Advertisement
E-Paper

বালির গাড়ি পিষে দিল কিশোরকে

বিষ্ণুপুরের সেই অযোধ্যা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রের প্রাণও কেড়ে নিল বেপরোয়া বালির গাড়ি। সোমবার দুপুরের ওই ঘটনায় তোলপাড় হল বিষ্ণুপুর ব্লকের লোহালাড়া গ্রাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
মার: বিক্ষোভকারীদের উপরে পুলিশের লাঠি। সোমবার দুপুরে বিষ্ণুপুর ব্লকের জয়কৃষ্ণপুর-নাবান্দা রাস্তায় লোহালাড়া গ্রামের কাছে। নিজস্ব চিত্র

মার: বিক্ষোভকারীদের উপরে পুলিশের লাঠি। সোমবার দুপুরে বিষ্ণুপুর ব্লকের জয়কৃষ্ণপুর-নাবান্দা রাস্তায় লোহালাড়া গ্রামের কাছে। নিজস্ব চিত্র

বছর চারেক আগে বালির গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল স্কুলের প্রধান শিক্ষকের। বিষ্ণুপুরের সেই অযোধ্যা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রের প্রাণও কেড়ে নিল বেপরোয়া বালির গাড়ি। সোমবার দুপুরের ওই ঘটনায় তোলপাড় হল বিষ্ণুপুর ব্লকের লোহালাড়া গ্রাম। ভাঙচুর হল গাড়ি। চলল কাঁদানে গ্যাস। জখম হয়েছেন ৮ জন পুলিশকর্মী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে রাধানাগর স্কুলে বিষ্ণুপুরের অযোধ্যা হাইস্কুলের ছাত্রদের সবুজসাথীর সাইকেল বিলি করা হচ্ছিল। সেই সাইকেল নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে দুপুর দেড়টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিল নবম শ্রেণির ছাত্র দামোদরপুর গ্রামের অনেশ রায় (১৫)। জয়কৃষ্ণপুর-নাবান্দা রাস্তায় লোহালাড়া গ্রামের কাছে একটি বাঁকের মুখে জল খেতে দাঁড়িয়েছিল তারা। বন্ধুরা যখন নলকূপ থেক জল খাচ্ছে, অনেশ দাঁড়িয়েছিল রাস্তার ধারে। সেই সময়ে দামোদরপুরের দিক থেকে একটি বালি বোঝাই ট্রাক আসছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জোরে অনেশকে ধাক্কা মারে ট্রাকটি। গতি এতটাই ছিল যে অনেশকে প্রায় পঞ্চাশ মিটার হেঁচড়ে নিয়ে যায়। বন্ধুদের চিৎকার শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন। চালক ট্রাক ফেলে মাঠ দিয়ে পালিয়ে যান।

ক্ষিপ্ত জনতা প্রথমে ট্রাকটিতে ভাঙচুর চালায়। এর পরেই দেহ নিয়ে জয়কৃষ্ণপুর-নাবান্দা রাস্তা অবরোধ শুরু হয়। দাবি ওঠে, অতিরিক্ত বালি বোঝাই ট্রাক যাতে বেপরোয়া ভাবে না চলে সেটা জেলাশাসককে এসে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। আধঘণ্টার মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রাধানগর ফাঁড়ির পুলিশ। রোষটা গিয়ে পড়ে পুলিশের উপরে। পুলিশের সঙ্গে ক্ষিপ্ত জনতার বচসা শুরু হয়। আহত হন রাধানগর থানার এক এএসআই।

পুলিশের দিকে ধেয়ে গেল ইট। ছবি: শুভ্র মিত্র

ঘটনাস্থলে বিষ্ণুপুর থানা থেকে আরও পুলিশ পৌঁছয়। তখন প্রায় ৩টে বাজে। পুলিশকে ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীদের হাতে আটজন পুলিশ কর্মী আহত হন সেই সময়ে। তাঁদের মধ্যে একজন বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে খবর পেয়ে মিনিট দশেকের মধ্যে ঘটনাস্থলে বিরাট বাহিনী নিয়ে পৌঁছন এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস। পুলিশের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা আক্রমণাত্মক ছিলেন। তাঁদের হটাতে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এর পরেই বিক্ষোভকারীদের দিক থেকে এলোপাথারি ধেয়ে আসে ইট। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে মৃত কিশোরের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিষ্ণুপুর থানায়। তখন বাজে প্রায় পৌনে ৪টে।

ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিক্ষোভের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন অনেশের বাবা ডালিম রায় এবং মা পারুল রায় এবং দামোদরপুর গ্রামের বাসিন্দারা। ছিলেন অনেশের স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি শৈলেন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বেপরোয়া বালির গা়ড়ির উৎপাতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে আসাটাই বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে।’’ শৈলেনবাবু জানান, ২০১৪ সালে জয়কৃষ্ণপুরের কাছে বেপরোয়া বালির গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ মণ্ডলের। তখনও বিক্ষোভ হয়েছিল। সাময়িক ভাবে বালির গাড়িতে রাশও পড়েছিল। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই আবার ছবিটা এক হয়ে যায়।

অযোধ্যা, লোহালাড়া, ভাটিয়াড়া, পেঁচাকুড়া— বিষ্ণুপুর ব্লকের এই সমস্ত গ্রাম দারকেশ্বরের তীরে রয়েছে। সেখান রয়েছে প্রচুর খাদান। বালি তুলে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের নজর এড়িয়ে অতিরিক্ত বালি বোঝাই করা হয় ট্রাকে। তার জেরে চালক অনেক সময়ে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, কিছু পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বালির কারবারিদের যোগসাজশ রয়েছে। তাঁদের মদতেই এই কারবার চলে। স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা গ্রামবাসীর একাংশের ক্ষোভে ঘি ঢালে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো কখনওই শোনা হয়নি। আজ একটা ছেলে মরে যাওয়ার পরে পুলিশ এল। আর আমাদের উপরেই বেপরোয়া লাঠিচার্জ করল। মহিলারাও রেহাই পেলেন না।’’

তবে পুলিশের দাবি, ক্ষুব্ধ জনতা কোনও আলোচনার পরিস্থিতিই রাখেনি। এসডিপিও বলেন, ‘‘আহত হয়ে এক এএসআই সেখানে পড়েছিলেন। তাঁকেও ছাড়া হচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে তাই লাঠি চার্জ করতে হয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, বালি বোঝাই ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। মৃত কিশোরের দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। পুলিশকে মারধরের অভিযোগ দায়ের হয়েছে মামলা। চলছে তল্লাশি। তবে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হননি।

Bishnupur Violence Accidental Death Reckless Driving বিষ্ণুপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy