E-Paper

কোভিড-চিন্তায় দোসর অকেজো অক্সিজেন প্ল্যান্ট

বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি নিজেই জানাচ্ছেন, অক্সিজেন প্ল্যান্টটি যেদিন বসানো হয়েছে, প্রায় সেদিন থেকেই অকেজো।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১৯
অক্সিজেন প্ল্যান্ট অকেজো সিউড়ি জেলা হাসপাতালে।

অক্সিজেন প্ল্যান্ট অকেজো সিউড়ি জেলা হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র।

অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য আস্ত প্ল্যান্ট বসানো হয়েছিল সিউড়ি জেলা হাসপাতালে। দু’বছর আগে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বসানো সেই প্ল্যান্ট শুরু থেকেই অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। দেশে ফের কোভিড উদ্বেগের সময় অকেজো অক্সিজেন প্ল্যান্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ওই অক্সিজেন প্ল্যান্ট কেন দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে তা নিয়ে হাসপাতালের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ অনেকে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সময় যখন অক্সিজেনের চূড়ান্ত অভাবে দেখা গিয়েছিল দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে, তখনই সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ওই প্ল্যান্টটি বসানো হয়েছিল। রোগীদের অনেকের ক্ষোভ, ‘‘হাসপাতাল রোগীদের জন্য অক্সিজেন লাগেই। সেখানে হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহে স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা থাকলেও তা কেন সক্রিয় করা যায়নি?’’

বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি নিজেই জানাচ্ছেন, অক্সিজেন প্ল্যান্টটি যেদিন বসানো হয়েছে, প্রায় সেদিন থেকেই অকেজো। তাঁর কথায়, ‘‘এ নিয়ে বহুবার রাজ্যকে জানানো হয়েছে। যে সংস্থা যন্ত্রটি বসিয়ে ছিল এবং যে সংস্থা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও সিউড়ি হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ৬১ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে প্ল্যান্ট বসানোর দায়িত্ব পেয়েছিল টিটাগড়ের একটি সংস্থা। সেটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল অন্য একটি নামী সংস্থা। কিন্তু প্ল্যান্ট চালু করার পর অক্সিজেন উৎপাদিত হলেও যে মাত্রা রোগীর কাজে লাগে (৯২শতাংশ) সেটা তোলা যাচ্ছিল না বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।

হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের দাবি, সংস্থার তরফে প্রাথমিক ভাবে দাবি করা হয়েছিল সমস্যা হচ্ছে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায়। তবে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থা প্রকৃত সমস্যা খুঁজে বের করতে পারেনি। কারিগরি কোন সমস্যার জন্য এমনটা হচ্ছে তা সংস্থার তরফে স্পষ্ট করা হয়নি বলে অভিযোগ।

কর্মীদের অনেকে জানান, ওপ্ল্যান্টে বারবার কন্ডেন্সার পুড়ে যাচ্ছিল। আগুন লাগার উপক্রমও হয়েছিল। তার পর আর সেটিকে কাজে লাগানো হয়নি। প্ল্যান্ট চালু না থাকায় অক্সিজেনের ডি-টাইপ সিলিন্ডারের জন্য বহু টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে বলেও স্বীকার করেছেন কর্তৃপক্ষ। রোগীদের প্রশ্ন, যে সংস্থা প্ল্যান্ট তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেল, তাদের কেন তা সারাতে বাধ্য করা হবে না?

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন সারা মাসে জেলা হাসপাতালে হাজার তিনেক ডি টাইপ অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে। হাসপাতালে এমজিপিএস সিস্টেম (মেডিক্যাল গ্যাস পাইপলাইন সিস্টেম) চালু আছে। তার মাধ্যমে রোগীর শয্যার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় অক্সিজেন। কোভিডের সময় অক্সিজেনের ডি টাইপ সিলিন্ডারের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। সেই সমস্যা এখন নেই। কিন্তু অক্সিজেন উৎপাদন ব্যবস্থা চালু থাকলে সিলিন্ডার কিনতে হত না বলে আক্ষেপ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জন মণ্ডল বলছেন, ‘‘খারাপ লাগে এত টাকা ব্যয়ে তৈরি জিনিস পড়ে আছে। প্ল্যান্ট কাজ করলে পাইপলাইনেই অক্সিজেন সরবরাহ করা যেত হাসপাতালে। খরচও কমত।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suri Oxygen Plant

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy