নামটার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে একটা স্বপ্নের জগৎ— ‘নিশীথ সূর্যের দেশ’! কর্মসূত্রে থাকি নরওয়ের বার্গেন শহরে। নরওয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরটি প্রকৃতিপ্রেমিক ভ্রমণপিপাসুদের পক্ষে স্বর্গরাজ্য। সব কিছুই যেন শিল্পীর হাতে আঁকা ছবির মতো সুন্দর! এই রূপকথার রাজ্যেও হঠাৎ এক দিন ঘনিয়ে এল দুঃসময়।
সাত-আট মাস প্রবল শীতের পরে যখন আমরা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম কবে চারপাশের এই রংহীন সাদা বরফের আবরণ সরিয়ে দিয়ে ঝলমলে বসন্ত আসবে, ঠিক তখনই এক অদৃশ্য দৈত্যের মতো নেমে এল ‘কোভিড-১৯’ অতিমারি। কিছু দিন আগে থেকেই আমরা খবর পাচ্ছিলাম যে এই রকম একটি অতিমারি ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ক্রমে এর প্রভাব পড়তে শুরু করল আমাদের জীবনযাপনেও। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবীর নানা দেশের ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষার জন্য আসেন ‘এক্সচেঞ্জ স্টুডেন্ট’ হিসেবে। প্রথম প্রথম শুনছিলাম এই বছর সংক্রমিত দেশের ছাত্রছাত্রীদের আসার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। তখনও কোভিড-১৯ নরওয়েতে তেমন প্রকোপ ফেলতে পারেনি। কিন্তু ক্রমে ক্রমে এই রোগটি যে গ্রাস করতে যাচ্ছে আমাদের শহরকেও তা বুঝতে পারছিলাম কারণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেই রয়েছে হাসপাতাল। আস্তে আস্তে বিধিনিষেধ বাড়তে লাগল। জানা গেল যে খুব জরুরি কারণ ছাড়া অন্য দেশে যাওয়া যাবে না আর যদি কেউ যান তা হলে ফিরে এলে তাঁকে ১৫ দিন কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। চারদিকে পোস্টার লাগানো হল এবং ফোনে বার্তা পাঠিয়ে বার্গেন পুরসভা থেকে জানানো হল কী ভাবে নিজেকে এবং অন্যদের এই সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। ক্রমে ক্রমে নরওয়েতেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল আর তাই আমরা বুঝতেই পারছিলাম যে নিয়ম আরও কঠিন হবে এবং সীমাবদ্ধতাও আরও বাড়বে। এর মধ্যেই মার্চ মাসের মাঝামাঝি একদিন শুরু হল লকডাউন। ইউরোপের সব দেশের মধ্যে নরওয়েতে একদম প্রথম দিকে লকডাউন শুরু হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ‘ডাক্তাররা ধরেই নিয়েছিলেন আমি মরছি’, মুখ খুললেন বরিস জনসন