Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নিশানায় রাজ্যপাল, ধর্না-বিক্ষোভে তৃণমূল

বিধানসভায় পেশ করার জন্য তফসিলি জাতি ও জনজাতি কমিশন বিলে রাজ্যপাল প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দেননি, এই কথা জানিয়ে চলতি অধিবেশন দু’দিনের জন্য মুলতুবি রেখেছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।

ধর্না: রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তৃণমূলের তফসিলি জাতি ও জনজাতির বিধায়কদের। মঙ্গলবার বিধানসভায়। নিজস্ব চিত্র

ধর্না: রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তৃণমূলের তফসিলি জাতি ও জনজাতির বিধায়কদের। মঙ্গলবার বিধানসভায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৯
Share: Save:

তফসিলি জাতি ও জনজাতির জন্য কমিশন গড়ার বিল ঘিরে শাসক ও রাজভবনের সংঘাত আরও চরমে উঠল। রাজ্যপাল বিল আটকে রেখেছেন, এই অভিযোগে নজিরবিহীন ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে বিধানসভা চত্বরে ধর্না-বিক্ষোভে নামলেন শাসক দলের বিধায়কেরা। লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশনেও রাজ্যপালের ভূমিকার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার চেষ্টা করল তৃণমূল। রাজ্যপাল অবশ্য ফের অভিযোগ করেছেন, বিলে বিলম্বের জন্য রাজ্য সরকারের গড়িমসিই দায়ী।

বিধানসভায় পেশ করার জন্য তফসিলি জাতি ও জনজাতি কমিশন বিলে রাজ্যপাল প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দেননি, এই কথা জানিয়ে চলতি অধিবেশন দু’দিনের জন্য মুলতুবি রেখেছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েক দিন বিধানসভা চলেছে পুরনো স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট বা পঞ্চায়েত নিয়ে মন্ত্রীর বিবৃতি ঘিরে আলোচনা করে।

রাজ্যপালের জন্য বিল আটকে আছে, এই কথা যে হেতু স্পিকারের আসন থেকে বিধানসভাকে জানানো হয়েছিল, তাই রাজ্যপালের ব্যাখ্যাও বিধায়কদের জানিয়ে দেওয়া হোক— এ কথা জানিয়ে মঙ্গলবার স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু সেই চিঠির কথা বিধানসভায় জানানোর আগেই অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। পরিষদীয় দফতরের বক্তব্য, অধিবেশন শেষ করে দেওয়ার পরে রাজ্যপালের চিঠি এসে পৌঁছেছে। পরে রাজ্যপালের মন্তব্য, ‘‘ওঁরা রাজনীতি করতে পারেন। কিন্তু আমি রাজনৈতিক নেতা নই। কাউকে আক্রমণ করা নয়, সংবিধানকে রক্ষা করা আমার কাজ।’’

আরও পড়ুন: কলকাতা ও অন্যত্র পুর নির্বাচন হতে পারে পৃথক দিনে

চিঠি-পর্বের আগে এ দিন সকালেই বিধানসভায় দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব এনে মুখ্য সরকারি সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যপাল বিলে সই না করায় বিধানসভার অধিকার খর্ব হচ্ছে। এই বিষয়ে স্পিকারের হস্তক্ষেপের আবেদন করছি।’’ স্পিকার সভায় জানান, বিল নিয়ে বিধানসভার তরফে কোনও ত্রুটি হয়নি। ততক্ষণে বাইরে অম্বেডকর মূর্তির নীচে তৃণমূলের তফসিলি জাতি ও জনজাতি বিধায়কেরা ধর্নায় বসে পড়েছেন।

বাংলাদেশের ডেপুটি হাই-কমিশনের প্রতিনিধিরা এ দিন রাজভবনে গিয়েছিলেন পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে। পরে সেখানে উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের সামনে বিল-বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেন রাজ্যপাল। তাঁর বক্তব্য, তফসিলি জাতি ও জনজাতির সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় আইন ও কমিশন থাকা সত্ত্বেও রাজ্যে আলাদা কমিশন কেন গড়তে হচ্ছে, রাজ্য সরকারের কাছে তিনি তা জানতে চেয়েছিলেন। বিলে উল্লেখ করা আছে, এই সংক্রান্ত ‘অঙ্গীকার পূরণে’র লক্ষ্যেই কমিশন। কী সেই অঙ্গীকার, তখন তা জানতে চান রাজ্যপাল। কিন্তু গত ৫ ডিসেম্বর ওই আলোচনার পরে রাজ্য সরকারের তরফে আর যোগাযোগ করা হয়নি বলে রাজ্যপালের অভিযোগ। ধনখড়ের কথায়, ‘‘প্রশ্ন করার, জানতে চাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রাজ্যপালের আছে। সরকার গরুর গাড়ির গতিতে চললে আমার কী করার আছে!’’

আরও পড়ুন: বিধায়ক কেমন? জনতার কাছে জানতে চান পিকে

পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল বিলের ব্যাখ্যা চাইতেই পারেন। কিন্তু উনি যে যুক্তি দিচ্ছেন, তা খাটে না। দেশে তো মহিলা কমিশন, মানবাধিকার কমিশন রয়েছে। তা সত্ত্বেও রাজ্যে তো এই কমিশনগুলি রয়েছে।’’ সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজস্থান, পঞ্জাব, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, বিহার-সহ ১২টি রাজ্যে তফসিলি জাতি বা জনজাতি কমিশনও রয়েছে। আর এক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল সংবিধান বহির্ভূত কাজ করছেন। তিনি বিধানসভায় আলোচনার পরে প্রশ্ন করতে পারতেন। এ ভাবে চললে তো বিধানসভার প্রয়োজন থাকবে না!’’

কিন্তু রাজ্যপালের চিঠি কেন বিধানসভায় পেশ হল না? স্পিকারের মতে, ‘‘চিঠির বিষয় সম্পর্কে যা জেনেছি, তাতে স্পিকারের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। জবাব দেওয়ার হলে দেবে সংশ্লিষ্ট দফতর।’’ আর পার্থবাবু বলেন, ‘‘চিঠিটি যখন স্পিকারের কাছে এসে পৌঁছেছে, ততক্ষণে অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য মুলতুবি হয়ে দিয়েছে।’’

রাজ্যসভায় নোটিস দিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার জন্য রাজ্যপালের ভূমিকা উত্থাপনের চেষ্টা করেছিল তৃণমূল। অনুমতি না মেলায় ওয়েলে নেমে আসেন দলের সাংসদেরা। রাজ্যসভার তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন পরে বলেন, ‘‘রাজভবন এখন আরএসএসের বাংলা শাখা দফতর!’’ লোকসভায় অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান প্রতিনিধি সংক্রান্ত বিলে বলতে গিয়ে তৃণমূলের সৌগত রায় রাজ্যপালের বিল আটকে রাখার প্রসঙ্গ তোলেন। দলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও অভিযোগ, নোটিস দিয়ে রাখা সত্ত্বেও তাঁদের এই বিষয়ে আলোচনা করতে দেওয়া হচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE