(বাঁ দিক থেকে) অখিল গিরি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয় এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য মন্ত্রিসভায় রদবদল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কয়েকটি দফতরে বদল করা হলেও সম্প্রতি মন্ত্রিপদ থেকে ইস্তফা দেওয়া অখিল গিরির কারা দফতরের দায়িত্ব আপাতত কেউকেই দেওয়া হল না। নবান্ন সূত্রের খবর, ওই দফতর আপাতত মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতেই রাখছেন। অন্য দিকে, রেশন দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুর হাতে একসময়ে থাকা শিল্প পুনর্গঠন দফতরের দায়িত্ব পেলেন বাবুল সুপ্রিয়।
কয়েক দিন আগে এক মহিলা বনাধিকারিকের উদ্দেশে বিতর্কিত মন্তব্য করে দল ও সরকারের রোষের মুখে পড়েছিলেন অখিল। এর পর দলের নির্দেশ মেনেই কারা দফতরের মন্ত্রিপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের বিধায়ক। তখন থেকেই জল্পনা তৈরি হয়, কারা দফতরের দায়িত্ব কে পাবেন, তা নিয়ে। মঙ্গলবারই মন্ত্রিপদে অখিলের ইস্তফা গ্রহণ করে রাজভবন। সেই সঙ্গে অনেক দিন ধরে আটকে থাকা মন্ত্রিসভা রদবদলের ফাইলেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সূত্রের খবর, অখিলের কারা দফতর আপাতত কারও হাতেই দিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক সূত্রে দাবি, কারা দফতর নিয়ে আপাতত কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ার কারণ রদবদলের ফাইল দু’সপ্তাহ আগেই রাজভবনে পাঠানো হয়েছিল। তার পরেই অখিলকে নিয়ে বিতর্ক এবং পর্যায়ক্রমে মন্ত্রিপদ থেকে তাঁর ইস্তফা। ফলে সেই সময় রদবদলের প্রস্তাবের তালিকায় কারা দফতর ছিল না।
কিন্তু ওই দফতর মুখ্যমন্ত্রী আপাতত নিজের হাতে রাখায় প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি পরবর্তী কালে কারা দফতর আবার অখিলকে ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে? প্রশাসনিক শিবিরের একাংশের মতে, তা অসম্ভব কিছু নয়। অখিলের মন্তব্যে দল ও সরকার অস্বস্তিতে পড়ায় ক্ষত নিরাময় তাঁকে ইস্তফার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অখিল যে দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, তা কেউই অস্বীকার করেন না। আর সেই কারণে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে করা মন্তব্যের পরেও তাঁকে মন্ত্রিপদে রেখে দেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা নিজে ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগে দলের তরফে পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে অখিলকে আবার মন্ত্রিসভায়, এমনকি কারা দফতরের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে প্রশাসনের অন্য একটি অংশের মত, যে হেতু রাজ্যের রদবদলের প্রস্তাবে কারা দফতর ছিল না এবং অখিলকাণ্ড সদ্য সদ্যই ঘটেছে, তাই বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সেই কারণে আপাতত ওই দফতর নিজের হাতেই রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে সব দিক বিবেচনা করে অন্য কারও হাতে ওই দফতর দেওয়া হতে পারে।
তবে বাকি দফতরগুলিতে রদবদল হয়েছে। মোটের উপর নির্যাস হল, মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যেই দফতরের অদলবদল হয়েছে। অর্থাৎ, এক জনের দফতর অন্য আর এক জনকে দেওয়া হয়েছে। নতুন কোনও মুখ এ বার মন্ত্রিসভায় আনা হল না। জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর হাতে থাকা বন দফতরের দায়িত্ব সেই সময় ওই দফতরেরই প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে দেওয়া হয়েছিল। আর শিল্প পুনর্গঠন দফতরটি নিজের হাতে রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সঙ্গে ওই দফতর সামলাবেন বাবুল। গত লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন রাজ্যের সেচ দফতরের দায়িত্বে থাকা পার্থ ভৌমিক। এ বার তাঁর দফতর গেল মানস ভুঁইয়ার হাতে। ডানা ছাঁটা হয়েছে গোলাম রব্বানির। তাঁর হাত থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে পরিবেশ দফতর। সেই দফতর গিয়েছে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের হাতে। রব্বানি পেলেন অচিরাচরিত শক্তি দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy