Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
অভিযুক্ত তৃণমূল

মহিলাকে গাছে বেঁধে নিগ্রহ

বীরভূমের সাত্তোরের পরে এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৈপীঠ। সপ্তাহ না-ঘুরতেই ফের এক মহিলাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ। তবে বীরভূমের ক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল পুলিশ ও শাসক দলের যুগলবন্দির দিকে। মৈপীঠে অভিযোগ শুধুই শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মহিলার উপরে নির্যাতনের প্রাথমিক কারণ গ্রাম্য বিবাদ। যাতে শেষ পর্যন্ত লেগে গিয়েছে রাজনৈতিক রং-ও।

হাসপাতালে নির্যাতিতার পাশে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।  —নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে নির্যাতিতার পাশে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মৈপীঠ শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০০
Share: Save:

বীরভূমের সাত্তোরের পরে এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৈপীঠ। সপ্তাহ না-ঘুরতেই ফের এক মহিলাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ। তবে বীরভূমের ক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল পুলিশ ও শাসক দলের যুগলবন্দির দিকে। মৈপীঠে অভিযোগ শুধুই শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মহিলার উপরে নির্যাতনের প্রাথমিক কারণ গ্রাম্য বিবাদ। যাতে শেষ পর্যন্ত লেগে গিয়েছে রাজনৈতিক রং-ও।

রবিবারের ঘটনায় জখম হন বছর ছেচল্লিশের এক বিধবা। মৈপীঠের দক্ষিণ বৈকণ্ঠপুর গ্রামে এ দিন সকালে প্রকাশ্যেই তাঁকে বিবস্ত্র করে গাছে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী তৃণমূল বুথ কর্মীর পরিবারের বিরুদ্ধে। ওই কর্মীর পুকুরে নির্যাতিতা মহিলার হাঁস চরা নিয়ে দুই পরিবারের বিবাদ ছিলই। তবে ওই মহিলার ছেলে এসইউসি সমর্থক। মহিলা নিজে গ্রামে প্রতিবাদী চরিত্র বলে পরিচিত। সেই কারণেই তাঁকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের। আহত মহিলা জামতলা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি। পাঁচ জন অভিযুক্তের দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকিরা পলাতক।

অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন বিকেলে জামতলা মোড়ে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা। কান্তিবাবুর দাবি, মৈপীঠ কোস্টাল থানার পুলিশ গোড়ায় অভিযোগ নিতে চায়নি। পরে চাপাচাপিতে অভিযোগ নেয়। অন্য দিকে, দলীয় কর্মীই যে ওই মহিলাকে মারধর করেছে তা স্বীকার করে নিয়ে কুলতলির তৃণমূলের ব্লক সভাপতি গোপাল মাঝির দাবি, “দুই পরিবারের মধ্যে সামান্য মারপিটের ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করছে সিপিএম।”

কান্তিবাবু এ দিন ওই মহিলাকে দেখতে হাসপাতালে যান। পরে তিনি বলেন, “ওই মহিলা জানিয়েছেন, তাঁর নিজের শাড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে তাঁকে বেঁধে তাঁর শ্লীলতাহানি এবং মারধর করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিবাদের কথা পরে। কিন্তু মহিলাদের উপরে এমন নৃশংস অত্যাচারের প্রতিবাদ হওয়া উচিত দল-মত নির্বিশেষেই।” ঘটনার পরে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে এসডিপিও-র সঙ্গে কথাও বলেছেন কান্তিবাবু। ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে এসইউসি-ও।

স্থানীয় সূত্রের খবর, মহিলাকে বর্বরোচিত অত্যাচারের শিকার হতে দেখে গ্রামের অন্য মহিলারাই বাধা দিলে অভিযুক্তরা পালায়। জামতলা গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক মিন্টু পাল জানান, ওই মহিলার বুকে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গাছের ডাল দিয়ে তাঁকে মারা হয়েছে। পেটে ব্যথা হচ্ছে বলে জানান মহিলা। তাঁর স্যালাইন চলছে। দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছন বলে এক্স রে বা অন্যান্য পরীক্ষা এ দিন করানো যায়নি। আজ, সোমবার সেই পরীক্ষাগুলি হবে।

তখন চলছে মারধর।-নিজস্ব চিত্র

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই গ্রামের তৃণমূল বুথ কর্মী সঞ্জীব মাইতির পুকুরে ওই মহিলার হাঁস চরতে দেখে দু’পক্ষের বচসা শুরু হয়। বচসার পরে মহিলা বাড়ি ফিরে আসেন। তার কিছু পরেই সঞ্জীব ও তাঁর পরিবারের লোকেরা মহিলার বাড়িতে চড়াও হয়। ছেলে বাড়িতে না থাকায় তিনি একাই ছিলেন। তাঁর কাপড় ধরে টেনে-হিঁচড়ে সকলে তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে আনে। তাঁর কাপড় খুলে নিয়েই বাড়ির পাশে একটি কাঁটা গাছে তাঁকে বাঁধা হয়। এর পর এলোপাথাড়ি লাথি চালিয়ে চলে মারধর। বাঁশ দিয়ে পেটানো হয় বলেও অভিযোগ। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বাধা দিতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

প্রতিবেশী ও প্রত্যক্ষদর্শী প্রমীলা মাইতি, বাসন্তী মাইতিরা বলেন, “চোখের সামনে যা নির্মম ভাবে মারধর করছিল ওরা, দেখে হতভম্ব হয়ে যাই। চেঁচামেচিতে বাসিন্দারা জড়ো হয়ে পরিবারটিকে তাড়া করলে ওরা পালায়।” তাঁরা জানান, দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই নানা বিষয় নিয়ে অশান্তি লেগেই থাকত। কিন্তু অন্যায় দেখলে, বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করলে মহিলা চুপ থাকতেন না।

নির্যাতিতার ছেলে বলেন, “বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা পথে মাতলা নদীবাঁধে নৌকো ধোয়া-মোছা করতে গিয়েছিলাম। গ্রামে সরস্বতী পুজোর মাইক বেজে চলায় প্রতিবেশীদের চিৎকার শুনিনি। ফিরে সব ঘটনা শুনে থানায় যাই।” জখম মহিলাকে আনা হয় মৈপীঠ কোস্টাল থানায়। এর পর তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE