সুব্রত পাত্র।
কেরোসিনের আলোয় পড়তে গিয়ে চোখ জ্বালা করত ছেলেটার। একটু পড়াশোনা করে ভাল ভাবে যাতে পরীক্ষা দিতে পারে, সে জন্য পড়শির কাছ থেকে বিদ্যুত্ চেয়ে এনে বাড়িতে আলোর ব্যবস্থা করেছিলেন পাত্রসায়রের বেলুট গ্রামের বাসিন্দা ক্ষুদ্র চাষি প্রভাকর পাত্র। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মাধ্যমিকে ৬৬৮ নম্বর পেয়ে সকলের নজর কেড়ে নিয়েছে ছেলে সুব্রত।
শালি নদীর ঘেঁষা বেলুট গ্রামের কুমোরপাড়ায় বাড়ি সুব্রতর। বাড়ি বলতে খড়ের ছাউনি দেওয়া এক মাটির ঘর। সম্বল এক বিঘে জমি। সেই জমির আয়ে সারা বছর ভাতের চালই হয় না। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে ঊষা বর্ধমান রাজ কলেজে ইংরেজি নিয়ে পড়ে। সংসার চালাতে তাই প্রভাকরবাবুকে দিন মজুরির কাজও করতে হয়। ছেলে সুব্রত এ বছর বেলুট হাইস্কুল থেকে সব ক’টি বিষয়ে লেটার নম্বর পেয়েছে। ছেলের সাফল্যে খুশি বাবা। কিন্তু এরপর কীভাবে সুব্রতকে পড়ানো যাবে সেটাই ভাবিয়ে তুলেছে প্রভাকরবাবুকে। ছেলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। তার এই সাফল্যের পিছনে স্কুলের শিক্ষক, গৃহশিক্ষক ও এলাকার কয়েক জনের হাত রয়েছে। সুব্রতর আক্ষেপ, “সকলের সাহায্যে ভাল রেজাল্ট হয়েছে। কিন্তু এক নম্বরের জন্য অঙ্কে ১০০ হল না।”
কিন্তু অর্থনৈতিক বাধা কাটিয়ে ছেলেকে পড়াতে পারবেন কিনা জানেন না প্রভাকরবাবু। তিনি বলেন, “ছোট মেয়ের কলেজে পড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছি। ছেলের গৃহশিক্ষকদের বেতন সময়ে দিতে পারিনি। এরপর ছেলেকে পড়াশোনার খরচ কীভাবে জোগাড় করব ভেবে পাচ্ছি না।” বেলুট হাইস্কুল থেকে এ যাবত সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া এই মেধাবী ছাত্রের উচ্চশিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্র। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপ রায় বলেন, “কষ্ট করে সুব্রত যা রেজাল্ট করেছে তাতে আমরা গর্বিত। আমরা ওর পাশে রয়েছি। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাধ্যমতো সাহায্য করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy