Advertisement
০৩ মে ২০২৪

মদের টাকা দিতে নারাজ বধূকে খুন

নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। এ দিকে স্বামীর মদের নেশা। ধান কাটার কাজ করে পাওয়া কিছু টাকা লুকিয়ে সংসার খরচের জন্য সেই টাকা তুলে রেখে দিয়েছিলেন বধূটি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। সংসার আগলে রাখতে গিয়ে নিজেই প্রাণ হারালেন টুকটুকি বাগদি (৩২) নামে ওই বধূ। টাকা না পেয়ে কাটারির কোপ মেরে তাঁকে খুন করার অভিযোগ উঠল তাঁর স্বামী সাগর বাগদির বিরুদ্ধে। ঘটনার পরেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন সাগর।

তখনও তাজা রক্তের দাগ। বুধবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

তখনও তাজা রক্তের দাগ। বুধবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সোনামুখী শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০১:০৩
Share: Save:

নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। এ দিকে স্বামীর মদের নেশা। ধান কাটার কাজ করে পাওয়া কিছু টাকা লুকিয়ে সংসার খরচের জন্য সেই টাকা তুলে রেখে দিয়েছিলেন বধূটি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। সংসার আগলে রাখতে গিয়ে নিজেই প্রাণ হারালেন টুকটুকি বাগদি (৩২) নামে ওই বধূ। টাকা না পেয়ে কাটারির কোপ মেরে তাঁকে খুন করার অভিযোগ উঠল তাঁর স্বামী সাগর বাগদির বিরুদ্ধে। ঘটনার পরেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন সাগর।

বুধবার সকালে সোনামুখীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বৈকুণ্ঠপুরের বাগদিপাড়ায় এই ঘটনার পর চাঞ্চল্য ছড়ায়। সাগরের বাড়ি এবং তাঁর শ্বশুরবাড়ি পাশাপাশি। পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পনেরো আগে নিজেরাই পছন্দ করে বিয়ে করেন সাগর এবং টুকটুকি। সাগর পুকুরে মাছ ধরা আর দিনমজুরি করেন। ওই দম্পতির দুই ছেলে রয়েছে। তারা স্থানীয় হাই স্কুলে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিবেশীরা জানান, মদ খাওয়া নিয়ে পরিবারটিতে প্রায় প্রতিদিনই অশান্তি লেগে থাকত।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঠ থেকে ধান তোলার কাজ করে কিছু টাকা পেয়েছিলেন টুকটুকি। সেই টাকার কথা জানতে পেরে তা দাবি করেন সাগর। কিন্তু টুকটুকি ওই টাকা দিতে চাননি। বুধবার সকালে ঘটনার সময় ওই দম্পতির দুই ছেলে শিবেশ এবং রমেশ বাড়িতেই ছিল। তারা জানিয়েছে, টুকটুকি বাড়ির দাওয়ায় বসে বঁটিতে কুটনো কাটছিলেন। পিছন থেকে এসে ফের টাকা দাবি করেন সাগর। তিনি যে লুকিয়ে কাটারি নিয়ে এসেছিলেন তা বুঝতে পারেননি টুকটুকি। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করায় পিছন দিক থেকে তাঁকে কাটারির কোপ মারেন সাগর। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই বধূর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময় বাড়ির পাশের অঙ্গণওয়াড়ি কেন্দ্রে ছিলেন টুকটুকির মা জ্যোৎস্না বাগদি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেখানে গিয়ে শ্বাশুড়ির উপর কাটারি চড়াও হন সাগর। কিন্তু আশপাশের লোকজন তাঁকে আটকে ফেলেন। তাঁদের হাত ছাড়িয়ে সটান থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন সাগর। কাটারি থেকে হাতে চোট পাওয়ায় জ্যোৎস্নাদেবীকে সোনামুখী ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, টুকটুকির মাথা, ঘাড় এবং পিঠে আঘাতের চিহ্ণ ছিল। দেহটি ময়না তদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিষ্ণুপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিবেক বর্মা বলেন, ‘‘ধৃত সাগর বাগদি আত্মসমর্পণের পরে জেরায় দাবি করেছে, স্ত্রীর কাছে হাজার তিনেক টাকা ছিল। মদ খাওয়ার জন্য সেই টাকা চেয়েও না পাওয়ায় সে এই কাণ্ড করেছে। রক্তমাখা কাটারিটিও উদ্ধার করা হয়েছে।’’ তবে শ্বাশুড়ির উপরে কেন হামলা করেছিলেন সাগর তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে পুলিশ। ওই দম্পতির দুই ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে মামাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সাগর বাগদির বাড়ির সামনে স্থানীয় মানুষজন জটলা করে রয়েছেন। মদ বিক্রি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তাঁদের মধ্যে। এলাকার দুই যুবক শ্যামল বাগদি এবং তাপস বাগদি বলেন, ‘‘শহরে প্রচুর বেআইনি মদের ঠেক তৈরি হয়েছে। সেগুলি বন্ধ না করলে এই ধরণের ঘটনা আটকানো সম্ভব নয়।’’

তাঁদের অভিযোগ, রাস্তাঘাটে মদ্যপদের হইচই লেগেই থাকে। ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা সোনামুখীর প্রাক্তন পুরপ্রধান মিহির মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অবৈধ মদের ঠেক উচ্ছেদ করার জন্য প্রায়ই আবগারি বিভাগ এবং পুলিশকর্মীরা তল্লাশি চালান। তবে সেই তল্লাশি অভিযান আরও জোরদার করা উচিত।’’ শহরের বর্তমান পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বেআইনি মদের কারবারের ফল কী আকার নিয়েছে। পুলিশ ও আবগারি বিভাগকে আরও সক্রিয় হবার আবেদন জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

liquour murder wife
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE