আগামী কাল, সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে রাস্তায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এক তিল কমারও সম্ভাবনা নেই। ছবি: পিটিআই।
এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন? সরকার যদি রাতারাতি টিকিট ছাপিয়ে বেশি ভাড়ায় বাস নামাতে পারে, তা হলে বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্ন তুলে শনিবার বেসরকারি বাস মালিকেরা ফের জানিয়ে দিলেন, তাঁদের অবস্থান বদলাচ্ছে না। পুরনো ভাড়ায় তাঁদের বাস রাস্তায় নামবে না। শুধু তাই নয়, সরকারকে আরও খানিকটা বিপাকে ফেলে পুলকার মালিকেরাও এ দিন জানালেন, আপাতত তাঁরাও রুটে বাস নামাচ্ছেন না। অথচ বাস বাড়াতে পুলকার মালিকদের উপর কিছুটা ভরসা করেছিল সরকার। সব মিলিয়ে এখনও যা পরিস্থিতি, তাতে আগামী কাল, সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে রাস্তায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এক তিল কমারও সম্ভাবনা নেই।
সরকারি তরফে অনুরোধ-আবেদন, পরিবহণমন্ত্রীর পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রসচিবকে ‘সক্রিয়’ করা, কোনও কিছুতেই বাস সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান মিলছে না। উল্টে নানা ভাবে বাস মালিকেরা সরকারকেই চাপে রাখায় এ বার প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও বিভিন্ন স্তরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ভুক্তভোগী যাত্রীদের তরফে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যে প্রশাসন, রাজ্যব্যাপী জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সময়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে, সমস্যার সমাধানের সম্ভাব্য পথ বাতলে দ্রুত তা মিটিয়ে নিতে পেরেছিল, বাস মালিকদের ক্ষেত্রে তাদের কার্যত এমন ‘নিষ্ক্রিয়’ ভূমিকা কেন? কেন অতিমারির সময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রয়োগ করে রাস্তায় বাস নামাতে বাধ্য করা হচ্ছে না? কেন অনড় বাস মালিকদের পারমিট বাতিল করা হচ্ছে না? কেনই বা বেসরকারি বাস অধিগ্রহণ করা হচ্ছে না?
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিষেবা দিতে বেশ কিছু বেসরকারি বাস অধিগ্রহণ করে চালানো হচ্ছে। নির্বাচনের সময়ও একই কায়দায় বাস অধিগ্রহণ করে সরকারি কাজে লাগানো হয়। কিন্ত বিপুল সংখ্যায় বাস অধিগ্রহণ করে সারা রাজ্যে চালানোর মতো পরিকাঠামো সরকারের নেই।’’
আরও পড়ুন: মহুয়াকে খোঁচা দিয়ে তৃণমূলের নিশানায় ‘ললিপপ’ ধনখড়
পারমিট বাতিল না করার ক্ষেত্রে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বাস মালিকেরা এ ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা একেবারে বাস নামাচ্ছেন না তা নয়। সংখ্যায় কম নামাচ্ছেন এবং এক-এক দিন এক-এক রুটে চালাচ্ছেন। ফলে কোনও রুটে একেবারে বাস বন্ধ রাখার অভিযোগ তোলা যাচ্ছে না। পারমিট বাতিলের মতো চূড়ান্ত ব্যবস্থাও সেই কারণেই আটকে যাচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: পুরীর রথে কি হাতির টান? চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে
যাত্রীদের প্রশ্ন, তা বলে কি বাসমালিকদের ‘কৌশলের’ কাছে এ ভাবেই হার মানবে সরকার? সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর কোনও ব্যবস্থাই করতে পারবে না? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজেরও জবাব দেননি।
তবে সাধারণ মানুষকে এ ভাবে নিত্য ভোগান্তির মুখে দাঁড় করিয়েও বাস মালিকেরা যে মোটেই সরকারি তরফে কোনও পদক্ষেপকে আমল দিচ্ছেন না, তা তাঁদের কথাতেই
স্পষ্ট। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকার চাইলে অধিগ্রহণ করে চালাক। লকডাউনের পরে বাসে যাত্রী নেই। ক্ষতি স্বীকার করে বাস চালানোর অবস্থায় নেই আমরা।’’ ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনিবাস অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ঘোয বলেন, ‘‘লকডাউনে বাসের চাকা এবং যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়েছে। বাস সচল করতেই বাড়তি কয়েক হাজার টাকা লাগছে। তার উপরে রাস্তায় যাত্রী না মেলায় জ্বালানির খরচও উঠছে না।’’
সোমবার থেকে বাড়তি ভাড়ায় যে ৪০০ বাস রাস্তায় নামানোর কথা বলা হয়েছিল, সেগুলির মধ্যে ৩০০ বাসের জন্য পুলকার সংগঠনের দ্বারস্থ হয়েছিল সরকার। কিন্তু ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কন্ট্র্যাক্ট ক্যারেজ ওনার্স অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রী গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘আমরা পুরসভাকে কয়েকটি বাস দিয়েছি। অফিস ও স্কুলকে আমরা বাস দিই। কিন্ত আমাদের কর্মীদের রাস্তায় ভাড়া আদায়ের অভিজ্ঞতা নেই। ফলে সরকারি ব্যবস্থায় বাস চালাতে রাজি হচ্ছেন না সংগঠনের সদস্যরা।’’
অর্থাৎ, ঠায় অপেক্ষায় থাকা এবং ভিড় বাসে ঘেঁষাঘেঁষি করে যাওয়ার বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও ব্যবস্থা এখনও করে উঠতে পারল না পরিবহণ দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy