Advertisement
E-Paper

ঘুরছে শিল্পের চাকা, আশা বাজার জমার

প্রায় তলানিতে চলে যাওয়া শিল্পোৎপাদন ও বেচা-কেনাও বর্তমানে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামী কয়েকমাসে বাজার আরও জমার আশা নিয়ে এগোচ্ছে শিল্পাঞ্চল।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০৯
নতুন উদ্যমে কাজ শুরু হয়েছে বড়জোড়ার হাটআশুরিয়ার একটি কারখানায়। নিজস্ব চিত্র

নতুন উদ্যমে কাজ শুরু হয়েছে বড়জোড়ার হাটআশুরিয়ার একটি কারখানায়। নিজস্ব চিত্র

টানা লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উৎপাদন। তলানিতে ঠেকেছিল চাহিদা। তবে ফের ঘুরতে শুরু করেছে শিল্পের চাকা। পাল্টাচ্ছে পরিস্থিতি। বিশ্বকর্মা পুজোর সময়ে এমনই দাবি করে সুদিনের আশায় বুক বাঁধছেন বাঁকুড়ার বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলের শিল্পোদ্যোগীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বহিরাগত শ্রমিকদের বড় অংশই আবার কাজে ফিরেছেন। প্রায় তলানিতে চলে যাওয়া শিল্পোৎপাদন ও বেচা-কেনাও বর্তমানে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামী কয়েকমাসে বাজার আরও জমার আশা নিয়ে এগোচ্ছে শিল্পাঞ্চল।

বাঁকুড়া জেলা শিল্প আধিকারিক সমীরকুমার পান্ডা বলেন, ‘‘মে-জুন মাসে জেলার কারখানাগুলি চালুর সময়ে কিছুটা সমস্যা থাকলেও, বর্তমানে অবস্থা খুবই ভাল। আমরা নিয়মিত বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। উৎপাদন ও বেচা-কেনায় একটা স্থিতাবস্থা আসছে বলেই শিল্পমহল জানাচ্ছে।’’ বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের (শিল্প) যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর সরকার বলেন, “সদ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিল্পোদ্যোগীদের নিয়ে আমরা একটি বৈঠক করি। সেখানে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। সকলেই আশার কথা জানিয়েছেন। বরাত আসছে। উৎপাদনও বাড়ছে। বাজার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।” বড়জোড়ার হাটআশুড়িয়াতেই প্রবীরবাবুর পিচবোর্ডের কার্টন তৈরির কারখানা। যা বিভিন্ন সামগ্রীর প্যাকেজিংয়ে লাগে। প্রবীরবাবু জানান, পিচবোর্ডের কার্টন অত্যাবশ্যক পণ্য হওয়ায় লকডাউনেও তাঁর কারখানা চালু ছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমার কারখানায় প্রতি মাসে গড় উৎপাদন ছ’লক্ষ কার্টন। এপ্রিল মাসে তা নেমে যায় ৫০ হাজার, মে মাসে বেড়ে হয় এক লক্ষ, জুন ও জুলাই মাসে গড়ে আড়াই লক্ষ। অগস্ট মাসে ফের ছ’লক্ষে পৌঁছে যায়, যার বাজার মূল্য কম বেশি ৮০ লক্ষ টাকা।’’ প্রবীরবাবুর সংযোজন: “আমার কারখানায় তৈরি কার্টন মূলত খাদ্যদ্রব্য, দৈনন্দিন ব্যবহার্য প্রসাধনী বা বাড়ি পরিষ্কার করার সামগ্রী নির্মাণকারী সংস্থাগুলিতে যায়। তাই কার্টনের চাহিদা বাড়ছে মানে ওই সব সংস্থাগুলির মালপত্র বেচা-কেনাও বেড়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়।”

বড়জোড়ায় ঘুটগড়িয়ায় একটি প্রথম শ্রেণির প্লাস্টিকের চেয়ার, টেবিল-সহ নানা রকমের আসবাবপত্র নির্মাণকারী সংস্থার কারখানা রয়েছে। ওই কারখানার ম্যানেজার পঞ্চদেব গিরি জানান, লকডাউনে তাঁদের কারখানা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। বাজারে মালের চাহিদাও ছিল না। আনলক-পর্বে মাস দেড়েক হল পুরোদমে কারখানা চালু হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের স্বাভাবিক উৎপাদন গড়ে মাসে ৮০০ টন। এপ্রিল মাসে তা শূন্যে নেমে গিয়েছিল। মে মাসে বেড়ে হয় ২০০ টন, জুন মাসে ৪৮৬ টন, জুলাই মাসে ৫২৩ টন এবং অগস্ট মাসে ৬৫০ টন। দুর্গাপুজোর মরসুমে কেনা-বেচা আরও বাড়বে বলেই আমরা আশাবাদী।”

বড়জোড়ার ঘুটগড়িয়ার একটি ইস্পাতের ব্লেড তৈরির কারখানার ম্যানেজার সুজিত মহোতা জানান, লকডাউনে বাইরের শ্রমিকেরা ফিরে গিয়েছিলেন। আনলক-পর্বে স্থানীয় শ্রমিকেরা কাজ শুরু করলেও, বাইরের শ্রমিকদের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকায় প্রথমে সমস্যা হচ্ছিল। তবে বর্তমানে তাঁদের বড় অংশই ফিরে এসেছেন। ফলে, উৎপাদন অনেকটা স্বাভাবিক। বেচাকেনাও বাড়ছে। তিনি বলেন, “মাসে আমাদের গড় উৎপাদন ২০ হাজার টন। এপ্রিলে তা শূন্য থাকলেও জুন থেকে অগস্ট তিন মাসে ১৮ হাজার টন করে উৎপাদন হচ্ছে।’’

গত কয়েকবছরে বাঁকুড়া জেলায় বেশ কয়েকটি ছাই-ইট তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। বিষ্ণুপুরের একটি ছাই-ইট কারখানার মালিক শিবকুমার জালান জানান, শ্রমিকেরা ফিরতেই ফের ইট তৈরি শুরু হয়েছে। বাজারে চাহিদাও বাড়ছে।

বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক সুবিকাশ চৌধুরী বলেন, ‘‘এপ্রিল থেকে জুন লকডাউন থাকায় বাজারে ঘাটতি ছিল। তাই এখন বেচা-কেনা ও উৎপাদন বেড়েছে। এটাই ‘ট্রেন্ড’ কি না জানতে আরও ক’মাস অপেক্ষা করতে হবে। লকডাউনে যে হারে মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অর্থনীতির উপরে তার প্রভাব কয়েক মাসে বোঝা যাবে।’’

pandemic bankura Industry
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy