Advertisement
E-Paper

দীর্ঘ যাত্রায় রাস্তায় নেই শৌচাগার, ক্ষোভ যাত্রীদের

দৃশ্য এক: রাত তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুতি সেরে ময়ূরেশ্বরের কনুটিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে বাসস্টপে পৌঁছে ভোর সাড়ে চারটের বাস ধরতে হয় মেয়েটিকে। তবেই মেলে আরও ২০ কিলোমিটার দূরের সাঁইথিয়া স্টেশনে নির্ধারিত প্রথম ট্রেন। বর্ধমানে টিউশন নেয় বলে সপ্তাহে তিনদিন এটাই রুটিন সাঁইথিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীটির।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪ ০০:৫৭

দৃশ্য এক: রাত তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুতি সেরে ময়ূরেশ্বরের কনুটিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে বাসস্টপে পৌঁছে ভোর সাড়ে চারটের বাস ধরতে হয় মেয়েটিকে। তবেই মেলে আরও ২০ কিলোমিটার দূরের সাঁইথিয়া স্টেশনে নির্ধারিত প্রথম ট্রেন। বর্ধমানে টিউশন নেয় বলে সপ্তাহে তিনদিন এটাই রুটিন সাঁইথিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীটির।

দৃশ্য দুই: ওই একই সময়ে লাভপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীটিকেও বাড়ি থেকে বের হতে হয়। বর্ধমানে টিউশন নিতে যাওয়ার জন্য বুধুরা গ্রামের মেয়েটিকে ভোর ৫টা ১০ মিনিটের আগেই চলে আসতে হয় বিপ্রটিকুড়ি স্কুল মোড়ে। উদ্দেশ্য বাসে চেপে বোলপুর স্টেশনে গিয়ে বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চেপে বসা।

উপরের দু’টি ক্ষেত্রেই বাড়ি থেকে স্টেশন অবধি ৩-৪ ঘণ্টার এই যাত্রা ওই দুই ছাত্রীর কাছে চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অধিকাংশ দিনই তাড়াহুড়োর মধ্যে তাঁরা বাড়িতে প্রাতঃকৃত্য সারার সুযোগ পান না। বাসস্টপে পৌঁছে বাস ধরার আগে হাতে কিছু সময় থাকলেও তাতেও চাপমুক্ত হতে পারেন না ওই ছাত্রীরা। কারণ, তার আশেপাশে কোথাও কোনও শৌচাগার নেই। দু’জনেই বলছেন, “যে পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের পড়তে হয়, ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ-ই তা বুঝতে পারবেন না। চোখ ফেটে জল আসে। ঘণ্টা খানেক বাস যাত্রার পরে ট্রেনে চেপে তবে হাফ ছেড়ে বাঁচি।” বস্তুত, জেলার গ্রাম-মফস্সলের পাকা সড়কের ধারে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার কোথাও কোনও শৌচাগার মেলে না। মেয়েরা তো বটেই, সমস্যায় পড়েন ছেলেরাও। অভিযোগ, এক দিকে, বাসিন্দাদের শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে সরকারি টাকায় ঢালাও প্রচার অভিযান চলছে। বাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য দেওয়া হচ্ছে ভর্তুকিও। কিন্তু রাস্তাঘাটে, এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে সুলভ শৌচাগার তৈরিতে তেমন নজরই দেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন বাসরুটের যাত্রীরা নানা দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন। পরিস্থিতির বিপাকে পড়ে অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীদের মাঠেঘাঠেই কাজ সারতে হচ্ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে তো সে সুযোগটুকুও থাকে না। কিন্তু বাসযাত্রী থেকে স্থানীয় বাসিন্দা, সবার অভিযোগ, এ রকম একটি সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে প্রশাসনের কোনও হেলদোলই নেই।

বীরভূম জেলা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জেলায় কয়েক হাজার কিলোমিটার কাঁচা ও পাকা রাস্তা রয়েছে। সেখানে আড়াই হাজারেরও বেশি বাসস্টপ রয়েছে। কিন্তু ওই গোটা রাস্তাজুড়ে মাত্র কয়েকটি বাসস্টপ ছাড়া আর কোথাও শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। সংগঠনের পক্ষে তাঁরা প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে আবেদন জানাবেন বলে শুভাশিসবাবু দাবি করেছেন। একই ভাবে সমস্যায় পড়তে হয় ময়ূরেশ্বরেরই উলকুণ্ডা পঞ্চায়েতের রামনগর বাসস্টপের যাত্রীদেরও। কাছাকাছি কোথাও শৌচাগার নেই। অথচ ওই রামনগর থেকে শুধু বীরভূমই নয়, সংলগ্ন মুর্শিদাবাদের পানুটিয়া, সাহোড়া, তালবোনা-সহ প্রায় ১৫-১৬টি গ্রামের বাসিন্দারা বাস ধরার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী রামমোহন প্রামাণিক, আশা কর্মী সুলেখা দাসরা ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন, “পুরুষেরা কোনও রকমে মাঠেঘাটে কাজ চালিয়ে নিলেও অস্বস্তিতে পড়তে হয় মহিলাদের। এর ফলে যে একটা বড় অংশের মানুষের রোজদিন চরম অসুবিধার মধ্য পড়তে হয়, তা কারও মাথাতেও আসে না!”

সাধারণত, গ্রামের ধার দিয়ে যাওয়া রাস্তার উপরে বা বাসস্টপে প্রতীক্ষালয়ের পাশাপাশি শৌচাগার তৈরির ভার থাকে স্থানীয় পঞ্চায়েতের। সংরক্ষণের জোরে জেলার বহু পঞ্চায়েতেই এখন মহিলা প্রধান। কিন্তু তাঁরাই মেয়েদের শৌচাগারের অভাবজনীত সমস্যা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতে চান না বলে অভিযোগ। যেমন বিপ্রটিকুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সোনালি বাগদি। তিনি বলছেন, “আমার পঞ্চায়েতে ও রকম শৌচাগার নেই, এই কথাটি সত্য। কিন্তু তাতে কারও কোনও সমস্যা হয় কিনা, তা দলের সঙ্গে আলোচনা না করে বলতে পারব না।” তৃণমূল পরিচালিত কলেশ্বর পঞ্চায়েতের ছবি বাগদির মতো বহু প্রধান আবার শৌচাগার না থাকার পিছনে জমি না মেলাকেই দুষছেন। আবার আশার কথা শুনিয়েছেন উলকুণ্ডা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শামসুল আলম মল্লিক। তাঁর দাবি, “এতদিন উপযুক্ত জায়গা মেলেনি বলে রামনগরে শৌচাগার তৈরি করা যায়নি। সম্প্রতি জমি জোগাড় হয়েছে। শৌচাগার তৈরির প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোও হয়েছে। টাকা পেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।”

সমস্যার কথা শুনে জেলায় ‘নির্মল ভারত অভিযান’ প্রকল্পে শৌচাগার নির্মাণের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) বিধান রায় বলেন, “জায়গা এবং প্রস্তাব পেলে রাস্তার ধারে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে আমরা শৌচাগার নির্মাণে পদক্ষেপ করে দেখতে পারি।” জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর আশ্বাস, “এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা এবং যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলব। রাস্তার ধারে বাসস্টপ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থানে সুলভ শৌচাগার গোছের কিছু তৈরি করা যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা করব। শৌচাগার নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি জোগাড়েরও চেষ্টা করব।”

no toilet within long distance protest arghya ghosh mayureshwar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy