Advertisement
E-Paper

চেয়ারেই বিতর্কিত সভাপতি

প্রশাসন বলছে, বোর্ড গঠন স্থগিত। অথচ সভাপতি হিসেবে শংসাপত্র পেয়েছেন দাবি করে পঞ্চায়েতে সমিতির সভাপতির চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লেন বরাবাজারের কংগ্রেস সদস্য রামজীবন মাহাতো!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২২
বিজেপি সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে চেয়ারে কংগ্রেসের রামজীবন। নিজস্ব চিত্র

বিজেপি সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে চেয়ারে কংগ্রেসের রামজীবন। নিজস্ব চিত্র

প্রশাসন বলছে, বোর্ড গঠন স্থগিত। অথচ সভাপতি হিসেবে শংসাপত্র পেয়েছেন দাবি করে পঞ্চায়েতে সমিতির সভাপতির চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লেন বরাবাজারের কংগ্রেস সদস্য রামজীবন মাহাতো! শুক্রবার এই ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে বরবাজারে। ঘটনাটি জেনে পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘উনি ঠিক কাজ করেননি। ওই পঞ্চায়েত সমিতির প্রথম সভা স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরেও তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির চেয়ারে বসতে পারেন না।’’ কেন আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, সে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল।

এ দিন বেলায় বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতিতে রামজীবনবাবু কয়েকজন বিজেপি সদস্য ও কর্মীদের নিয়ে যান। দরজা খোলা হতেই তাঁরা সভাপতির চেম্বারে ঢুকে পড়েন। সভাপতির চেয়ারে বসে পড়েন রামজীবনবাবু। তিনি দাবি করেন, ‘‘বুধবার এই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসাবে আমি নির্বাচিত হয়েছি। তাই দেরি না করে শুক্রবারই অফিসে চলে এলাম।’’ তিনি সদস্যদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করেন। চা খান। তাঁর সঙ্গে অফিসের কিছু কর্মীও দেখা করে যান বলে সূত্রের খবর। কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে রামজীবনবাবুরা চলে যান।

এই পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১৪, বিজেপি ১৩ ও কংগ্রেস ১টিতে জয়ী হয়। বুধবার বোর্ড গঠনের সময় বিজেপিকে সমর্থন করেন কংগ্রেসের রামজীবনবাবু। দু’পক্ষই সমান হয়ে যাওয়ায় লটারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিজেপির তরফে সভাপতি হিসাবে রামজীবনবাবুর নাম প্রস্তাব রাখা হয়। ওই পদে তৃণমূলের পক্ষে প্রস্তাব আসে প্রতুল মাহাতোর নাম। লটারি নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত।

বিজেপি সদস্যদের দাবি, লটারিতে রামজীবনবাবুর নাম ওঠে। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, লটারিতে ওঠা নাম লেখা কাগজটা প্রথমেই বিজেপি সদস্যেরা কেড়ে নেন। তা নিয়ে গোলমাল বাধে। প্রশাসন তাই বোর্ড গঠন স্থগিত করে দেয়। রামজীবনবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে জয়েন্ট বিডিও দেবাশিস বিশ্বাস সে দিন সভার পরেই আমাকে শংসাপত্র দিয়েছেন। ওই শংসাপত্রে আমাকে সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। সেই শংসাপত্রের ছবি এখন হাতে-হাতে ঘুরছে। সুতরাং আইনত বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আমিই।’’

যদিও জেলাশাসক এ দিন কলকাতা থেকে দাবি করেন, ‘‘সে দিন দুপুর ১টার সময় সভা স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ জারি হওয়ার পরে ওই সভায় গৃহীত কোনও সিদ্ধান্ত বা শংসাপত্রের বৈধতা নেই। জোর করে শংসাপত্র লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাই ওই সদস্যের আইনত সভাপতির চেয়ারে বসার অধিকার নেই।’’ যদিও রামজীবনবাবুর সঙ্গে বিজেপি সদস্যেরা দাবি করেন, ‘‘লটারিতে কোনও গোলমাল হয়নি। আর বোর্ড স্থগিত করার নির্দেশ যায় বুধবার সন্ধ্যায়। তার অনেক আগেই প্রিসাইডিং অফিসার শংসাপত্র দিয়েছেন।’’

ওই ঘটনার পর থেকেই বরাবাজার ব্লক অফিসের আধিকারিকেরা মন্তব্য করতে চাইছেন না। বিডিও শৌভিক ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার সকালেই পুরুলিয়া চলে যান। এ দিনও তিনি অফিসে ফেরেননি বলে ব্লক অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

তৃণমূলের বরাবাজার ব্লক কার্যকরী সভাপতি প্রতুল মাহাতোর দাবি, ‘‘বিজেপি একের পর এক আইন ভাঙছে। লটারির কাগজ ছিনিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে সভাপতির চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ছে! প্রশাসনের আইনি পদক্ষেপ করা উচিত।’’ এ প্রসঙ্গে জেলাশাসকের মন্তব্য, ‘‘বিডিও এই ঘটনা নিয়ে আমাকে রিপোর্ট দেওয়ার পর কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ করা সম্ভব দেখব।’’

প্রতুল বলেন, ‘‘গোলমালের আশঙ্কা থাকায় দলীয় কর্মীদের সমিতির কাছে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে ভরসা রাখি। তবে আমাদের সৌজন্যকে বিজেপি যেন দুর্বলতা না ভাবে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘ভোটের ফলই বলছে, বরাবাজারের মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তৃণমূল প্রশাসনকে দমিয়ে রেখে অনৈতিক কাজ করাতে পারে। কিন্তু, জনমতকে উপেক্ষা করলে ভুল করবে, সেটা যেন না ভোলে।’’

Politics Administration TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy