Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Pakistan Army

পাকিস্তানে ফের সেনা অভ্যুত্থানের ছক? ৩ জেনারেল-সহ সেনার ৬০ অফিসার বরখাস্ত!

নানা মহলে জল্পনা, গোপন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ চালাচালি প্রাথমিক কারণ হলেও মূল কারণ সেনা বিদ্রোহের পরিকল্পনা হতে পারে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ১৩:২৯
Share: Save:

পাকিস্তানে কি ফের সেনাবিদ্রোহের ঘুঁটি সাজানো হচ্ছিল? সম্প্রতি পাক সেনার তিন জেনারেল-সহ ৬০ জন গুরুত্বপূর্ণ অফিসারকে বরখাস্ত করার খবরে এই জল্পনা চরমে উঠেছে। প্রাথমিক ভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, একটি গোপন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ চালাচালি করেছেন তাঁরা। যদিও সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার কারণেই যে তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এমন খবর নিশ্চিত করা যায়নি। অন্য দিকে পাকিস্তানও সরকারি ভাবে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।

ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ? পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে স্মার্ট ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও সেনার ওই পদস্থ অফিসাররা একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রচুর মেসেজ আদানপ্রদান করেছেন বলে অভিযোগ। এর পরেই লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল্লা ডোগার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইজাজ চৌধরি এবং জেনারেল বিলাল আকবর-সহ বিভিন্ন ইউনিট থেকে মোট ৬০ জন সেনা অফিসারকে বরখাস্ত করে পাক সেনা। তার পর থেকেই নানা মহলে জোর জল্পনা যে, স্মার্ট ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার প্রাথমিক কারণ হলেও মূল কারণ সেনা বিদ্রোহের পরিকল্পনা হতে পারে।

তবে সরকারি ভাবে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে এখনও কেউ মুখ খোলেনি। আবার বড় কোনও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও এই খবর নেই। পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যমেও এই ধরনের কোনও খবর প্রকাশিত হয়নি। তবে পাকিস্তানে ইমরান খানের কর্তৃত্ব কমা এবং সরকারে সেনার আধিপত্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত একাধিক খবরের ভিত্তিতে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ‘সিন্ধুদেশ’ নামে একটি টুইটার হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, একটি গোপন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য হওয়ার অভিযোগে ওই তিন জেনারেল-সহ ৬০ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে সেনা বিদ্রোহের পরিকল্পনার জন্যই যে ওই সেনা অফিসারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এমন খবর নিশ্চিত করে বলা হয়নি ওই টুইটার হ্যান্ডলেও।

আরও পড়ুন: চিনা দখলে চার ফিঙ্গার নিয়েই চিন্তা ভারতের

অন্য একটি সম্ভাবনাও অবশ্য উঠে এসেছে। গত বছরের নভেম্বরেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে কামার বাজওয়ার মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়িয়েছেন ইমরান খান। সেই সিদ্ধান্তের জেরে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেনাপ্রধানের পদে থাকবেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে পাক সেনার অভ্যন্তরের একাংশে ক্ষোভ-অসন্তোষ জমেছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে ওই অংশে কামার বাজওয়ার প্রতি আনুগত্যও কমার পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধাচারণের পরিকল্পনাও চলছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ওই গোষ্ঠীকে ছেঁটে ফেলতেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আবার এই সিদ্ধান্তের ফলে পাক সেনার অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানানো হয়েছে। ফলে অন্য কোনও গোষ্ঠীও বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে বলে জল্পনা-গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপি নেতাকে গুলি করে মারল জঙ্গিরা, গ্রেফতার নেতার নিরাপত্তারক্ষীরা

পাকিস্তানের ৭২ বছরের ইতিহাসে সেনা অভ্যুত্থানের নজির রয়েছে একাধিক বার। কখনও তা সফল হয়ে ক্ষমতায় এসেছেন সেনার পদস্থ কর্তা। উদাহরণ পারভেজ মুশারফ। কখনও আবার কড়া হাতে দমন করা হয়েছে। আবার সম্প্রতি একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে যে ইমরান খান সরকারে আধিপত্য বাড়ছে পাক সেনার। দেশে অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি, বেহাল অর্থনীতির মতো একাধিক ইস্যুতে ‘কাপ্তান’ ইমরানের জনপ্রিয়তা ও কর্তৃত্ব দু’টোই কমছে বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর সেই সুযোগে ইমরানের উপর চাপ বাড়ছে সেনাবাহিনীর। সরকারের অভ্যন্তরে সেনা আধিকারিকদের নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কূটনৈতিক শিবিরের একটা বড় অংশ মনে করেন, সরকারে শীর্ষ পদে এ ভাবে সেনা আধিকারিকদের নিয়োগ করা হলে সেনা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই সব প্রেক্ষাপটের দিকে নজর দিলেও সেনা অফিসারদের বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা এবং অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pakistan Army Coup Imran Khan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE