নিউ ইয়র্কের প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটনের টাইমস স্কোয়ারে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হল দুর্গোৎসব। ১-২ অক্টোবর এই আনন্দ-উদ্যাপনে বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। মূলত বাঙালি-ঠাসা হলেও এই ভিড়ে খুঁজে পাওয়া যাবে অসংখ্য অবাঙালি, এমনকি, অভারতীয়কেও।
উদ্বোধনী দিনটি ছিল সংস্কৃতির এক অসাধারণ মিলনক্ষেত্র। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিপুল জনসমাগমে উৎসব পালিত হয়। সন্ধ্যা রঙিন করে তোলে প্রাণবন্ত নৃত্য পরিবেশনা ও মনোমুগ্ধকর সঙ্গীতানুষ্ঠান। পুরো পরিবেশটি এমনই মনোরম ও আন্তরিক ছিল যে দর্শকদের মনে হচ্ছিল, তাঁরা যেন বসে রয়েছেন কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারেরপুজোয়, বা দেখছেন ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আরাধনা।
দ্বিতীয় দিনের মূল আকর্ষণ ছিল মহিষাসুরমর্দিনী ও ইংরেজিতে রামায়ণ ব্যালে পরিবেশনা। সুরের সেই মূর্চ্ছনায় ভেসে যায় গোটা টাইমস স্কোয়্যার প্রাঙ্গণ, আর এক বার প্রমাণ হয়ে যায় যে সঙ্গীতের সত্যিই কোনও ভাষা হয় না। এ দিনের আনন্দানুষ্ঠানে টাইমস স্কোয়্যারে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। নিউ ইয়র্কে অন্তত ২০ লক্ষ বাঙালির বসবাস। ফলে ৫০ হাজারের উপস্থিতি খুব অভাবনীয় নয় বলেই মত আয়োজকদের।
ম্যানহাটনের দুর্গাপ্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।
দু’দিনের এই আনন্দযজ্ঞ শেষ হয় সিঁদুর খেলা, ধুনুচি নাচ ও ‘আসছে বছর আবার হবে’ ধ্বনির মধ্যে দিয়ে। বহু বিশিষ্ট অতিথি ও বিদেশি প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এই উৎসব পরিণত হয়েছিল এক সত্যিকারের আন্তর্জাতিক উদ্যাপনে, যা বিশ্বমঞ্চে বাঙালির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে সার্থক ভাবে তুলে ধরে। দুর্গাপুজো ইউনেস্কো স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পুজোর আয়োজন করার ভাবনা ছিল উদ্যোক্তা, অর্থাৎ ‘টাইমস স্কোয়্যার দুর্গা উৎসব অ্যাসোসিয়েশন’-এর। নিউ ইয়র্ক অঞ্চলে অন্তত ৬০টির দুর্গাপুজো হলেও টাইমস স্কোয়্যারের মতো ঐতিহ্যবাহী এলাকায় আর একটি উৎসবের পরিকল্পনা করেন তাঁরা। এই প্রচেষ্টায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নিউ ইয়র্ক মেয়রের দফতর।
বাঁধভাঙা ভিড় প্রমাণ করে দিল উদ্যোগের সাফল্য। আর বিশ্বের মিলনতীর্থে বাংলা সংস্কৃতি ও পরম্পরার এক উজ্জ্বল নিশানও রেখে গেল এই প্রয়াস।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)