Advertisement
E-Paper

এনামুল খুনেও নাম জড়ালো জাফারুলের

ইলামবাজারে দ্বিতীয় বিজেপি কর্মীর খুনের ঘটনাতেও নাম জড়ালো সেই জাফারুল ইসলামের। কানুরে বিজেপি কর্মী রহিম শেখ খুনেও শাসক দলের ওই ইলামবাজার ব্লক সভাপতির নামে আগেই এফআইআর হয়েছে। তার পরে চার মাস কেটে গেলেও বীরভূম পুলিশ দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ ওই নেতার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫২
নিহত এনামুল শেখকে শ্রদ্ধা জানাতে ইলামবাজারে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।

নিহত এনামুল শেখকে শ্রদ্ধা জানাতে ইলামবাজারে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।

ইলামবাজারে দ্বিতীয় বিজেপি কর্মীর খুনের ঘটনাতেও নাম জড়ালো সেই জাফারুল ইসলামের।

কানুরে বিজেপি কর্মী রহিম শেখ খুনেও শাসক দলের ওই ইলামবাজার ব্লক সভাপতির নামে আগেই এফআইআর হয়েছে। তার পরে চার মাস কেটে গেলেও বীরভূম পুলিশ দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ ওই নেতার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধরমপুর পঞ্চায়েতের ডোমনপুর গ্রামে এনামুল শেখের (১৯) খুনের ঘটনায় রাতেই জাফারুল-সহ তৃণমূলের ৩৩ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নিহতের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরেও অভিযুক্তদের মধ্যে মাত্র এক জনকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছে। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের ক্ষোভ, “দুষ্কৃতীদের হাতে শাসক দলের কেউ জখম হলে পুলিশ বিজেপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চলে আসছে। আর রহিম-এনামুলরা খুন হয়ে যাওয়ার পরেও পুলিশ অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের সামান্য জিজ্ঞাসাবাদটুকু অবধি করে না। বোঝাই যাচ্ছে, পুলিশ কাদের হয়ে কাজ করছে!”

শুক্রবার বোলপুর হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে ইলামবাজারে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এনামুলের দেহ নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। নিহত দলীয় কর্মীর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সাড়ে তিনটে নাগাদ রাহুল ডোমনপুর গ্রামে পৌঁছন। তার আধঘণ্টা আগেই গ্রামে এনামুলের দেহ পৌঁছে গিয়েছিল। দেহ ঢুকতেই গোটা মহল্লা কান্নায় ভেঙে পড়ে। পরে এনামুলের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে রাহুল তাঁদের সব রকমের সহায়তার আশ্বাস দেন। ঘরে ঢুকে নিহতের বাবা রহমতুল্লা শেখ এবং মা লুত্‌ফা বিবি, ছোট ভাই (পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া) আসিকুল শেখ এবং বোন নাসরিন খাতুনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন রাহুল। এনামুলের বাবাকে তিনি জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য যা খরচ হবে, তা বিজেপি বহন করবে। শুধু তাই নয়, আসিকুলকে কাছে ডেকে তার পড়াশোনার জন্যও দল যাবতীয় খরচ দেবে বলে রাহুল আশ্বাস দেন।

পরে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষুব্ধ বিজেপি রাজ্য সভাপতি অভিযোগ করেন, “বীরভূমে গ্রামের পর গ্রাম মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। তারই মধ্যে কানুরে রহিম শেখকে হত্যা করা হল। এখানে এনামুলকে। কারণ, একটাই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বিজেপি করছে, তা দেখে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তাই মুসলিমরা যাতে বিজেপি-তে যোগ না দেয়, তার জন্য তৃণমূল এই কাণ্ড করছে। ওরা খুনের রাজনীতি শুরু করেছে।” গোটা বিষয়টিই তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন বলে রাহুল জানান। পরিবারের সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত এনামুল গত বছরই মাধ্যমিক দিয়েছিল। তবে উর্ত্তীণ হতে পারেনি। তাঁর বাবা রহমতুল্লা শেখ জানান, লোকসভা ভোটের পরে গ্রামের অর্ধেক পরিবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। তাঁর পরিবারও বিজেপি করায় তৃণমূলের আক্রোশ তৈরি হয়। ওই আক্রোশ থেকেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এনামুলকে খুন করেছে বলে তাঁর দাবি। কাঁদতে কাঁদতে ওই যুবকের মা লুত্‌ফা বিবি বললেন, “ছেলে আমার সবে বাড়ি ফিরে একটু জিরোতে বসেছিল। তখনই ঘরে ঢুকে তৃণমূলের লোক জন এলোপাথাড়ি গুলি করতে শুরু করে। ছেলে তিনটে গুলি খেয়ে উঠোনেই লুটিয়ে পড়ে।” ছেলের খুনের বিচার চান ওই সন্তানহারা মা। ঘটনার দিন দুষ্কৃতীরা গ্রামের বহু বিজেপি কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে হামলা ও লুঠপাট চালিয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল। এ দিন রাহুল আক্রান্ত ওই কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ঘুরে দেখে তাঁদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে তিনি বলেন, “রাজ্যটা সমাজবিরোধীদের হাতে চলে গিয়েছে। এখানে পুলিশ-প্রশাসনেরই কোনও নিরাপত্তা নেই। থানায় ঢুকে পুলিশকে মারা হচ্ছে। এই করে এই রাজ্যে সিপিএম টিকে থাকতে পারেনি। এ বার তৃণমূলেরও যাওয়ার সময় এসে গিয়েছে।”

এ দিনও সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন জাফারুল। তাঁর দাবি, “কানুরের ঘটনার সময়ও আমি সরকারি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এ ক্ষেত্রেও বৃহস্পতিবার দিনভর জেলা পরিষদে ছিলাম। যতটুকু জানি, সমাজবিরোধীদের মধ্যে গণ্ডগোল থেকেই ঘটনাটি ঘটেছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, বিজেপিই জেলায় সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছে। এ দিকে, জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “এনামুল শেখ খুনের ঘটনায় এফআইআর-এ নাম থাকা হালিম শেখ নামে এক ব্যক্তিকে এ দিন গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় অন্য অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।” তিনি জানিয়েছেন, খুনের পরে দেহ উদ্ধারে যাওয়ার সময় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ পৃথক মামলা রুজু করেছে। তার তদন্ত শুরু হয়েছে।

ছবি: বিশ্বজিত্‌ রায়চৌধুরী

mahendra jena ilambazar enamul jafarul
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy