Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
State News

নামখানা লোকালে টলি-অভিনেত্রীর যৌন হেনস্থা, গ্রেফতার আরপিএফ জওয়ান

ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা অভিনেত্রী ওই তরুণী বৃহস্পতিবার রাতে সোনারপুর জিআরপি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৭:৪৭
Share: Save:

নামখানা থেকে শুটিং সেরে শেষ ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন এক অভিনেত্রী। রাতের ফাঁকা ট্রেনে তাঁকে মদ-সিগারেট খাওয়ানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠল যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রেলরক্ষী বাহিনী (আরপিএফ)-র এক জওয়ানের বিরুদ্ধে। পেশায় টেলি সিরিয়াল অভিনেত্রী ওই মহিলার উপস্থিত বুদ্ধির জোরে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছেন অভিযুক্ত আরপিএফ জওয়ান। তাঁকে এ দিন আদালতে পেশ করা হয়।

ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা অভিনেত্রী ওই তরুণী বৃহস্পতিবার রাতে সোনারপুর জিআরপি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বকখালিতে তাঁর শুটিংয়ের কাজ ছিল। শুটিং তাড়াতাড়ি ‘প্যাক আপ’ হয়ে যাওয়ায় ইউনিটের সঙ্গে সেখানে রাত না কাটিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ইউনিটের গাড়ি তাঁকে নামখানা স্টেশনে নামিয়ে দেয়। অভিযোগে ওই তরুণী জানিয়েছেন, রাত পৌনে ৯টা নাগাদ তিনি নামখানা স্টেশন থেকে শিয়ালদহগামী শেষ ট্রেনে ওঠেন।

ওই তরুণীর অভিযোগের বয়ান অনুযায়ী, তিনি প্রথমে জেনারেল কামরাতেই উঠেছিলেন। সেই সময় পুলিশের পোশাক পরা দু’জন ব্যক্তি তাঁর কাছে আসেন। তাঁকে ওই পুলিশকর্মীরা ট্রেনের সামনের দিকের মহিলা কামরায় চলে যেতে বলেন বলে ওই তরুণীর দাবি। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ওই পুলিশকর্মীরা বলেন, রাতের ট্রেন। নিরাপত্তার কারণেই মহিলা কামরাতে যাওয়া ভাল।” এর পর তিনি ট্রেন ছাড়ার আগে সামনের মহিলা কামরায় ওঠেন। অভিযোগকারিণী বলেন, ‘‘মহিলা কামরায় ওই দুই পুলিশকর্মীও এসে ওঠেন। তাঁদের এক জন আমার সামনে এসে বসেন। আর এক জন কামরার অন্য প্রান্তে চলে যান।’’ ওই তরুণীর বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁকে ধরে গোটা কামরায় তখন মাত্র তিন জন ছিলেন।

আরও পড়ুন: ৫ লাখের ক্ষতিপূরণ কাদের, আপাতত ৭৫টি পরিবারকে চিহ্নিত করল মেট্রো

ট্রেন নামখানা ছাড়ার পর থেকেই আলাপ জমানোর চেষ্টা করছিল সামনে বসা ওই পুলিশ কর্মী, অভিযোগে জানায়িছেন ওই তরুণী। সমস্যা শুরু হয় ট্রেনটি লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশনে পৌঁছনোর পর। তরুণীর কথায়, ‘‘লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশনে ট্রেনটি প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিল। ওই পুলিশকর্মী আমার সামনে বসেই মদ্যপান শুরু করেন। সঙ্গে সিগারেট। অস্বস্তি হলেও আমি কিছু বলতে পারছিলাম না। কারণ ওটা ছিল শেষ ট্রেন। বাইরে প্ল্যাটফর্মও ফাঁকা।” ওই পুলিশকর্মী তাঁকেও মদ-সিগারেট খাওয়ার জন্য বলেন বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন: শহর কলকাতায় গ্যাং ওয়ারের বলি! হরিদেবপুরে কুখ্যাত দুষ্কৃতী বাবুসোনাকে গুলি করে খুন

জিআরপির কাছে করা অভিযোগে ওই তরুণী জানান, এর পর থেকেই চূড়ান্ত অসভ্যতা শুরু করেন ওই পুলিশকর্মী। তাঁর গায়ে বার বার হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘চলন্ত ট্রেনে আমাকে জড়িয়ে ধরারও চেষ্টা করে বেশ কয়েক বার। প্রতিবাদ করে আমি পরের স্টেশনেই নেমে যেতে যাই। কিন্তু নামার চেষ্টা করতেই বাধা দেওয়া হয়। অন্য পুলিশকর্মীটি কোনও যাত্রীকে কামরায় উঠতেও দিচ্ছিল না।’’

এ সবের মধ্যেই ট্রেন এসে পৌঁছয় জয়নগর স্টেশনে। ওই পুলিশকর্মীর নজর এড়িয়ে তাঁর স্বামীকে ফোন করেন তরুণী। তাঁর স্বামী একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি সেই সময় গড়িয়াতে ছিলাম। ফোন পেয়েই গোটা ঘটনা গড়িয়া স্টেশনের এক রেলকর্মীকে জানাই। তিনি আমাকে সোনারপুর জিআরপি থানায় যেতে বলেন।” সোনারপুর জিআরপি থানায় সমস্ত ঘটনা জানানোর পর প্রথমে পুলিশ তেমন গা করেনি বলে অভিযোগ।

ইতিমধ্যে ওই তরুণীর স্বামী রেলের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেন। কিন্তু কোনও ভাবেই যোগাযোগ করতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘স্ত্রীকে ভিডিয়ো কল করতে বলি আমি। লুকিয়ে ও হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো কল করে ওই পুলিশ কর্মীকে দেখায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি স্ক্রিন শট নিয়ে রাখি। সেখানে লোকটিকে দেখা যাচ্ছিল।” তবে তরুণীর দাবি, ওই ভিডিয়ো কল করার বিষয়টি বুঝতে পারেন ওই পুলিশকর্মী। তরুণীর কাছ থেকে ফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়। অনেক অনুরোধ করে ফোনটি ফেরত পান বলেই জানান ওই তরুণী। তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছ থেকে জোর করে ফোন নম্বর নেয় ওই পুলিশকর্মী। আমার ছবি তোলে। আমাকে বিভিন্ন রকম কুপ্রস্তাব দিতে থাকে অনবরত।” এ সবের মধ্যেই ওই তরুণী তাঁর স্বামীকে ফের ফোন করে সেটি সিটের উপর উল্টে রেখে দেন। ট্রেনে ওই পুলিশকর্মীর সঙ্গে সমস্ত কথোপকথন শুনতে পাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী। কথোপকথন রেকর্ড করার পাশাপাশি তিনি সেটা শোনান জিআরপি-র কর্মীদের। এর পরেই অভিযুক্তকে পাকড়াও করতে উদ্যোগী হয় পুলিশ।

রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ সোনারপুর স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই মহিলা কামরায় উঠে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই পুলিশকর্মীকে পাকড়াও করতে গেলে তিনি চলন্ত ট্রেনে উঠে পালানোর চেষ্টা করেন। তাঁর সঙ্গী পুলিশকর্মী তত ক্ষণে ট্রেন থেকে নেমে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। তরুণীর স্বামীর অভিযোগ, ‘‘চলন্ত ট্রেনে অভিযুক্ত পালানোর চেষ্টা করলে কোনও পুলিশকর্মী তাকে ধরার চেষ্টা করেননি। আমি ট্রেনে উঠে যাই। পরের স্টেশন নরেন্দ্রপুরে তাকে নামিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিই।” যদিও শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার অশেষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সোনারপুর স্টেশনেই অভিযুক্তকে পাকড়াও করা হয়।” তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্ত সমরেশ মণ্ডল আরপিএফের কনস্টেবল। বারুইপুরে কর্মরত। তাঁকে গ্রেফতার করে এ দিন শিয়ালদহ আদালতে পেশ করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গী পালিয়ে গিয়েছেন। তাঁরও খোঁজ চলছে।”

এ দিন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ওই তরুণীর গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪, ৩৫৪-এ ধারায় মামলা দায়ের করেছে। গোটা ঘটনার জেরে এখনও আতঙ্কে ওই তরুণী। তবে, তাঁর সাহস এবং উপস্থিত বুদ্ধির প্রশংসা করছেন পুলিশকর্মীরা। আরপিএফ সূত্রে খবর, ধৃত কর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর সঙ্গীকেও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE