জল্পনার অবসান। সোমবার দুপুরে তৃণমূল ভবনে পৌঁছে পুরনো দলে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রত্যাবর্তন হল কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শাসকদলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জোড়াফুলের উত্তরীয় পরিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে স্বাগত জানান শোভন-বৈশাখীকে।
সাংবাদিক বৈঠকে অরূপ জানান, শোভন এবং বৈশাখী চেয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। তিনি সেই সময় দিয়েছেন। তৃণমূল ভবন থেকেই কালীঘাটে অভিষেকের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন শোভন এবং বৈশাখী।
আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মযজ্ঞে শামিল হওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন শোভন এবং বৈশাখী। তার পর দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অনুমোদনক্রমে তাঁদের তৃণমূলে ফেরানো হচ্ছে। শোভন বলেন, ‘‘আমার ধমনী, শিরা সবটাই তৃণমূলের। এটাই আমার ঘর, এটাই আমার সংসার। আমার কাজ হবে দলকে আরও শক্তিশালী করা।’’
অক্টোবরে প্রশাসনে প্রত্যাবর্তন হয়েছিল। নভেম্বর পড়তে না পড়তেই তৃণমূলের কাননে ফিরলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। ২০১৮ সালে কলকাতার মেয়র পদ এবং রাজ্যের মন্ত্রিসভা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন শোভন। তার পর ২০২১ সালের আগে দিল্লি গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপি-তেও। কিন্তু পদ্মশিবিরে বেশি দিন থাকতে পারেননি শোভন। মাঝে বেশ কয়েক বার তৃণমূলে ফেরার জল্পনা তৈরি হলেও তা জমাট বাঁধেনি। অবশেষে তৃণমূলে ফিরলেন তিনি।
গত সেপ্টেম্বরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয়েছিল শোভন-বৈশাখীর। সেই সময় থেকেই শোভনের তৃণমূলে ফেরার জল্পনা নতুন করে জল-বাতাস পেতে শুরু করে। তা আরও গাঢ় হয় গত মাসে। দুর্যোগধ্বস্ত উত্তরবঙ্গে ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখীও। তখনই দার্জিলিঙের রিচমন্ড হিলে মমতার সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল শোভনের। ঘটনাচক্রে, তার পরের দিনই শোভনকে নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদের (এনকেডিএ) চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ করে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। বাকি ছিল দলে ফেরা। সোমবার সেটাও হল।
প্রশাসনে শোভনের প্রত্যাবর্তনের পরেই বেহালায় তাঁর অনুগামীরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছেন। বেহালা পশ্চিম বিধানসভার বিভিন্ন এলাকায় শোভনের ছবি সংবলিত হোর্ডিং ঝুলতে দেখা গিয়েছিল। যা থেকে শাসকদলের অন্দরে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে, বেহালা পশ্চিমে শোভনকে প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল। বেহালা পশ্চিমের বর্তমান বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি। এই নভেম্বরে তাঁর জেলমুক্তির সম্ভাবনা থাকলেও তাঁকে তৃণমূল আর ভোটে টিকিট দেবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই সূত্রেই শোভনকে সেখানে প্রার্থী করা হতে পারে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
শোভন প্রার্থী হবেন কি হবেন-না, প্রশাসনে আরও বড় দায়িত্ব পাবেন কি পাবেন-না, তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে সোমবার তৃণমূলের আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে ফিরলেন শোভন। সাত বছর পর!