Advertisement
১৯ মে ২০২৪

প্রতিবাদী প্রথম পাতা, প্রশ্ন বাক্‌স্বাধীনতা কই

সরকারি গোপনীয়তা ও সংবাদমাধ্যমের বাক্‌স্বাধীনতা খর্ব করার বিরুদ্ধে আজ এ ভাবেই জোটবদ্ধ প্রতিবাদ জানিয়েছে অস্ট্রেলীয় দৈনিকগুলি। ‘তথ্য জানার অধিকার’ নিয়ে এই বিক্ষোভে শামিল হয়েছে টিভি চ্যানেলগুলোও।

প্রতিবাদী সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পাতা। সোমবার। রয়টার্স

প্রতিবাদী সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পাতা। সোমবার। রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
সিডনি শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:২২
Share: Save:

রাস্তার ধারে খবরের কাগজের স্টলে পরপর রাখা বেশ কিছু প্রথম সারির দৈনিক। প্রতিটি কাগজেরই প্রথম পাতা জুড়ে সব কিছু কাটা। উপরে সরকারি সিলমোহরের ছাপ (নকল), তাতে লেখা ‘সিক্রেট, নট ফর রিলিজ়’। আর পাতার তলায় লেখা, ‘‘সরকার যখন সত্যিটা আপনার থেকে সরিয়ে রাখে, তারা কী গোপন করতে চায়?’’

সরকারি গোপনীয়তা ও সংবাদমাধ্যমের বাক্‌স্বাধীনতা খর্ব করার বিরুদ্ধে আজ এ ভাবেই জোটবদ্ধ প্রতিবাদ জানিয়েছে অস্ট্রেলীয় দৈনিকগুলি। ‘তথ্য জানার অধিকার’ নিয়ে এই বিক্ষোভে শামিল হয়েছে টিভি চ্যানেলগুলোও। খবরের মাঝে মাঝে দর্শকদের জন্য পর্দায় ভেসে উঠেছে এই প্রশ্ন— ‘‘হোয়েন দ্য গভর্নমেন্ট হাইডস দ্য ট্রুথ ফ্রম ইউ, হোয়াট আর দে কভারিং আপ?’’

সাম্প্রতিক কালে সরকারি কাজের বিরোধিতা করে কিছু খবর প্রকাশিত হয় দু’টি সংবাদ সংস্থায়। তার পরেই একটি চ্যানেলের দফতরে হানা দেয় পুলিশ। এক সাংবাদিকের বাড়িতেও তল্লাশি চালায় তারা। বিক্ষোভের শুরু এই ঘটনা থেকেই। সংবাদ সংস্থাগুলির দাবি মূলত ছ’টি— ১) পুলিশের তল্লাশি পরোয়ানার বিরোধিতা করার অধিকার ২) হুইসলব্লোয়ারদের নিরাপত্তা ৩) সরকারি গোপনীয়তার উপরে নিয়ন্ত্রণ ৪) তথ্য জানার অধিকার আইনে সংস্কার ৫) মানহানি মামলার সংস্কার ৬) জাতীয় নিরাপত্তা আইন থেকে সাংবাদিকদের অব্যাহতি। শেষোক্ত আইনের জালেই সব চেয়ে বেশি বাধার সম্মুখীন হতে হয় সাংবাদিকদের। বহু ক্ষেত্রে তাঁরা স্রেফ ‘ফেঁসে’ যান বলে অভিযোগ সংবাদমাধ্যমের।

মিডিয়া এনটারটেনমেন্ট অ্যান্ড আর্টস অ্যালায়েন্স ইউনিয়নের প্রধান পল মার্ফির কথায়, ‘‘সরকারের এই গোপন করার প্রবণতাকে সাহায্য করে আইনের মারপ্যাঁচ। এতে অস্ট্রেলিয়ার মানুষের তথ্য জানার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার নামে অবিচার চলছে।’’ তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘সাংবাদিক অ্যানিকা স্মেথার্স্টের বাড়িতে হানা দিল পুলিশ, একটি সংবাদ সংস্থার সদর দফতরে তল্লাশি চালাল, এটা সংবাদমাধ্যমের বাক্‌স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কী! এই দু’টো ঘটনা হিমশৈলের চূড়ামাত্র, আরও কত কী ঘটছে।’’

সাধারণ মানুষের উপরে নজরদারি চালানোর ছক কষছে অস্ট্রেলিয়া— এই মর্মে খবর করেছিলেন অ্যানিকা। অন্য দুই সাংবাদিক ফাঁস করে দিয়েছিলেন, আফগানিস্তানের কী ভাবে যুদ্ধাপরাধ চালিয়েছে অস্ট্রেলীয় বাহিনী। খবরগুলো প্রকাশিত হওয়ার বেশ কিছু দিন পরে গত এপ্রিল মাসে তল্লাশি অভিযানে নামে পুলিশ। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ছাড়াও কোন কোন সরকারি কর্মী সংবাদমাধ্যমকে খবর ফাঁস করেছেন, তা-ও জানার চেষ্টা চালায় পুলিশ। এই সব ‘হুইসলব্লোয়ার’দের নিরাপত্তার জন্যেও আজ সরব হয়েছে সংবাদমাধ্যম। প্রেসের কাছে খবর ফাঁস করে দেওয়ার জন্য কড়া শাস্তি পেতে হয়েছে অনেককে।

সাংবাদিকদের বাড়ি, অফিসে পুলিশি তল্লাশি অভিযানকে আগেও সমর্থন জানান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। বলেছিলেন, দেশের নিরাপত্তার জন্যই এই পদক্ষেপ। আজও তাঁর বক্তব্য, অস্ট্রেলিয়া বরাবরই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কিন্তু সাংবাদিকরা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তিনি বলেন, ‘‘আইন সকলের জন্য সমান। এবং বৃহত্তর স্বাধীনতার নিরাপত্তার জন্যেও তা বজায় থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Australian Newspapers Protest Media Restriction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE