দেশের অন্তত ১২টি রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দেয় না! সুপ্রিম কোর্টে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়ে এমনই জানাল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কোন কোন রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয় না, তার তালিকাও দিয়েছে তারা। উল্লেখ্য, রাজ্যের দেওয়া তালিকায় যে রাজ্যগুলির উল্লেখ রয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশেই সরকারে বিজেপি রয়েছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছে শীর্ষ আদালত। তবে কোনও পক্ষের কোনও বক্তব্য থাকলে, তা লিখিত আকারে জমা দিতে বলেছিল আদালত। সোমবার রাজ্য নিজেদের বক্তব্য জমা দিল। তাতে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে তারা। দাবি করা হয়েছে, এ রাজ্যে সরকারি কর্মচারীদের ডিএ থেকে বঞ্চিত করা হয় না। তবে রাজ্যের সামর্থ্য অনুযায়ী ডিএ দেওয়া হয়।
রাজ্যের বক্তব্য, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩০৯ অনুযায়ী প্রত্যেক রাজ্যের অধিকার রয়েছে নিজেদের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করার। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় সরকার যে ডিএ নীতি নিয়েছে, তা অনুসরণ করতে বাধ্য নয় কোনও রাজ্য। সুপ্রিম কোর্ট আগেও তার পর্যবেক্ষণে সে কথা উল্লেখ করেছে।
সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছে, ডিএ দেওয়া সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। রাজ্যের আর্থিক সামর্থ্য, অগ্রাধিকার এবং কর্মচারীদের জন্য আগে থেকে দেওয়া অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে ডিএ নির্ধারিত হয়। ফলে তা কেন্দ্রের হারের সঙ্গে হুবহু মিলবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। সরকারি কর্মচারীদের জন্য ডিএ কোনও মৌলিক অধিকার নয়। শুধু রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি বা সার্ভিস রুলস যতটুকু অধিকার দেয়, ততটাই দাবি করা যায়।
এ ছাড়াও, ভারতের কোন রাজ্যে কত হারে ডিএ দেওয়া হয়, কারা কারা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয় না, সেই সবও শীর্ষ আদালতে জানিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান, শুনানিতে আদালত জানতে চেয়েছিল কোন কোন রাজ্যে ভোক্তা মূল্য সূচক বা সিপিআই (কনজ়্যুমার প্রাইস ইনডেক্স) মেনে ডিএ দেওয়া হয় না। লিখিত বক্তব্যে সেটিরও উল্লেখ রয়েছে। দাবি, কেন্দ্রের ডিএ হার অনুসরণ করে না দেশের অন্তত ১২টি রাজ্য। উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়, কেরল, ছত্তীসগঢ়, হিমাচল প্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, তেলঙ্গানা এবং ত্রিপুরার নাম। ঘটনাচক্রে, এই তালিকায় থাকা রাজ্যগুলির মধ্যে কেরল এবং কর্নাটক ছাড়়া অন্য রাজ্যগুলি হয় বিজেপিশাসিত, নয়তো অন্য দলের সঙ্গে জোট সরকারে রয়েছে বিজেপি।
সুপ্রিম কোর্টে আরও জানানো হয়েছে, যে সব রাজ্যের ‘রিভিশন অফ পে অ্যান্ড অ্যালাওয়েন্স’ (আরওপিএ) নিয়মে ভোক্তা মূল্য সূচক বা সিপিআই-এর (কনজ়্যুমার প্রাইস ইনডেক্স) উল্লেখ রয়েছে, তাদের মধ্যেও ডিএ হারে বৈষম্য রয়েছে। এমন চারটি রাজ্য— ছত্তীসগঢ়, মেঘালয়, হিমাচল প্রদেশ এবং সিকিমের কথা উল্লেখ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জমা দেওয়া লিখিত বক্তব্যে।
আরও পড়ুন:
কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের হারে রাজ্যকেও ডিএ দিতে হবে, এই দাবি সামনে রেখে শুরু হয় মামলা। স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (এসএটি), কলকাতা হাই কোর্ট হয়ে মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশের কথা উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছে, রাজ্য সরকারকে এআইসিপিআইয়ের ভিত্তিতে নিজস্ব নীতি তৈরি করতে বলা হয়েছিল। হাই কোর্ট বা ট্রাইব্যুনাল স্বীকার করেছে, রাজ্যের কর্মচারীরা কেন্দ্রের হারে ডিএ পাওয়ার অধিকারী নন। তবুও আদালতের নির্দেশ কার্যত কেন্দ্রের হার চাপিয়ে দেওয়ার সমান, যা রাজ্যের সংবিধান-স্বীকৃত অধিকার লঙ্ঘন করে।
শুনানি চলাকালীন রাজ্যের যুক্তি ছিল, মহার্ঘ ভাতা বাধ্যতামূলক নয়। ডিএ কর্মীদের মৌলিক অধিকার নয়। তা ছাড়া কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক পরিকাঠামো ভিন্ন। কেন্দ্র যে হারে ডিএ দেয়, তার সঙ্গে রাজ্যের তুলনা চলে না। লিখিত বক্তব্যেও সে কথাই উল্লেখ করেছে সরকার। অন্য দিকে, মামলাকারী পক্ষের যুক্তি ছিল, নির্দিষ্ট সময়মতো ডিএ দেওয়া সরকারের নীতির মধ্যে পড়ে। খেয়ালখুশিমতো ডিএ দেওয়া যায় না। তাদের দাবি, বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ডিএ দিতে হবে। প্রয়োজনে বকেয়া ডিএ কিস্তিতে দেওয়া হোক।
সোমবার রাজ্যের বক্তব্যের জবাবে পাল্টা বক্তব্য জমা দিতে চান মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের একাংশের আইনজীবী করুণা নন্দী। বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি বিপুল মনুভাই পঞ্চোলীর বেঞ্চ জানায়, এর জন্য এক সপ্তাহ সময় আগেই দিয়েছিল আদালত। ওই সময়ের মধ্যে পাল্টা বক্তব্য জমা দিতে পারবেন মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের আইনজীবীরা। আইনজীবীদের একাংশের মতে, মামলাকারীদের বক্তব্য জমা দেওয়ার পর তা দেখে নিয়েই রায় দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট।