E-Paper

আর জি কর আন্দোলন দানা বাঁধেনি আদিবাসী পল্লিতে

অগস্টের গোড়ায় আর জি করের ঘটনার পরে বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন আদিবাসী-জনজাতিরা। তাঁদের মেয়েদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদও জুড়েছিল সেই আন্দোলনে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৫
আর জি করের ঘটনায় নজিরবিহীন নাগরিক প্রতিবাদ দেখেছে রাজ্য।

আর জি করের ঘটনায় নজিরবিহীন নাগরিক প্রতিবাদ দেখেছে রাজ্য। —ফাইল চিত্র।

আর জি করের ঘটনায় নজিরবিহীন নাগরিক প্রতিবাদ দেখেছে রাজ্য। রাজনৈতিক ঝান্ডা ছাড়াই সেই প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়েছে জেলায় জেলায়। তবে প্রান্তিক আদিবাসী-জনজাতি এলাকাগুলিতে এখনও তেমন দাগ কাটতে পারেনি আর জি কর আন্দোলন।

অগস্টের গোড়ায় আর জি করের ঘটনার পরে বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন আদিবাসী-জনজাতিরা। তাঁদের মেয়েদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদও জুড়েছিল সেই আন্দোলনে। তবে তা দানা বাঁধেনি, ছড়ায়ওনি। পাহাড় থেকে জঙ্গলমহল— ছবিটা একই।

সেই সময় জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া করলা ভ্যালি চা বাগানে মেয়েরা স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন। পা মেলান বৃদ্ধারাও। বানারহাটে চা শ্রমিকদের প্রতীকী রাস্তা অবরোধে জমায়েত ছিল নজরকাড়া। উত্তর দিনাজপুরের আদিবাসী অধ্যুষিত ইটাহার, হেমতাবাদ ও করণদিঘি ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে অবশ্য তেমন প্রতিবাদ-আন্দোলন হয়নি।
তবে রায়গঞ্জ ও ইটাহারে সব সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে আদিবাসীরা রাস্তায় নামেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের ব্লক সদরগুলিতে গোড়ার দিকে প্রতিবাদে অল্প কিছু আদিবাসী-মুখ ছিল। তবে রাত দখলের আন্দোলনে আদিবাসীরা সে ভাবে ছিলেন না। আলিপুরদুয়ারের আদিবাসী এলাকাতেও তেমন প্রভাব পড়েনি।

মালদহে একাধিক আদিবাসী সংগঠন পথে নামলেও হবিবপুরের দমদমা, হরগাঁও হোক কিংবা গাজলের দেওতলার মতো প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামগুলিতে কিছুই হয়নি। অথচ, তখনই জেলায় এক আদিবাসী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল গ্রামীণ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের উত্তরবঙ্গের সভাপতি মোহন হাঁসদা মানছেন, “আদিবাসীদের কাছে বিষয়টি পৌঁছনো যায়নি। যারা সমাজ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত, শুধু তাদের কাছেই যেটুকু বার্তা পৌঁছেছে।” হবিবপুরের সরলা টুডুরও সরল স্বীকারোক্তি, “মাঠেঘাটে কাজ করে সংসার চালাতেই দিন শেষ। তাই, সব ঘটনা জানা হয় না।”

লাল মাটিতেও এক সুর। গোড়ার দিকে প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন পুরুলিয়া জেলা সদর থেকে জঙ্গলমহল বলে পরিচিত বান্দোয়ান, বরাবাজার, বোরো, বাঘমুণ্ডির মানুষজন। কিছু মিছিলে লক্ষ্মীর ভান্ডার ও কন্যাশ্রী ভাতা নিয়ে কটাক্ষও শোনা গিয়েছে মেয়ে, বৌদের স্লোগানে। তবে সে সব থিতিয়ে গিয়েছে। জঙ্গলমহলের আর এক জেলা ঝাড়গ্রামেও ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। অরণ্যশহরে রাত দখলে বড় জমায়েত হয়েছে। তবে জেলার আদিবাসী গ্রামগুলিতে তার প্রভাব নেই। লালগড়ের প্রবীণা ডগমণি সরেন বলেন, ‘‘নাতি-নাতনিরা স্কুলে যায়। ওদের মুখে ঘটনা শুনেছি। তবে গ্রামে আন্দোলন করার কথা কেউ বলেনি।’’ বেলপাহাড়ি বদাডি গ্রামের যুবক নিত্য সিংয়ের কথা, ‘‘টিভি আর মোবাইলের দৌলতে ঘটনাটা অনেকেই জেনেছেন। তবে এখানে প্রতিবাদের সেই তাগিদটা ছিল না।’’

অনেকের মতে, আর জি করের ঘটনায় যে প্রতিবাদ হচ্ছে, তার সঙ্গে প্রান্তিক আদিবাসী-জনজাতিরা একাত্ম বোধ করছেন না। তা ছাড়া, চাষবাস, দিনমজুরিতে ব্যস্ত এই সম্প্রদায়ের বড় অংশ নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত। ফলে, সংবাদমাধ্যম বা সমাজমাধ্যমের দৌলতে ঘটনার খুঁটিনাটি তাঁদের কাছে পৌঁছচ্ছে না। ‘ভারত জাকাত মাঝি পরগণা মহল’-এর উত্তর দিনাজপুরের নেতা বাপি সরেনের মতে, ‘‘আর জি কর কাণ্ডের প্রভাব বেশির ভাগটাই আদিবাসী পড়ুয়াদের মধ্যে পড়েছে।’’ পর্যবেক্ষকদের আরও মত, রাজ্যের সামাজিক প্রকল্পে উপকৃত আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সেই জমিটাও তৈরি হয়নি। রাজ্যের মন্ত্রী সন্ধ্যারানী টুডুর দাবি, ‘‘আর জি করের ঘটনায় জলঘোলা করতে নেমেছে বিরোধীরা। ওদের মানুষ চেনেন। তাই গ্রামাঞ্চলে এর তেমন প্রভাব পড়েনি।’’

আর জি কর নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই পূর্ব বর্ধমানে গলার নলি কেটে খুন করা হয় এক জনজাতি তরুণীকে। আদিবাসী সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পরগণা মহল’ আর জি করের ঘটনার সঙ্গে তাকে জুড়েই পথে নেমেছিল। তবে তার রেশ বেশি দিন থাকেনি। বিজেপির এসটি মোর্চার রাজ্য সম্পাদক পার্শী মুর্মুর দাবি, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রামের ৮০ শতাংশ মানুষ জানেন, কী ঘটেছে। তাঁরা প্রতিবাদও জানাচ্ছেন।’’ তবে তাঁর দলেরই নয়াগ্রামের নেতা প্রধান সরেন মানছেন, ‘‘গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আর জি করের ঘটনায় তেমন প্রভাব পড়েনি। মানুষ এখানে জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত।’’

কলকাতা লাগোয়া দুই ২৪ পরগনার আদিবাসী গ্রামগুলিতেও গোড়ার দিকে বিচারের দাবি উঠেছিল। তবে ক্রমে সব চাপা পড়ে গিয়েছে। গোঘাটের আদিবাসী মহিলা সংগঠন ‘সিলিবাবের তিরলৌ গাঁওতা’-র সম্পাদিকা চাঁদমণি হেমব্রম অবশ্য বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগে কয়েক দিন সমস্যা হলেও ফের রাস্তায় নামব আমরা।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RG Kar Medical College and Hospital Incident Tribal Group Tribal people

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy