স্কুলশিক্ষকদের আচরণবিধি নিয়ে বিতর্ক চলছে। তার মধ্যেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের জন্য আচরণবিধির খসড়া আনছে রাজ্য সরকার। তাতে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার মতো সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষা শিবিরের।
খসড়া প্রস্তাবটি উচ্চশিক্ষা দফতর তৈরি করেছে, জানাচ্ছে বিকাশ ভবন। ২৮ পাতার ওই খসড়ায় আদালতে যাওয়ার রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে, সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা বন্ধ করে শিক্ষকদের চূড়ান্ত অবমাননার বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিজ অ্যান্ড কলেজেস (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড রেগুলেশন) রুলস, ২০১৭’-র খসড়ায় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের পুলিশি রেকর্ড যাচাইয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। আগে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, দুই ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণ পর্ব ছিল এক বছরের। এ বার সেটা কলেজে দুই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর করা হচ্ছে। পুলিশি রেকর্ড যাচাই করা হবে তখনই। এত দিন শিক্ষকদের কোনও পুলিশি রেকর্ড যাচাই করা হত না। শাসকের হাতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতেই এ বার প্রশিক্ষণ পর্বে ওই রেকর্ড যাচাইয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষকেরা।
খসড়া বিধি
• কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর প্রশিক্ষণ পর্বের সময় বেড়ে যথাক্রমে ২ এবং ৩ বছর
• ওই সময়ে পুলিশি রেকর্ড যাচাই
• কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আবেদন শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের গঠিত ট্রাইব্যুনাল-এ
• তবে নেওয়া যাবে না আইনজীবী, ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না আদালতে
• কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা নয়। কোনও লেখা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের বিরোধী মনে হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
• শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর কোনও আচরণ সরকারবিরোধী মনে হলেই ব্যবস্থা
• কর্তৃপক্ষ সরকারকে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের সম্পর্কে গোপন রিপোর্ট পাঠাবে। তার উপর নির্ভর করবে পদোন্নতি ও বদলি
• দিতে হবে সম্পত্তির হিসেব। তা পদোন্নতি ও বদলির মাপকাঠি হতে পারে
খসড়া আচরণবিধি বলছে, পরিচালন সমিতি কোনও শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর কাজে অসন্তুষ্ট হলে তাঁর চাকরিও চলে যেতে পারে। রাজ্য সরকার একটি ট্রাইব্যুনাল গড়বে। কর্তৃপক্ষের কোনও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সেখানে আপিল করতে পারবেন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। তবে তাঁরা আইনজীবী রাখতে পারবেন না, আদালতেও যেতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে একা লড়াইয়ের প্রস্তুতি মনিকার
কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ সংবাদমাধ্যমে যোগাযোগ করলে শাস্তি হতে পারে বলে জানাচ্ছে খসড়া বিধি। যদি মনে হয়, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কোনও বিষয় সরকার-বিরোধী, তখন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে পারবে রাজ্য। সরকার যদি মনে করে কোনও শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীর আচরণ তাদের পক্ষে ক্ষতিকর, সেটাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করা হবে। পদোন্নতি, বদলি নির্ভর করবে কর্তৃপক্ষের গোপন রিপোর্টের উপরে।
এই সব কিছুর পিছনেই সরকারের অভিসন্ধি দেখছেন শিক্ষকদের বড় অংশ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা-র সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘ওই খসড়ায় উচ্চশিক্ষার উৎকর্ষের দিশা নেই। আছে শুধু শিক্ষকদের প্রতি চরম অসম্মান। এখানে ইউজিসি-র বিধি মেনে বেতন দেওয়া হচ্ছে না। তার উপরে এই অবমাননা। আমরা এর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করব।’’
ওয়েবকুটা-র সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজের বক্তব্য, এই বিধি শিক্ষকদের হাত-পা বেঁধে ভয় দেখানোর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ। যার প্রত্যক্ষ ফল ভুগতে হবে পড়ুয়াদের। শিক্ষক মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হলে ক্ষতি শিক্ষাঙ্গনের। ‘‘সরকার যে-ভাবে শিক্ষকদের অধিকার হরণ করতে চাইছে, তা চরম নিন্দনীয়। তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি,’’ বলেন শ্রুতিনাথবাবু।
শাসকপন্থী শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র সভাপতি কৃষ্ণকলি বসু অবশ্য বলছেন, ‘‘অনেক সময়ে কেউ কেউ সরকারি আদেশনামার ভুল ব্যাখ্যা করে।’’ এই বিষযে বারবার ফোন, এসএমএস করেও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাড়া মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy