করতে গিয়েছিলেন। পরে খবর আসে দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ওই যুবকের দেহ বরাবাজারে ফিরিয়ে আনা যায়নি। পরিবারের লোকেরা না ওই নির্মাণ সংস্থা, না বিমা সংস্থা, কোনও তরফে শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি।

এই ঘটনাগুলি আলাদা হলেও এ গুলি সব এক সুতোয় বাঁধা। বাইরে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের মতোই, তাঁদের রোজগারের উপরে নির্ভরশীল লোকজনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়ে গিয়েছে। অথচ জেলায় শ্রম দফতর থাকলেও, তাঁদের কাছে এ নিয়ে কোনও খবর থাকে না।

পুরুলিয়া জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর অশোক মাহাতো বলেন, ‘‘শিশু শ্রম অপরাধ। তা সত্ত্বেও কিছু সংস্থা কম মজুরিতে শিশুদের শ্রমিক হিসাবে কাজে লাগাচ্ছে। ভিন্‌ রাজ্যে শিশু শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে গিয়ে ঝামেলায় জড়িয়েছে, এ রকম অনেক নজির রয়েছে।’’

জেলার এক পদস্থ পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘সাধারণত ভিন্‌ রাজ্যের সংস্থাগুলি শ্রমিকদের যেখানে বাড়ি, সেখানকার থানার একটা শংসাপত্র চায়। যে সব ছেলে কাজে যাওয়ার আগে থানা থেকে সেই শংসাপত্র নিয়ে যান, তাঁদের কাছে সংস্থার ঠিকানা, ছেলেগুলির ফোন নম্বর পুলিশ সংগ্রহ করে রাখে। কিন্তু পরে সংস্থা পাল্টালে বা নিজেদের ফোন নম্বর পরিবর্তন করলে অনেকেই আর থানায় তা জানান না। এ ছাড়া, এমনও অনেক ছেলে রয়েছে, যাঁরা থানায় কোনও খবর না দিয়েই বাইরে কাজ করতে চলে যান। ফলে তাঁদের সম্পর্কে কোনও তথ্যই পুলিশের কাছে থাকে না।’’ এর ফলে সেই শ্রমিক কোনও দুর্ঘটনায় পড়লে বা সমস্যায় পড়লে পুলিশের পক্ষে কিছু করা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।

পুরুলিয়া জেলা সহকারী শ্রম মহাধ্যক্ষ চন্দ্রচূড় পান বলেন, ‘‘নিয়ম মাফিক ‘ইন্টারস্টেট মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার’ হিসাবে নিজের জেলায় এবং যেখানে থাকবেন সেই জেলাতে শ্রম দফতরের অফিসে শ্রমিকদের তাঁরা নাম নথিভুক্ত করতে হয়। কিন্তু কেউ এই নিয়ম মানেন না। তাই ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকেরা কেউ দুর্ঘটনায় পড়ে মারা গেলে, আমাদের কাজ বেড়ে যায়। বাড়ি কবে গিয়েছিলেন, কোথায়, কোন সংস্থায়, কত দিন, কী হিসাবে কাজ করছিলেন, এই সব রিপোর্ট তৈরি করতে বেশ বেগ পেতে হয়। তাই নাম নথিভুক্ত না করে ভিন্‌ রাজ্যে যাওয়া শ্রমিকদের জন্য আমাদের কার্যত কিছুই করার নেই।’’

তাহলে এ নিয়ে প্রচার নেই কেন?

চন্দ্রচূড়বাবু দাবি করছেন, শ্রম দফতরের বিভিন্ন সভা বা শিবিরে ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যাওয়ার আগে নাম নথিভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়। তবে কর্মীর অভাবে এ নিয়ে আলাদা ভাবে প্রচার চালানো যাচ্ছে না।

ফলে ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকদের অনেকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছেই।

workers Bengal State
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy