Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Primary Teachers Job Cancellation

আমাদের কী হবে? কাতর হয়ে প্রশ্ন চাকরিহারাদের! জবাবে কী বললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়?

বিচারপতি বলেন, ঝাঁকে ঝাঁকে চাকরি বিক্রি হয়েছে। ওই দালালদের কাছে এত কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে এল? যাঁরা দোষী তাঁদের কাছে গিয়ে বলুন। হাজারে হাজারে চাকরি বিক্রি হয়েছে। আমার কাছে বলে লাভ নেই।

The conversation between jobless primary teachers and Justice Abhijit Gangopadhyay

মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ভিড় করেছিলেন চাকরিহারা প্রাথমিক শিক্ষকেরা। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৩ ১৪:৩৮
Share: Save:

সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে, তবু আশা ছাড়তে রাজি নন চাকরিচ্যুত প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ। রায় পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে মঙ্গলবার তাঁরা এসেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। দীর্ঘ কথোপকথনের পর বিচারপতি তাঁদের জানিয়ে দিলেন, বিষয়টি আর তাঁর হাতে নেই।

মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ভিড় করেছিলেন চাকরিহারা প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা। মূলত প্রাথমিকের যে সমস্ত পার্শ্বশিক্ষক ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে স্থায়ী চাকরি পেয়েছিলেন।তাঁদের সঙ্গেই বিচারপতির সঙ্গে মুখোমুখি কথা হয়। বিচারপতির কাছে এঁরা দাবি করেন, তাঁদর জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করা ছিল। এখন তাঁদের চাকরি বাতিল করা হচ্ছে।

এক শিক্ষক: ধর্মাবতার আপনি আমাদের দেখুন। আমাদের পরিবার রয়েছে। এখন চাকরি বাতিল হলে কোথায় যাব?

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়: এই রায়ের উপর আমার এখন আর কিছু করার নেই। রায় ঘোষণা করা হয়ে গেলে কিছু না করার থাকে না। শুধুমাত্র সংশোধন করা যেতে পারে।

শিক্ষক: কিন্তু আমাদের কী হবে?

বিচারপতি: আমি দুঃখিত আপনাদের অসুবিধার জন্য। কিন্তু কিছু করার নেই। এই নিয়োগের ছত্রে ছত্রে দুর্নীতি হয়েছে। কোনও একটা-দুটো কারণ নয়। যিনি মামলা করেছেন, তিনি অপ্রশিক্ষিতদের বিষয়টি উত্থাপন করে মামলা করেছেন। তাই আমার এই রায়। প্রশিক্ষিতদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই এই মামলায়।

শিক্ষক: আগে আমরা পার্শ্বশিক্ষক (প্যারা টিচার) ছিলাম। সেই সময় আলাদা সংরক্ষণ নীতি ছিল।

বিচারপতি: আমার রায় নিয়ে আপত্তি থাকলে উচ্চতর বেঞ্চে আবেদন করুন। রায় ঘোষণা করা মানে এখন বিষয়টি আমার হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।

এক শিক্ষিকা: আপনিই দেখুন আমাদের বিষয়টি। আমরা তো কোনও অন্যায় করিনি। তা হলে আমাদের কী হবে?

বিচারপতি: এ নিয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। আমাকে বাধ্য করবেন না। আমি মন্তব্য করলে রাজনৈতিক বক্তব্য হয়ে যাবে। (সামান্য থেমে) কারণ, একটা বা দুটো নয়। এতটাই বেআইনি ভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল যা অকল্পনীয়। কত দুর্নীতির কথা বলব? প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে।

শিক্ষকেরা চুপ।

বিচারপতি: ঝাঁকে ঝাঁকে চাকরি বিক্রি হয়েছে। ওই দালালদের কাছে এত কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে এল? যাঁরা দোষী, তাঁদের কাছে গিয়ে বলুন। হাজারে হাজারে চাকরি বিক্রি হয়েছে। আমার কাছে বলে লাভ নেই।

এক শিক্ষিকা: আমরাও চাই দোষীদের শাস্তি হোক। কিন্তু আমাদের কী হবে? আমরা তো যোগ্য।

বিচারপতি: আপনারা যোগ্য হলে আবার সুযোগ পাবেন। আমি তো আপনাদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছি না। নতুন করে এই নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হলে সমস্ত যোগ্যরাই সুযোগ পাবেন। আগে এত বেশি দুর্নীতি হয়েছে যে, এখান থেকে আর মুড়ি থেকে মিছরি আলাদা করা যাবে না। আপনারা চাইলে ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারেন। আমার আর এখন কিছু করার নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE