Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Recruitment Scam

‘দাদার ভরসাতেই দিদির কোম্পানির ডিরেক্টর হই’! এখন ভয়ে ভয়ে রয়েছেন শান্তনুর ‘ক্যাডার’ রাকেশ

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির আতশকাচের নীচে শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার প্রোমোটিং সংস্থা। বর্তমানে যার অন্যতম ডিরেক্টর রাকেশ মণ্ডল। আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বললেন তিনি।

Rakesh Mandal director of Shantanu Banerjee’s wife’s company is worried about ED investigation.

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর রাকেশ মণ্ডল। ফাইল ছবি।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩৪
Share: Save:

বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর থেকেই একে একে নামে-বেনামে তাঁর বিপুল সম্পত্তির কথা প্রকাশ্যে এনেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বলাগড়ে শান্তনুর রিসর্টে গিয়ে তালা ভেঙে তল্লাশি চালিয়েছে তারা। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে শান্তনু-ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তিকে। সেখান থেকেই উঠে এসেছে শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রোমোটিং সংস্থার নাম। বর্তমানে যে সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর রাকেশ মণ্ডল।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির আতশকাচের নীচে রয়েছে ‘ইভান কনট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড’। প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে যুগ্ম ভাবে এই সংস্থার ডিরেক্টর রাকেশ। নিয়োগ দুর্নীতির টাকা এই সংস্থার মাধ্যমে নয়ছয় করা হয়েছিল কি না, সংস্থায় দুর্নীতির টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল কি না, আপাতত তা খতিয়ে দেখছে ইডি।

শান্তনুর গ্রেফতার, বলাগড়ের রিসর্টে ইডির হানা, শান্তনু-ঘনিষ্ঠদের বার বার জিজ্ঞাসাবাদের আবহে তাই উৎকণ্ঠায় আছেন রাকেশ। তাঁর উদ্বেগ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের প্রশ্নের মুখে কি পড়তে হবে তাঁকেও? আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে খোলাখুলি কথায় ‘বিতর্কিত’ প্রোমোটিং সংস্থার ডিরেক্টর জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে প্রিয়াঙ্কার প্রোমোটিং সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করছেন তিনি। রাকেশ জানান, ‘দাদা’ অর্থাৎ শান্তনুর ভরসাতেই তিনি ‘দিদি’ অর্থাৎ প্রিয়াঙ্কার সংস্থার ডিরেক্টর হয়েছিলেন। আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে হতে পারে, সেই সম্ভাবনার কথা মনে হয়নি কখনও।

রাকেশ হুগলির পুরশুড়ার বাসিন্দা। সরকারি একটি বিভাগে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। এলাকায় শান্তনুর ঘনিষ্ঠ ‘প্রভাবশালী’ হিসাবে পরিচিতি আছে তাঁর। স্থানীয়দের দাবি, ‘দাদার অনুগামী’ রাকেশ এলাকায় যথেষ্ট দাপুটে। তিনি যে প্রোমোটিং সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর, সেই সংস্থার অপর ডিরেক্টর শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা নিজে। ২০২০ সাল থেকে সংস্থাটির ডিরেক্টর পদে রয়েছেন শান্তনুর স্ত্রী।

তবে আপাতত রাকেশ সমস্ত দায় চাপিয়ে দিয়েছেন শান্তনুর উপরেই । তাঁর কথায়, ‘‘দাদা আমাকে ওই সংস্থার ডিরেক্টর হতে বলেছিল। তার জন্য আমার কাছে পরিচয়পত্র চেয়েছিল। দাদার উপর তো কথা বলতে পারি না।’’ তবে ওই সংস্থা থেকে কোনও অর্থ তিনি ভোগ করেননি বলে দাবি রাকেশের। তিনি জানান, শান্তনু চেয়েছিলেন, তাই তিনি ডিরেক্টর হয়েছেন। কোনও টাকা পাননি। নিজে কিছুই ভোগ করেননি। ঘনিষ্ঠদের নামে একাধিক সম্পত্তি কিনে রেখেছিলেন শান্তনু। রাকেশের দাবি, তাঁর নামেও কোথাও কোনও সম্পত্তি কেনা রয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। ‘ইভান কনট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড’-এর সঙ্গে দুর্নীতির কোনও যোগ পেলে ডিরেক্টর হিসাবে তিনিও যে ফেঁসে যেতে পারেন, তাতে সন্দেহ নেই রাকেশের। সেই কারণেই এখন উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন।

এর আগে প্রিয়াঙ্কার এই প্রোমোটিং সংস্থায় অংশীদার ছিলেন নিলয় মালিক। তাঁর নামে গাড়ি এবং অন্য সম্পত্তিও কিনেছিলেন শান্তনু। তবে ইডির কাছে নিলয় দাবি করেছেন, গত দেড় বছরে তাঁর সঙ্গে শান্তনুর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। তাই সংস্থার ডিরেক্টর পদ থেকেও তাঁর নাম সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিলয়ের পরেই প্রোমোটিং সংস্থার নতুন ডিরেক্টর হিসাবে রাকেশকে নিয়ে আসেন শান্তনু। তাঁকে কেন সরতে হল? নিলয় জানান, শান্তনুর একটি ধাবা রয়েছে। সম্প্রতি তিনি নিজেও একটি ধাবা খুলেছেন। সেই বিষয়টি শান্তনু ভাল চোখে দেখেননি। ওই ধাবা খোলা নিয়ে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বলাগড়ের রিসর্টে নিলয়কে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। তার পর বুধবার সল্টলেকে ইডির দফতরে এসে নথিপত্র জমা দিয়ে গিয়েছেন নিলয়। ইডি সূত্রে খবর, শান্তনুর স্ত্রীর সংস্থায় ডিরেক্টর থাকাকালীন যে সমস্ত নথি নিলয়ের কাছে ছিল, তা দেখতে চেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই সব নথিই সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। এর পর শান্তনু সংক্রান্ত তদন্তের প্রয়োজনে সংস্থার বর্তমান ডিরেক্টর রাকেশকেও ডেকে পাঠাতে পারে কেন্দ্রীয় সংস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE