Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Death

ডিজে, বাজিতে শতায়ু বৃদ্ধার শ্মশানযাত্রা

শোকযাত্রায় এমন সমারোহ দেখে সৈকত শহর দিঘার অনেক পর্যটকই বিস্মিত।

বৃদ্ধার অন্তিম যাত্রায় মাইক বাজিয়ে নাচ। নিজস্ব চিত্র

বৃদ্ধার অন্তিম যাত্রায় মাইক বাজিয়ে নাচ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দিঘা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩৪
Share: Save:

নাতি-পুতির মুখ দেখার ইচ্ছে থাকে অনেকেরই। মাহেশ্বরী চন্দ পুতির পরেও দুই প্রজন্মের মুখ দেখেছিলেন। শনিবার ১২০ বছর বয়সে সেই মাহেশ্বরী মারা যান। আর রবিবার তাঁর পুতি আর পুতির নাতিরা ডিজে বক্স বাজিয়ে, ব্যান্ডপার্টি ভাড়া করে শ্মশানযাত্রার ব্যবস্থা করেন।

শোকযাত্রায় এমন সমারোহ দেখে সৈকত শহর দিঘার অনেক পর্যটকই বিস্মিত। যদিও পরিবারের ব্যাখ্যা, মাহেশ্বরীর অন্তিম ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা জানাতেই তাঁরা শোকের আবহকে উদ্‌যাপনে বদলে দিয়েছেন।

রামনগর ১ ব্লকের দক্ষিণ শিমুলিয়ার বাসিন্দা মাহেশ্বরীর প্রকৃত নাম সুভাষিনী চন্দ। ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়। তাঁর বিয়ের পরের বছর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ছেলে, বৌমা, নাতি-নাতনি মিলিয়ে পরিবারের সদস্য ১২৪ জন। শুধু নাতিই ৫৬ জন। প্রথম সন্তান রেণুকা জানার বয়স আনুমানিক ৯০ বছর। মাহেশ্বরীর এত বয়সেও খুব যে ভুগতেন তা নয়। তবে মাস তিনেক আগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। শনিবার বিকেল থেকে কাশছিলেন। বুকে কফ জমেছিল। রাত আটটা নাগাদ তিনি মারা যান।

এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, রবিবার সকালে শ্মশানযাত্রা যেন শোভাযাত্রা হয়ে গিয়েছিল। গাঁদা আর গোলাপে সাজানো হয় অন্তিম শয্যা। রাস্তা জুড়ে ফুল ছড়ানো হয়। মাখানো হয় হলুদ আবির। অটোয় ব্যান্ডপার্টি আর ইঞ্জিন রিকশায় সাউন্ডবক্স বেঁধে উদ্দাম নৃত্যে মেতে ওঠেন নানা বয়সীরা। উৎসবের মেজাজেই গোটা সৈকত শহর ঘুরে দিঘা মোহনা যাওয়ার রাস্তায় বৈদ্যুতিক চুল্লিতে মাহেশ্বরীর শেষকৃত্য হয়। এমন দৃশ্যে হতবাক পর্যটকেরা। বন্ধুদের সঙ্গে দিঘায় পিকনিক করতে আসা কাঁথির যুবক বিশ্বজিৎ বেরা বলেন, ‘‘মৃত্যু বেদনার। সেটা যে বয়সেই হোক না কেন। কিন্তু মৃতের পরিবারের শোকের বদলে এমন উল্লাসের দৃশ্য খানিকটা বিচলিত করল।’’ প্রতিবেশী সুনীল চন্দ অবশ্য বললেন, ‘‘পাড়ার সবচেয়ে প্রবীণ ছিলেন। ওঁর কাছে অনেক পুরনো দিনের ঘটনা শুনতাম। গোটা পাড়াটা শূন্যতায় ভরে গিয়েছে।’’

কিন্তু শূন্যতার উদ্‌যাপন কে, কবে দেখেছেন, অনেকেই মনে করতে পারলেন না। কেন এমন ঘটনাও ঘটে? বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ আবদুল হাফিজ মইনুদ্দিন বললেন, ‘‘আমি এ রকম কখনও শুনিনি। শবযাত্রায় ব্যান্ডপার্টি বাজানো অস্বাভাবিক। অনেক সময় পরিবারের লোকেদের মনে হতে পারে, এতদিন বেঁচে ছিলেন। কষ্ট পাচ্ছিলেন। মৃত্যুতে মুক্তি পেলেন। তাঁর সেই মুক্তিতে আনন্দ করা হয়। আবার অর্থের প্রাচুর্য থাকলেও নানা ভাবেই শোকপালন হতে পারে।’’

যদিও মাহেশ্বরীর একমাত্র সন্তান সুশান্তর ছেলে সুজিত বললেন, ‘‘উনি বলে গিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুতে কেউ যেন কান্নাকাটি না করে। বাজনা বাজিয়ে, বাজি ফাটিয়ে দাহ করতে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। সেই ইচ্ছে রেখেছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Last Rite DJ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE