Advertisement
E-Paper

ভোট হবে কি, শঙ্কা লাভপুরে

সাধারণ মানুষ অবশ্য এই উতোরচাপান নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। লাভপুর ব্লক অফিস সংলগ্ন হোটেলের মালিক, হাটতলার এক বস্ত্র ব্যবসায়ী জানান— ‘ফলাফল যাই হোক না কেন, মানুষের মৌলিক অধিকারটুকু সুনিশ্চিত করা উচিত প্রশাসনের।’

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০৩
নজরদারি: রড, লাঠি, তরোয়াল নিয়ে রাজপথে জমায়েত। সোমবার লাভপুরে। নিজস্ব চিত্র

নজরদারি: রড, লাঠি, তরোয়াল নিয়ে রাজপথে জমায়েত। সোমবার লাভপুরে। নিজস্ব চিত্র

ভোটযুদ্ধে নামার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি লাভপুরের বড়গোগার বিজেপি বুথ কমিটির সভাপতি। পছন্দের দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ইচ্ছে ছিল দাঁড়কা স্বাস্থ্যকেন্দ্র লাগোয়া চা গুমটির দোকানদারের। তারও সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি।

মনোনয়নের খুটিয়ে দেখার পর ওই বিজেপি নেতার নাম বাদ গিয়েছে এমন নয়। চা–দোকানদারের হয়ে কেউ ছাপ্পা-ভোটও দেয়নি। কারণ অন্য। অভিযোগ, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে লাভপুর ব্লক এলাকায় কোনও ভোটই হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতের প্রতিটি আসনে শাসক দলের প্রার্থীরাই জেতেন।

লাভপুর এক সময় বাম দলের ‘লালদুর্গ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। লোকসভা, বিধানসভা এমনকী ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে বিরোধীদের কার্যত কোনও অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে। ২০১১ সালের নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থীকে হারিয়ে বিধানসভার আসন দখল করে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মনিরুল ইসলাম।

স্থানীয় সূত্রে খবর, মূলত তাঁর দাপটে ওই এলাকায় বিরোধীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। অভিযোগ, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীরা মনোনয়নপত্রই দাখিল করতে পারেননি। ১১টি পঞ্চায়েতের ১৪৭টি, পঞ্চায়েত সমিতির ৩২টি এবং জেলা পরিষদের ৩টি আসনে শাসক দল ও তার মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন। এমনকী ওই এলাকা থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে জেলা সভাধিপতি নির্বাচিত হন বিকাশ রায়চৌধুরী। সেই সময় বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আটকাতে লাভপুর ব্লক অফিস, বোলপুরের মহকুমা অফিস সংলগ্ন এলাকায় শাসক দল ‘আশ্রিত’ সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের জমায়েতের অভিযোগ ওঠে।

মনিরুল ইসলাম বর্তমানে অসুস্থ। এলাকার নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তাঁর এক সময়ের ‘রাজনৈতিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর প্রাক্তন সদস্য তথা তৃণমূলের বর্তমান সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান এবং ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী। সোমবার থেকেই তৃণমূল প্রার্থীদের মনোনয়ন-পর্ব শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এ বারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসন জেতার জন্য তৎপর হয়েছে তৃণমূল।

রবিবার সন্ধেয় বাবুপাড়ায় এক কর্মীর বাড়িতে নির্বাচনী বৈঠক চলাকালীন বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ওই অভিযোগ মানেননি। বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতার জন্য তৃণমূল বিরোধীদের চমকাতে শুরু করেছে। বিডিও অফিসের কাছে সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের ভিড় জমেছে। ঢালাও খানাপিনারও আয়োজন করা হয়েছে।’’ তাঁর নালিশ, নিজেদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বিরোধীদের ঘেঁষতে দেবে না বলেই এমন ছক কষা হয়েছে।

একই বক্তব্য সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা রামচন্দ্র ডোমেরও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলের কথা যত না বলা হয় ততই ভাল। যিনি জেলা সভাধিপতি হয়ে বসে রয়েছেন, তিনিই তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেননি। এ বারও সেই একই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওঁরা উন্নয়নের ঢাক পেটায়, তা কত বড় মিথ্যা সেটা এই প্রবণতা দেখেই বোঝা যায়। আসলে ওঁদের নিজেদের উপরই ভরসা নেই।’’

আব্দুল মান্নান অবশ্য এমন কথা মানছেন না। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন আর দলের কর্মী-সমর্থকেরা হাজির হবেন না, তাই কি হয়? তবে কেউই সশস্ত্র ছিলেন না। বিরোধীরা আসুন মনোনয়নপত্র দিতে। আমরা তাদের ফুলের মালা পড়িয়ে তা দাখিলের ব্যবস্থা করে দেব।’’ ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তীর সংযোজন, ‘‘বিরোধীরা যদি প্রার্থীই খুঁজে না পায় তা হলে আমরা কী করতে পারি?’’

সাধারণ মানুষ অবশ্য এই উতোরচাপান নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। লাভপুর ব্লক অফিস সংলগ্ন হোটেলের মালিক, হাটতলার এক বস্ত্র ব্যবসায়ী জানান— ‘ফলাফল যাই হোক না কেন, মানুষের মৌলিক অধিকারটুকু সুনিশ্চিত করা উচিত প্রশাসনের।’

Panchayat Election 2018 Three Phase Election Scuffle TMC BJP CPM Nomination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy