দত্তপুকুর থানা এলাকার ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের অধীন মোচপোল গ্রামে বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরেই লাগোয়া ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় বাজি তৈরির পুরনো কারখানাগুলিতে চিরুনি তল্লাশি চালাল কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ।
দত্তপুকুরের এই ঘটনা উস্কে দিয়েছে ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি নৈহাটির দেবক গ্রামে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের স্মৃতি। সেখানেও একটি অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল পাঁচটি প্রাণ। ওই ঘটনায় প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। তার পরে এই ধরনের বাজি কারখানার রমরমা বন্ধ করতে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই নির্দেশ যে খাতায়কলমেই রয়ে গিয়েছে, তার প্রমাণ মোচপোল। স্বভাবতই রবিবার থেকে তন্নতন্ন করে বাজি কারখানার সন্ধানে অভিযান চালিয়েছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ। গোয়েন্দা-প্রধান শ্রীহরি পাণ্ডে নিজে দিনভর অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরিত্যক্ত কারখানাগুলিতে বারুদ বা বাজি লুকিয়ে রাখা হয়েছে কি না, চলেছে সেই খোঁজও। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েক জনকে আটক করা হলেও পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সব দেখেশুনে দেবকের মধ্যপাড়ার অনিল হালদার, শুক্লা সরকারেরা বলছেন, ‘‘আগে ঘরে ঘরে ব্যবসা হত রংমশাল ও ফুলঝুরির। পুজো, বিয়ে বা যে কোনও উৎসব— প্রচুর বরাত আসত। ২০২০ সালের ঘটনার পরে এত পুলিশি চাপ ছিল যে, আর এখানে ব্যবসা চলে না। দত্তপুকুরের ঘটনার পরে এখন আবার পুলিশ নতুন করে আসছে।’’
গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিশেষ তদন্তকারী দল শিবদাসপুর থানা এলাকার পুরনো বাজি কারখানাগুলি ছাড়াও মোহনপুর থানা এলাকার নীলগঞ্জ ঘেঁষা মাতারাঙ্গির বাজি কারখানাগুলিতেও অভিযান চালায়। প্রসঙ্গত, নৈহাটি ও কাঁচরাপাড়া এলাকায় এক সময়ে প্রচুর পরিমাণে বাজি তৈরি হত। সে সব জায়গাতেও স্থানীয় সহকারী নগরপালদের নেতৃত্বে তল্লাশি অভিযান চলে। মোচপোলের মতোই ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে এক সময়ে অসংখ্য বাজির কারখানা গজিয়ে উঠেছিল। ২০১২ সালে কমিশনারেট হওয়ার পরে টানা অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১২টি কারখানা বন্ধ করে দেয়। তার পরেও ১৫ থেকে ১৬টি কারখানা চলছিল প্রশাসনের ছাড়পত্র নিয়ে। পাশাপাশি, বহু বেআইনি বাজি কারখানা লুকিয়ে-চুরিয়ে মশলা মজুত করছে, এই খবর ছিল গোয়েন্দা বিভাগের কাছে।
নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘দেবকের মধ্যপাড়ায় কার্যত কুটির শিল্পের মতো গজিয়ে ওঠা বাজি কারখানাগুলি ২০২০ সালের বিস্ফোরণের পরপরই বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ওই কারিগরেরাই দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় কাজ করছিলেন।’’
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা-প্রধান শ্রীহরি পাণ্ডে বলেন, ‘‘গত তিন বছরে ব্যারাকপুরে বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করতে লাগাতার তল্লাশি অভিযান চলেছে। এতে রাশ সামান্যতম আলগা হলেই যে বিপদ, তা টের পাওয়া গিয়েছে আগেই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)